ভয়াবহ ঋণের ফাঁদ কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
প্রকাশ | ২১ মে ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
ঋণসংক্রান্ত যে চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে তা উদ্বেগজনক। এমনকি ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে। তথ্য মতে, ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে ১৬ মে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন আব্দুল মালেক নামে এক ক্ষুদ্র ফল ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসা ও স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য কয়েকটি ব্যাংক এবং এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়ায় দীর্ঘদিন তিনি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছিলেন না। অন্যদিকে বিভিন্ন এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পেরে ৩০ মার্চ কুমিলস্না সদর দক্ষিণ উপজেলার ১৯নং ওয়ার্ডের রাজাপাড়ায় আত্মহত্যা করেন শামছুন্নাহার নামে এক নারী। জানা যায়, ঋণের কিস্তির টাকা না পেয়ে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা ওইদিন সকালে তার বাড়িতে তালা লাগায়। ঘরের ভেতরে তালাবদ্ধ শামছুন্নাহার অপমান সহ্য করতে না পেরে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। এ ছাড়া একই দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় সারোয়ার মিয়া নামে এক যুবককে ছুরি মেরে হত্যা করে তারই দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
আমরা বলতে চাই, যে তথ্য উঠে আসছে, তা কতটা ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। লক্ষণীয়, সমাজবিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, খাদ্যদ্রব্যসহ সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। নিম্ন-মধ্যবিত্তের প্রকৃত আয় কমেছে। আর সংসার সামাল দিতে তাদের একটি বড় অংশকে নানাভাবে ঋণ নিতে হচ্ছে চড়া সুদে। যার সুদ পরিশোধ করাই তাদের জন্য দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ফলে চক্রবৃদ্ধি হারে ঋণের অর্থ বাড়ছে। অন্যদিকে ঋণে ডোবা হতাশাগ্রস্ত মানুষ নির্বিচারে আত্মহত্যাসহ নানা ভয়ংকর পথ বেছে নিচ্ছে। উলেস্নখ্য, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদা মেটাতে দেশের এক-চতুর্থাংশ পরিবার ঋণ করে। শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষই এজন্য বেশি ঋণ করছে। শহর ও গ্রামের মানুষ এ ঋণের বড় অংশই নিচ্ছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে চড়া সুদে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের শূন্য দশমিক ৮২ শতাংশ পরিবার তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আর ২২ শতাংশ পরিবার মাঝারি বা তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। দেশে বর্তমানে মোট পরিবার বা খানার সংখ্যা ৪ কোটি ১০ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ২৬ শতাংশ পরিবার মৌলিক চাহিদা পূরণে ঋণ করছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
আমরা বলতে চাই, পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি। দেশে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। বাজারে পণ্যমূল্য যতটা বেড়েছে, সেই তুলনায় মানুষের আয় বাড়েনি। এ কারণে জীবনযাত্রার খরচ সামাল দিতে ঋণ করছে নিম্ন আয়ের মানুষ- এমন আলোচনাও উঠে এসেছে। অন্যদিকে ঋণের ফাঁদে শুধু নিম্নবিত্ত নয়, নিম্ন-মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্তরাও আটকা পড়ে যাচ্ছে। অর্থনীতিবিদের ভাষ্য, সাধারণ মানুষের ঋণগ্রস্ততা নিয়ে যে খবর পাওয়া যাচ্ছে তা চরম উদ্বেগের। করোনার সময় দারিদ্র্যের উলস্নম্ফন হয়েছে। মানুষ ব্যক্তিগত পর্যায় ছাড়াও বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে ঋণ নিয়েছে। জানা যাচ্ছে, ওই ঋণ পরিশোধ করে মানুষ যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল, ঠিক তখনই শহর ও গ্রামে সব ধরনের পণ্যের রেকর্ড মূল্যস্ফীতি ঘটে। এতে মানুষকে জেনে-শুনেই নতুন ঋণের ফাঁদ গলায় পরতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার, মানুষকে এই ঋণ ফাঁস থেকে রক্ষা করতে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন- এমন আলোচনা যেমন উঠে এসেছে তেমনি সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে অতিদরিদ্রের পাশাপাশি নতুন করে দরিদ্রের সারিতে যুক্ত হওয়া মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি বলেও মত এসেছে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। মানুষকে ঋণ ফাঁদ থেকে রক্ষা করতে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে- এমনটি প্রত্যাশিত।