শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্থিরতা

যথাযথ উদ্যোগ জরুরি
  ২৫ মে ২০২৪, ০০:০০
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্থিরতা

রোহিঙ্গা সংকটের যৌক্তিক সমাধানের ব্যাপারে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কেবল আশারবাণী শোনানো হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি- এমন বিষয় বার বার আলোচনায় এসেছে। এছাড়া পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করা হবে- এ ধরনের আশ্বাস বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে বলা দরকার, বিভিন্ন সময়েই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেমন ঘটছে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, তেমনি অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসী গ্রেপ্তারসহ ঘটছে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, যা আমলে নেওয়া জরুরি।

সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিশেষ অভিযান চালিয়ে পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী আবদুলস্নাহকে গ্রেপ্তার করেছে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। বুধবার ক্যাম্প-২০ এলাকায় এই অভিযান চালানো হয়। তথ্য মতে, পুলিশের কাছে খবর আসে আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী আবদুলস্নাহ ২০নং ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। পরে ১৪ এপিবিএন পুলিশের অধিনায়ক ও অতিরিক্ত ডিআইজির নির্দেশে অভিযান চালানো হয়। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ক্যাম্পের একটি শেড থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে দু'টি বিদেশি পিস্তল ও দুই রাউন্ড গুলি পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে ক্যাম্প-২০/এক্সটেনশন বস্নক-বি/৪, এস/১ সংলগ্ন কাঁটাতারের বাইরে লাল পাহাড়ের ঢালুস্থান এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে দেশীয় তৈরি বড় ওয়ান শুটার গান একটি, মাঝারি সাইজের ওয়ান শুটার গান দু'টি, রাইফেলের গুলি ২০ রাউন্ড, শর্টগানের কার্তুজ একটি, রাইফেলের গুলির খোসা ২০টি, পিস্তলের গুলির খোসা তিনটি উদ্ধার করা হয়। পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল জানিয়েছেন, আটক আব্দুলস্নাহ মিয়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী। রোহিঙ্গা মাঝি ইলিয়াছ হত্যাসহ তার বিরুদ্ধে মোট ৮টি মামলা রয়েছে।

আমরা বলতে চাই, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক। একইসঙ্গে এই পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ উদ্যোগও অব্যাহত রাখতে হবে। যখন অস্ত্র উদ্ধারসহ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘটছে- তখন তা যেমন উদ্বেগের, তেমনিভাবে কতটা আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে সেটাও এড়ানোর সুযোগ নেই। বলা দরকার, শুধু এবারের ঘটনাই নয়, এর আগেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পর থেকে মাদক, অস্ত্র চোরাচালানসহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে এবং এর আগে এই আলোচনাও উঠে এসেছে যে, এতে করে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। ফলে যত দ্রম্নত সম্ভব এবারের ঘটনাসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। উলেস্নখ্য, কক্সবাজার এলাকায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার পর ২০১৭ সাল থেকে কীভাবে কী পরিমাণ মাদকের চোরাচালান বেড়েছে এর আগে এটিও আলোচনায় এসেছিল। যেখানে বলা হয়, মাদকের হাব হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে রোহিঙ্গা এলাকাকে। এছাড়া নানা সময়ে রোহিঙ্গা এলাকায় ঘটছে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ফলে আমরা মনে করি, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে নানা আঙ্গিকে যে বাড়তি চাপ ও নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে- তা এড়ানোর সুযোগ নেই। কেননা মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের ভার বহন করতে গিয়ে এই চাপ নিতে হচ্ছে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এর আগে বিভিন্ন সময়ে এই আলোচনায় এসেছে যে, মিয়ানমারই রোহিঙ্গা ক্রাইসিস তৈরি করেছে, আর তাদের রাজনৈতিক প্রতিশ্রম্নতি ছিল এর সমাধান করা। ফলে মিয়ানমার রাজনৈতিক প্রতিশ্রম্নতি রক্ষা করে রোহিঙ্গা নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবে এমনটি কাম্য। মনে রাখা দরকার, প্রায় ১৭ কোটির অধিক বাংলাদেশি নাগরিকের জনবহুল বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের চাপ আর কতদিন সইতে হবে- এই প্রশ্ন অযৌক্তিক নয়। যা আন্তর্জাতিক মহলকেও ভাবতে হবে। মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার অর্থ এই নয় যে, তাদের আজীবন রাখতে হবে। এটা এখন বাংলাদেশের জন্য বিরাট বোঝা। বাংলাদেশ চায় সুষ্ঠু সুন্দর ব্যবস্থাপনায় নাগরিক মর্যাদায় তাদের পূর্ণ অধিকার দিয়ে ফেরত নেওয়া হোক। আর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বা অস্থিরতা রোধে যথাযথ উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে