সড়ক দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনায় মৃতু্য থেমে নেই। ঘাতক চাকার নিচে একের পর এক মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে। এপ্রিলে দেশে ৭৩৩ দুর্ঘটনায় নিহত ৭৬৩ জন। এর মধ্যে রেলপথে ৪৪টি দুর্ঘটনায় ৪৭ জন নিহত এবং ৩৬ জন আহত; নৌপথে ছয়টি দুর্ঘটনায় আটজন নিহত, ১০ জন আহত ও একজন নিখোঁজসহ ৬৮৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭০৮ জন নিহত এবং ২ হাজার ৪২৬ জন আহত হন। এই সময়ে ৩০৫টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় ২৭৪ জন নিহত ও ৩২৮ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে- ১৫৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭৯ জন নিহত ও ৩০৫ জন আহত। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বরিশাল বিভাগে- ৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৩ জন নিহত ও ৪৮ জন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এপ্রিল মাসে সড়ক দুর্ঘটনার উলেস্নখযোগ্য কারণসমূহ হলো- দেশের সড়ক-মহাসড়কে মোটর সাইকেলের অবাধ চলাচল, জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় হঠাৎ ঈদে যাতায়াতকারী ব্যক্তিগত যানের চালকদের রাতে এসব জাতীয় সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চালানো, জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টার্নিং চিহ্ন না থাকার ফলে নতুন চালকের এসব সড়কে দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছেন, মহাসড়কের নির্মাণ ত্রম্নটি, যানবাহনের ত্রম্নটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা, উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহণ, অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং একজন চালক অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহন চালানো।
এ ছাড়া চালকের বিশ্রামের বিষয়টিও ইদানীং আলোচনায় উঠে এসেছে। ঘুমহীনভাবে গাড়ি চালাতে গেলে দুর্ঘটনা ঘটবেই। এ ছাড়া শিক্ষিত ও সচেতন চালক নিয়োগ দেয়াও জরুরি। যখন প্রতিনিয়ত সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং ঝরে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ- এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সামগ্রিকভাবে সড়ক দুর্ঘটনার যে চিত্র পরিলক্ষিত হয় তা সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। বরং সড়ক কতটা ভীতিপ্রদ হয়ে উঠেছে তা আমলে নিতে হবে। যখন দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে, লাশের মিছিল ভারী হচ্ছে প্রতিকারহীনভাবে।
মনে রাখতে হবে, বড় বড় দুর্ঘটনা থেকে যদি আমরা শিক্ষা নিতে না পারি তবে ভবিষ্যতেও এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে। দুর্ঘটনায় মৃতু্যর হার কমাতে হলে দোষীদের তাৎক্ষণিক শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি জনগণকেও নৌ, রেল ও সড়ক পথে ভ্রমণ ও রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে আরো সচেতন হতে হবে। পরিকল্পিত ও সফল উদ্যোগই কেবল পারে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা রোধ করতে।