শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১

সাইবার নিরাপত্তা এবং ব্যবহারকারীদের সচেতনতা

সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ব্যবহারকারীদের সচেতনতা নিয়মিতভাবে মূল্যায়ন করা উচিত।
ফেরদৌস আহমেদ
  ২৪ মে ২০২৪, ০০:০০
সাইবার নিরাপত্তা এবং ব্যবহারকারীদের সচেতনতা

বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর যুগে সাইবার নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা দৈনন্দিন জীবনে অনেক ধরনের ডিজিটাল সেবা এবং পস্ন্যাটফর্ম ব্যবহার করছি- যা আমাদের কাজকে সহজ ও দ্রম্নততর করছে। তবে এর সঙ্গে বেড়েছে সাইবার আক্রমণের ঝুঁকিও। তাই আমাদের সবার উচিত সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

সাইবার নিরাপত্তার গুরুত্ব : ডিজিটাল যুগে আমাদের তথ্য এবং ডেটা অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। সাইবার আক্রমণকারীরা বিভিন্ন উপায়ে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যবসায়িক ডেটা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করার চেষ্টা করে। এই তথ্যগুলো হাতিয়ে নিয়ে তারা আর্থিক ক্ষতি থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত সুরক্ষার ওপর আঘাত করতে পারে। তাই সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সাইবার আক্রমণ প্রতিরোধে সচেতন থাকা আমাদের সবার দায়িত্ব।

পাসওয়ার্ড সুরক্ষা : প্রথমেই আসা যাক পাসওয়ার্ডের বিষয়ে। পাসওয়ার্ড সুরক্ষা সাইবার নিরাপত্তার প্রথম ধাপ। শক্তিশালী এবং অনন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ডে বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা এবং বিশেষ চিহ্ন থাকা উচিত। একই পাসওয়ার্ড একাধিক অ্যাকাউন্টে ব্যবহার না করাই ভালো। পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করা যেতে পারে- যা আপনার পাসওয়ার্ডগুলো সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষণ করবে এবং প্রয়োজনীয় সময় পাসওয়ার্ড মনে করিয়ে দেবে।

দ্বৈত প্রমাণীকরণ : দ্বৈত প্রমাণীকরণ (ঞড়ি-ঋধপঃড়ৎ অঁঃযবহঃরপধঃরড়হ, ২ঋঅ) একটি অতিরিক্ত নিরাপত্তা স্তর প্রদান করে। এটি পাসওয়ার্ড ছাড়াও একটি অতিরিক্ত যাচাইকরণের উপায় যেমন একটি কোড, বায়োমেট্রিক যাচাইকরণ বা একটি নিরাপত্তা প্রশ্নের উত্তর সংযোজন করে। এটি আপনার অ্যাকাউন্টকে সুরক্ষিত রাখবে এবং আক্রমণকারীদের জন্য তথ্য চুরি করা কঠিন করে তুলবে।

সফটওয়্যার আপডেট : নিয়মিতভাবে আপনার অপারেটিং সিস্টেম এবং অন্যান্য সফটওয়্যার আপডেট করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সফটওয়্যারের পুরনো ভার্সনে নিরাপত্তা দুর্বলতা থাকতে পারে- যা সাইবার আক্রমণকারীদের জন্য সুযোগ তৈরি করে। তাই সফটওয়্যারের সর্বশেষ আপডেট ইনস্টল করা উচিত, যাতে নতুন নিরাপত্তা পঁ্যাচ এবং বাগ ফিড যুক্ত হয়।

ফিশিং আক্রমণ থেকে সাবধানতা : ফিশিং আক্রমণ হলো এক ধরনের সাইবার আক্রমণ। যেখানে আক্রমণকারীরা ভুয়া ইমেল বা মেসেজের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করার চেষ্টা করে। এই আক্রমণগুলো অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য এবং আসল ইমেলের মতো দেখতে পারে। তাই অপরিচিত ইমেল বা লিঙ্কে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন।

যদি কোনো ইমেল বা মেসেজ সন্দেহজনক মনে হয়, তাহলে তা ডেটা ব্যাকআপ : নিয়মিতভাবে আপনার গুরুত্বপূর্ণ ডেটার ব্যাকআপ নিন। এটি ডেটা হারানোর ঝুঁকি কমাবে এবং সাইবার আক্রমণের পর ডেটা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে। আপনি ক্লাউড স্টোরেজ বা বাহ্যিক হার্ড ড্রাইভ ব্যবহার করতে পারেন। ব্যাকআপ নেওয়ার সময় নিশ্চিত হোন যে, ব্যাকআপটি নিরাপদ জায়গায় সংরক্ষিত আছে এবং এটি নিয়মিত আপডেট করা হচ্ছে।

ব্যবহারকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি : সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবহারকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাইবার নিরাপত্তার মূল উপাদানগুলো সম্পর্কে সচেতনতা না থাকলে সঠিকভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। তাই ব্যবহারকারীদের সচেতন করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিচে উলেস্নখ করা হলো-

প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা : সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে কর্মশালা আয়োজন করা এবং ব্যবহারকারীদের প্রশিক্ষিত করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে তারা সাইবার ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণে সক্ষম হবেন। প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তুতে পাসওয়ার্ড সুরক্ষা, ফিশিং আক্রমণ থেকে বাঁচার উপায়, সফটওয়্যার আপডেটের গুরুত্ব এবং ডেটা ব্যাকআপের প্রয়োজনীয়তা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। সচেতনতা প্রচারণা : সাইবার নিরাপত্তার সচেতনতা প্রচারণা চালানোও গুরুত্বপূর্ণ। ইমেল, সামাজিক মাধ্যম এবং অফিস নোটিস বোর্ডের মাধ্যমে সাইবার নিরাপত্তার তথ্য শেয়ার করা যেতে পারে। নিরাপত্তা বিষয়ক নির্দেশাবলি, টিপস এবং সতর্কতামূলক তথ্য ব্যবহারকারীদের সঙ্গে শেয়ার করা উচিত।

সিকিউরিটি পলিসি প্রণয়ন : অফিস বা সংস্থার জন্য একটি সিকিউরিটি পলিসি তৈরি করা উচিত এবং তা সবার সঙ্গে শেয়ার করা উচিত। এই পলিসি ব্যবহারকারীদের সাইবার নিরাপত্তার নিয়ম-কানুন সম্পর্কে সচেতন করবে এবং তারা তা মেনে চলতে উৎসাহিত হবে। পলিসিতে পাসওয়ার্ড ব্যবস্থাপনা, সফটওয়্যার আপডেট, ফিশিং আক্রমণ প্রতিরোধ এবং ডেটা ব্যাকআপের বিষয়ে নির্দেশনা থাকতে পারে।

নিয়মিত মূল্যায়ন : সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ব্যবহারকারীদের সচেতনতা নিয়মিতভাবে মূল্যায়ন করা উচিত। এর মাধ্যমে নিরাপত্তার দুর্বলতা চিহ্নিত করা যাবে এবং তা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। নিয়মিত মূল্যায়নের ফলে সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত করা সম্ভব হবে এবং ব্যবহারকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।

সাইবার নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ : প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই ভবিষ্যতে আরও উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন হবে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (অও) এবং মেশিন লার্নিং (গখ) প্রযুক্তির সাহায্যে সাইবার আক্রমণ পূর্বাভাস এবং প্রতিরোধ করা সম্ভব হতে পারে। এছাড়াও, বস্নকচেইন প্রযুক্তি নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।

ফেরদৌস আহমেদ : কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে