বজ্রপাতে একের পর এক মৃতু্যর ঘটনা ঘটছেই। সৃষ্ট পরিস্থিতি এমন- যেন এটি এক ধরনের দুর্যোগ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বজ্রপাতে একদিনে দেশের চার জেলায় ৮ জনের মৃতু্য হয়েছে। এর মধ্যে নরসিংদীতে মা-ছেলেসহ ৪ জন, টাঙ্গাইলে দুই ভাই এবং গাজীপুর ও ময়মনসিংহে দুই নারী নিহত হন। এ ছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন একজন। শনিবার সকালে এসব ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
আমরা বলতে চাই, ৪ জেলায় ৮ জনের মৃতু্যর ঘটনা আমলে নিয়ে পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করা জরুরি। সার্বিক চিত্র পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নও নিশ্চিত করতে হবে। এটাও বিবেচ্য যে, সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন সময়ে এটা বলেছেন- বজ্রপাতে মৃতু্যরোধে অবহেলা নয়, সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। এছাড়া বৃষ্টির সময় যতটা সম্ভব ঘরে অবস্থান করতে হবে। একইসঙ্গে বেশি করে তালগাছ রোপণের পরামর্শের বিষয়টিও বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্টদের তৎপর হওয়া জরুরি। এ ছাড়া জনসচেতনতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণেরও বিকল্প নেই।
প্রসঙ্গত বলা দরকার, একদিনে ৪ জেলায় ৮ জনের মৃতু্যর ঘটনা যেমন এড়ানোর সুযোগ নেই, তেমনি এটাও স্মর্তব্য যে, সাম্প্রতিক সময়ে এমন তথ্যও সামনে এসেছে, দেশে বজ্রপাতে গত ১ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত ৩৮ দিনেই ৭৪ জনের মৃতু্য হয়েছে! আর এদের মধ্যে এপ্রিল মাসেই বজ্রপাতে মারা গেছেন ৩১ জন। যাদের ২০ জন পুরুষ ও ১১ জন নারী। এ ছাড়া চলতি মে মাসের আট দিনে বজ্রপাতে মারা গেছেন ৪৩ জন। এদের মধ্যে ৩৪ জন পুরুষ ও ৯ জন নারী। অন্যদিকে গত ৩৮ দিনে বজ্রপাতে মৃতদের মধ্যে ৩৫ জনই কৃষক। স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন 'সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টোর্ম অ্যাওয়ারনেস' ফোরামের (এসএসটিএএফ) গবেষণা সেলের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছিল। এ ছাড়া তারা কৃষকের জীবন রক্ষায় মাঠে কাজ করা কৃষকদের তিন দফা পরামর্শ দিয়ে তা পালনের আহ্বান জানিয়েছিল। তা হলো- খোলা আকাশের নিচে থাকলে আকাশে কালো মেঘ দেখার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হবে। বৃষ্টির সময়ে গাছের নিচে অবস্থান না করা এবং খোলা আকাশের নিচে কাজ করার সময় পায়ে জুতা পরিধান করা এবং মাঠে থাকা অবস্থায় বজ্রপাত হলে শুয়ে পড়া। আমরা বলতে চাই, এই পরামর্শর বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে, জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে কৃষকদের অধিক সচেতন করতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।
বলা দরকার, আমাদের দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকরা। এর আগে এমনটিও জানা গিয়েছিল যে, মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে কৃষকের প্রাণহানিই ঘটে সবচেয়ে বেশি। ফলে এই বিষয়গুলো খেয়াল রেখে সচেতনতা বাড়াতে হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের একজন অধ্যাপক জানিয়েছিলেন, মূলত বীক্ষণ শক্তি না থাকার ফলে বজ্রপাতে মৃতু্যর সংখ্যা বাড়ছে। বজ্রপাত যখন হয়, তখন আকাশ থেকে বিদু্যৎ মাটির দিকে ধেয়ে আসে। বিদু্যৎ বীক্ষণ না হলেই তখন মানুষ বা গাছের ওপর সেটা পড়ে। অনেক সময় বিল্ডিংয়ের ওপরও পড়তে দেখা যায়। বিল্ডিংগুলোতে পড়লে মানুষের খুব বেশি ক্ষতি হয় না। তবে বজ্রপাতের সময় ঘরের বাইরে থাকলে সমস্যাটা বেশি হয়। তাই সচেতন হওয়ার বিষয়টি তিনিও তুলে ধরেছিলেন।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, একদিনে ৪ জেলায় ৮ জনের মৃতু্যর ঘটনা আমলে নিতে হবে। এছাড়া দেশে বজ্রপাতে যেভাবে একের পর এক মৃতু্যর ঘটনা ঘটছে তা সহজ করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে। আমলে নেওয়া দরকার, এমন মতও উঠে এসেছিল যে, তালগাছ রোপণে সরকারি ও বেসরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করার পাশাপাশি সচেতন নাগরিক হিসেবে সবার এগিয়ে আসা উচিত। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং সচেতনতা বৃদ্ধিসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।