যে কোনো ধরনের হত্যাকান্ডসহ অপ্রীতিকর ঘটনা সামগ্রিক উন্নয়ন ও স্বাভাবিক জীবনের পরিপন্থি। যখন নানা কারণেই প্রতিনিয়ত হত্যাকান্ডের ঘটনাসহ বিভিন্ন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে- তখন তা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। প্রসঙ্গত পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দেশে বসে কিলিং মিশনের নিশ্ছিদ্র ছক সাজিয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। কলকাতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনস নামের একটি অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে তাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়। আমরা বলতে চাই, যখন একজন সংসদ সদস্য কলকাতায় গিয়ে খুন হলেন তখন এই ঘটনার ভয়াবহতা অনুধাবন করা জরুরি। একইসঙ্গে হত্যাকান্ডের সামগ্রিক তথ্য পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। কেননা, এই ধরনের ঘটনা কতটা ভীতিপ্রদ এবং আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে তা এড়ানো যাবে না।
লক্ষণীয়, এই হত্যাকান্ডের পেছনে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে নাম এসেছে তারই বন্ধু আখতারুজ্জামান শাহিনের। সোনা চোরাচালান ও হুন্ডি ব্যবসায় বিরোধের জেরে আজিমকে হত্যার পরিকল্পনা করেন শাহিন- এমন তথ্যও সামনে এসেছে। আর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শাহিনের সঙ্গে পাঁচ কোটি টাকার চুক্তি হয় চরমপন্থি নেতা আমানউলস্নাহ আমানের এমনটিও জানা গেছে। তথ্য মতে, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগ আলোচিত এই হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে। এই ঘটনায় এমপি আনোয়ারুলআজিম আনারের মেয়ে বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। কলকাতার পুলিশ লাশের টুকরো বহনকারী এক প্রাইভেটকার চালককে আটক করেছে। আর এ হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া আমানউলস্নাহ আমান, মোস্তাফিজ ও ফয়সালকে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। তবে পালিয়ে গেছেন শাহিন। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, শাহিন বাংলাদেশ থেকে নেপাল, দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন। উলেস্নখ্য, গত ১১ মে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। এরপর তার পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি। ভারতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার দীর্ঘদিনের পরিচিত বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। পরদিন ১৩ মে দুপুরে ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে বের হন এই সংসদ সদস্য। সন্ধ্যায় ফেরার কথা থাকলেও তিনি আর ফিরে আসেননি। পরে ১৮ মে বরাহনগর থানায় একটি নিখোঁজের অভিযোগ করেন গোপাল বিশ্বাস।
আমরা বলতে চাই, হত্যকান্ড সম্পর্কিত যে তথ্য জানা যাচ্ছে তা কতটা ভয়ানক বলার অপেক্ষা রাখে না। জানা যাচ্ছে, আমেরিকান পাসপোর্টধারী শাহিন কলকাতায় বসে হত্যার চূড়ান্ত ছক এঁকে বাংলাদেশে চলে আসেন। পরে আমানসহ ছয়জন মিলে এমপিআজিমকে সঞ্জীবা গার্ডেন নামের একটি আবাসিক এলাকার ফ্ল্যাটে ট্র্যাপে ফেলে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন। পরে মরদেহ কেটে টুকরো টুকরো করে ট্রলিব্যাগে ভরে ফেলা হয় অজ্ঞাত স্থানে। বুধবার সকালে এমপি আজীমের মৃতু্যর খবর নিশ্চিত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এমপি আনার খুনের ঘটনায় বাংলাদেশিরাই জড়িত বলে জানতে পারা গেছে। এটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলেও তিনি জানিয়েছেন। এছাড়া ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারও জানিয়েছেন, এটি একটি নিষ্ঠুর হত্যাকান্ড। এটি পারিবারিক, আর্থিক, নাকি এলাকার কোনো দুর্বৃত্তকে দমন করার জন্য হয়েছে, তা তদন্ত করে দেখার বিষয়টিও জানান।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এই হত্যাকান্ডের ভয়াবহতা এবং তা কতটা আশঙ্কাজনক সেটি আমলে নিতে হবে এবং সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। হত্যাকান্ডের সামগ্রিক তথ্য পর্যবেক্ষণ এবং আটকদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এরকম ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যে ভয়াবহ ও নৃশংসতা প্রকাশ পাচ্ছে তা অনুধাবন করা এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। এমপি আনোয়ারুল আজিম হত্যাকান্ডর পরিপ্রেক্ষিতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।