শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

প্রেসিডেন্ট রাইসি নিহত

বিশ্বব্যাপী শোকের ছায়া
  ২২ মে ২০২৪, ০০:০০
প্রেসিডেন্ট রাইসি নিহত

হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি নিহত হয়েছেন। এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদোলস্নাহিয়ানসহ হেলিকপ্টারে থাকা সবাই নিহত হয়েছেন বলেও জানা যাচ্ছে। তবে এটি দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত হত্যা এমন প্রশ্নও উঠেছে। সোমবার সকালে পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের পাহাড়ি ও তুষারাবৃত এলাকায় ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পায় অনুসন্ধানী দল। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জানানো হয়, সেখানে প্রাণের কোনো চিহ্ন নেই। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিসহ তার সফরসঙ্গীরা নিহত হওয়ার পর পাঁচ দিনের শোক ঘোষণা করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুলস্নাহ আলি খামেনি। একইসঙ্গে ইরানের অন্তর্র্বর্তী প্রেসিডেন্ট পদে প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবারের নিয়োগ নিশ্চিত করেছেন তিনি। প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিসহ কয়েকজন নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা নিহত ব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন। এছাড়া শোক জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। বিশ্বনেতাদের মধ্যে আছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।

উলেস্নখ্য, এর আগেও আকাশপথে দুর্ঘটনায় দেশটির অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। প্রতিরক্ষা ও বিভিন্ন সময়ে পরিবহণমন্ত্রী, ইরানের রেভলু্যশনারি গার্ড এবং সেনাবাহিনীর কমান্ডার বিমান বা হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। এবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জানা যায়, ইব্রাহিম রাইসি একদিন আগে প্রতিবেশী আজারবাইজানে ছিলেন। তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে বাঁধ উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন। ৬৩ বছর বয়সি রাইসি ২০২১ সালে দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশটির মরালিটি বা নৈতিকতাবিষয়ক আইন কঠোর করার নির্দেশ দেন। তাকে একজন কট্টরপন্থি ধর্মীয় নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ কারণে তিনি সরকারবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভের মুখেও পড়েছেন। বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনায় তিনি কঠোর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। অনেকে মনে করেন তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে আয়াতুলস্নাহ আলী খামেনির উত্তরসূরি হওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করছিলেন। ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ নেতা তাকে বিচার বিভাগের প্রধানের শক্তিশালী পদে নিযুক্ত করেন। রাইসি বিশেষজ্ঞদের অ্যাসেম্বলির ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবেও নির্বাচিত হন। ইরানে ৮৮ সদস্যের এই বোর্ড দেশটির পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচন করে থাকে।

বলা দরকার, ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি নিহত হলো এমন এক সময়ে, যখন বিশেষ সংকটময় সময় পার করছে মধ্যপ্রাচ্য। সাত মাস ধরে ইসরাইলের হামাসবিরোধী লড়াইয়ে গাজায় যে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, তা এখন বিশ্ববাসীর মনোযোগের কেন্দ্রে। গাজার এই পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ক্রমে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি নিহত হওয়ার এই ঘটনার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে সংকট বাড়তে পারে এমন আশঙ্কাও সামনে এসেছে। প্রেসিডেন্ট রাইসির সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদোলস্নাহিয়ানের মৃতু্যও ইরানের জন্য বিরাট ধাক্কা হয়ে এসেছে। ইরানের নতুন নেতৃত্বের জন্য পশ্চিমাদের সঙ্গে বৈরিতা সামলে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখাটাও বড় বিষয় হিসেবে দেখা দেবে এমন আলোচনা উঠে আসছে। এছাড়া দেশের ভেতরেও ক্ষমতার ধারাবাহিকতা রক্ষার চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে তেহরান। বর্তমানে ৮৫ বছর বয়সি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুলস্নাহ আলী খামেনির উত্তরসূরি কে হবেন, সে প্রশ্ন সামনে এসেছে। রাইসিই খামেনির উত্তরসূরি হবেন বলে মনে করা হচ্ছিল।

সামগ্রিকভাবে আমরা বলতে চাই, ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি নিহতের ঘটনার মধ্য দিয়ে নানা ধরনের আলোচনা উঠে আসছে। একদিকে মধ্যপ্রাচ্য সংকট বাড়তে পারে এমন আশঙ্কা আলোচনায় আসছে, অন্যদিকে এই ঘটনা ইরানকে অস্থির করে তুলতে পারে এমন বিষয়ও সামনে আসছে। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে দেশটির সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত বৈচিত্র্যময় দেশ ইরানের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের পথচলা। রাইসি-পরবর্তী যুগেও দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকুক, একইসঙ্গে ইরানের মানুষ এই শোক পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠুক- এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে