শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

মাথাপিছু আয়

কার্যকর উদ্যোগ নিন
  ২৩ মে ২০২৪, ০০:০০
মাথাপিছু আয়

মাথাপিছু আয়, জিডিপির মতো বিষয়গুলো দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জন ও অগ্রগতির প্রশ্নে আমলে নেওয়া জরুরি। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, ডলারের দামের প্রভাব পড়েছে দেশের মাথাপিছু আয়ে। তথ্য মতে, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে মাথাপিছু আয় সেভাবে বাড়েনি। মার্কিন ডলারে গড় মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ৭৮৪ ডলার। আর টাকার হিসাবে মাথাপিছু আয় ৩ লাখ ৬ হাজার ১৪৪ টাকা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো (বিবিএস) সোমবার রাতে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। এটি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সাময়িক হিসাব।

লক্ষণীয়, দেড়-দুই বছর ধরে ডলারের দাম বেশ বেড়েছে। ৮৬ টাকার ডলারের দাম উঠেছে ১১৭ টাকায়। ফলে মাথাপিছু আয়ে এর প্রভাব পড়েছে। চলতি অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৮৪ ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৫ ডলার বেড়েছে। ডলারে মাথাপিছু আয় বেড়েছে মাত্র সোয়া ১ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৪৯ ডলার। এ বছর বিবিএস ডলারে মাথাপিছু আয়ের হিসাবটি করেছে প্রতি ডলারের দাম ১০৯ টাকা ৯৭ পয়সা ধরে। কিন্তু চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম ১১৭ টাকা ঠিক করেছে। ফলে অর্থবছর শেষে চূড়ান্ত হিসাব করার সময় ডলারে মাথাপিছু আয় আরও কমতে পারে এমনটিও খবরে উঠে এসেছে।

আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। একইসঙ্গে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। দেড়-দুই বছর ধরে ডলারের দাম বেশ বেড়েছে এবং এর ফলে মাথাপিছু আয়ে এর প্রভাব পড়েছে, অন্যদিকে অর্থবছর শেষে চূড়ান্ত হিসাব করার সময় ডলারে মাথাপিছু আয় আরও কমতে পারে- এটি এড়ানো যাবে না। এছাড়া স্মর্তব্য যে, মাথাপিছু আয় কোনো ব্যক্তির একক আয় নয়। দেশের অভ্যন্তরে আয়ের পাশাপাশি রেমিট্যান্সসহ যত আয় হয় তা একটি দেশের মোট জাতীয় আয়। সেই জাতীয় আয়কে মাথাপিছু ভাগ করে দিয়ে এই হিসাব করা হয়।

প্রসঙ্গত, ডলারে মাথাপিছু আয়ের হিসাব সম্পর্কে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক বলেছেন, তিন বছর ধরেই ডলারে মাথাপিছু আয় অনেকটা এক জায়গায় আছে। এর মানে হলো, ক্রয়ক্ষমতার সক্ষমতা অনুসারে জীবনযাত্রার মান তেমন বাড়েনি। জাতীয় আয়ে গরিব মানুষের ভাগ কমেছে। গরিব মানুষের আয় কমেছে। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, অর্থনীতি খারাপ অবস্থায় আছে। তাই গরিব মানুষের আয় বাড়ানোর সুযোগ বেশ সীমিত। আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলো আমলে নেওয়া এবং সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, যথাযথ উদ্যোগ অব্যাহত রাখা। এটাও জানা গেছে যে, কোভিডের পর থেকে ডলারের হিসাবে মাথাপিছু আয়ে খুব বেশি অগ্রগতি নেই। ২০২১-২২ অর্থবছরে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয় হয়। ওই অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৯৩ ডলার। পরের বছর তা কমে ২ হাজার ৭৪৯ ডলারে নামে। এ বছর আবার তা বেড়ে ২ হাজার ৭৮৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। তিন বছর ধরে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭০০ ডলারের ঘরে আছে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই এটাও মনে রাখা দরকার, মাথাপিছু আয়, জিডিপির অগ্রগতিতে যেমন কাজ করতে হবে- তেমনিভাবে প্রকট বৈষম্যের এ সমাজে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির প্রচেষ্টা জারি রাখার সঙ্গে সঙ্গে এর সুফল সবাই পাচ্ছেন কি-না সেই দিকটিও আমলে নিতে হবে। কেননা, এর আগে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করার বিষয়টি বারবার আলোচনায় এসেছে। যেখানে ধনীরা সম্পদের পাহাড় গড়লেও সুযোগ-সুবিধার অভাবে দরিদ্ররা দরিদ্রই থেকে যাচ্ছে- এমন আলোচনাও সামনে এসেছিল। সঙ্গত কারণেই মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হতে হবে এবং এই দিকটিকে সামনে রেখে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া অর্থনীতির ক্ষেত্রগুলোতে উন্নতির ধারা বজায় রাখতেও পদক্ষেপ জরুরি। অন্যদিকে বৈষম্য নিরসনে কাজ করতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে- এমনটি প্রত্যাশিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে