রাজস্ব আদায় ও রিজার্ভ সংকট

লোনপ্রাপ্তি রিজার্ভ সংকটের স্থায়ী সমাধান না, এটা পরিশোধের সময় স্থানীয় রাজস্ব বৃদ্ধির বিকল্প কিছু নেই। আর রিজার্ভ সংকটের স্থায়ী সমাধান হলো রপ্তানি বৃদ্ধি ও বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসা।

প্রকাশ | ২৩ মে ২০২৪, ০০:০০

আলিমুজ্জামান
আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ভারসাম্য ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একে অপরের পরিপূরক। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বলতে আমরা শুধুমাত্র ডলারকে বিবেচনায় নেই। সে কারণে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের লোনপ্রাপ্তির জন্য অনেক কঠিন শর্ত মানতে হয় যা দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর যে, বিশাল প্রভাব পড়বে সেটা চিন্তায় থাকে না। টাকার অবমূল্যায়ন, ব্যাংক সুদহার বৃদ্ধি ও পণ্য আমদানির প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে কিভাবে দ্রব্যমূল্য হ্রাস করা সম্ভবপর হবে সেটা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের মাথায় আসছে না। বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদরা ভালো বলতে পারবেন। দেশের বেশিরভাগ শিল্পের কাঁচামাল ও বহু ফিনিস পণ্য আমদানি করা ছাড়া ভোগ করার কোনো উপায় নেই। ওই তিন বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত হলো রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির চাপ। তিন বিষয়ের যোগফলের সমষ্টির ওপর রাজস্ব আদায় হয়তো বাড়বে। তবে শর্ত হলো ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতা থাকবে কিনা সেটা সন্দেহ আছে। অন্যদিকে তৈরি হয়েছে আর্থিক ঘাটতি, সেটা হলো বৈদেশিক মুদ্রার দেশে আসা ও প্রদানের সামঞ্জস্যতা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন চলতি হিসাবের ব্যালান্স ভালো অর্থাৎ রপ্তানির বিপরীতে প্রাপ্ত ডলার এখনো দেশে আসেনি কিন্তু রপ্তানি সম্পন্ন হয়েছে। যা হোক, অর্থনীতির এত কঠিন মারপঁ্যাচ আমাদের মতো অতি নগণ্য মানুষের বোঝার দরকার নেই। সাদা চোখে যা ভাসাভাসা দেখি সেটা বলার বা বোঝানোর চেষ্টা করি। সেটাও কতজন শুনে বা আমলে নেন সেটাও বোধগম্য নয়। তবে প্রতিটা বিশ্বসংস্থার লোন দেওয়ার বিপরীতে বিশ্বমোড়লের স্বার্থ জড়িত থাকে, আর সেই স্বার্থ হলো ব্যবসায়িক স্বার্থ। সরকার যদি নিজের দেশের শিল্প বিকাশের স্বার্থ চিন্তা না করে সাময়িক ডলারের রিজার্ভ বৃদ্ধির কথা চিন্তা করে তাহলে দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘ মেয়াদি প্রভাব পড়বে। আইএমএফ'র শর্ত মেনে শেয়ার মার্কেটে ট্যাক্স বসানোর কথা শোনার পর যদি শেয়ার বাজারে ধস নামতে পারে তাহলে বসানোর পর শেয়ার মার্কেট থাকবে বলে মনে হয় না। আইটি সেবার কর অব্যাহতি বাদ দিলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন শুরুতেই শেষ হয়ে যাবে কিনা সেটা ভাববার বিষয়। রেমিট্যান্স এ প্রণোদনা দিয়ে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আনা যায় না, ট্যাক্স বসালে তো আরও আসবে না। রিজার্ভ বাড়ার উপায়ের মধ্যে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসা। সামান্য লোনপ্রাপ্তির আশায়, বৈধ স্থায়ী রিজার্ভ বৃদ্ধির দ্বিতীয় উপায় সামান্য করপ্রাপ্তির জন্য বন্ধ করার বিষয় বিবেচনা যোগ্য বা পরিবার ছেড়ে বিদেশ থাকা ব্যক্তির কষ্টার্জিত আয় অবৈধ পথে পাঠাতে উৎসাহিত করার যুক্তিকতার বিষয় বিবেচনার দাবি রাখে। পোশাক শিল্পের রপ্তানি বর্তমান বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতার কারণে হুমকির মুখে, সেটার ঢালাওভাবে ইনসেনটিভ বন্ধ করা উচিত হবে বলে মনে হয় না। বরং সেটার বাজার বৃদ্ধির লক্ষ্যে অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানির ওপর ইনসেনটিভ রাখলে ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন বাজার খুঁজতে উৎসাহিত হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে প্রধান রপ্তানি খাত হিসেবে আইটি সেক্টরকে ধরা হয়েছে, সেটার কর অব্যাহতি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব অন্য কোনো দেশকে অধিক সুবিধা দেওয়ার যোগসূত্র আছে কিনা সেটা অবশ্যই পলিসি মেকাররা বিবেচনায় রাখবেন। লোনপ্রাপ্তি রিজার্ভ সংকটের স্থায়ী সমাধান না, এটা পরিশোধের সময় স্থানীয় রাজস্ব বৃদ্ধির বিকল্প কিছু নেই। আর রিজার্ভ সংকটের স্থায়ী সমাধান হলো রপ্তানি বৃদ্ধি ও বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসা। বর্তমানে সামান্য প্রাপ্তির আশায় স্থায়ী সমাধান নষ্ট করার বিষয় আর কেউ না বুঝলেও দেশপ্রেমিক প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই বুঝবেন এবং কারো চাপে তিনি সেটা বন্ধ করবেন বলে মনে হয় না। তিনি বিকল্প চিন্তা করবেন, আমাদের অধিক আমদানি চীন থেকে হয়ে থাকে, ডলারের বাহিরে উভয় দেশের সম্মতিতে স্থানীয় মুদ্রায় আমদানির মূল্য পরিশোধ করা যায়। বর্তমানে চীন ভালো বন্ধুরাষ্ট্র তাই সেখান থেকে আরও সহজ শর্তে ঋণ নেওয়া যেতে পারে এবং রিজার্ভ বৃদ্ধির বিকল্প হতে পারে ডলারের জায়গায়। এভাবে যেসব দেশের সঙ্গে অধিক আমদানি হয় সেই দেশের মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো অথবা প্রাচীন যুগের ন্যায় বিনিময় প্রথা অর্থাৎ যে দেশে রপ্তানি হবে সেই দেশে আমাদের চাহিদা মতো পণ্য থাকলে সেটা আমদানি করা যেতে পারে। লেখার শুরুতে বলেছি অর্থনীতিবিদ না, যা লিখেছি সেটা শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের সাদা চোখে দেখা উপলব্ধি মাত্র। বলতে পারেন হাতি ঘোড়া গেল তল, পিঁপড়া বলে কত জল, তেমনটা ভাবলেও মাইন্ড করার সাহস নেই। আলিমুজ্জামান : লিড কনসালট্যান্ট, দ্য রিয়েল কনসালটেশন, বিশ্বব্যাংক, বাংলাদেশ