মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১

খাদ্যে ভেজাল

রোধে সঠিক পদক্ষেপ নিন
  ২০ মে ২০২৪, ০০:০০
খাদ্যে ভেজাল

প্রতিনিয়ত খাদ্যদ্রব্যসহ সব ধরনের ফলে ফরমালিন মেশানো হচ্ছে। এটি বন্ধে আইন থাকলেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির নেই। এ কারণে খাদ্যে ফরমালিন মেশানো বন্ধ হচ্ছে না বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা। শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় চারুকলা অনুষদের সামনে 'মৌসুমিসহ সব ফল বিষমুক্ত ও নিরাপদ চাই' শীর্ষক মানববন্ধনের আয়োজন করে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলন (পরিজা)। সেখানে বক্তারা এসব কথা বলেন। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ফরমালিনযুক্ত খাবার গ্রহণের কারণে ক্যানসার, কিডনি রোগ, পরিপাক যন্ত্রে রোগসহ মানুষের বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। সব ধরনের ফলে ফরমালিন মেশানো বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। এটা সত্য, আমাদের আবহাওয়ার কারণে একেক মৌসুমে একেকটা ফল আসে। এই ফলগুলো আমাদের শরীরে বিভিন্নভাবে উপকার করে। চিকিৎসকরা রোগী বা অন্তঃসত্ত্বা নারীকে বিভিন্ন ফল খাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু তিন মাস পর দেখা গেল তার অবস্থা আরও খারাপ হলো। এর কারণ, ফলে ফরমালিন মেশানো থাকে। বিভিন্ন দোকানে কেমিক্যালমুক্ত ফল লেখা থাকলেও প্রশাসনের কেউ তা যাচাই করে দেখে না। দেশে এটি দমনের জন্য আইন ও লোকবল রয়েছে। কিন্তু এগুলো কার্যকর হচ্ছে না।

১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় খাদ্যে ভেজাল মেশানোর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃতু্যদন্ড করার আহ্বান জানিয়েছে দেশের সচেতন মানুষ। বাংলাদেশের হাজারও সমস্যার মধ্যে অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো- খাদ্যে ভেজাল। খাদ্যে ভেজাল আজ আমাদের জাতীয় জীবনে এক মহাদুর্যোগের নাম। অথচ মানুষের সুস্বাস্থ্য ও বেঁচে থাকার জন্য পুষ্টিকর খাবার অতি জরুরি। ফলে বাংলার মাটিতে থেকে খাদ্যে জীবনসংহারী ভেজাল মেশায় যারা, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ।

এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই, বর্তমানে খাদ্যে ভেজাল অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। দেশে 'খাদ্য নিরাপত্তা' একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উৎপাদন করেই হোক কিংবা আমদানি করেই হোক, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মনে রাখতে হবে, 'খাদ্য নিরাপত্তা' এদেশের জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। সেই সাংবিধানিক অধিকার সামনে রেখেই 'খাদ্য নিরাপত্তা' নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, উন্নত বিশ্বের 'খাদ্য নিরাপত্তা'র সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রাখতে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে তাও খতিয়ে দেখতে হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্র্ত্রণালয়কে। দেশের জনগণকে নিরাপদ খাদ্যদ্রব্য প্রদান নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই। খাদ্য নিরাপত্তা আইনের মূলভিত্তিগুলো হলো- খাদ্যে ভেজাল না মিশিয়ে খাদ্য সঠিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে, খাদ্য ভেজাল মিশ্রিত দেখা দিলে যারা তার সঙ্গে নিযুক্ত বা জড়িত তাদের সঠিক ব্যবস্থার আওতায় আনতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে বিচার বা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

মনে রাখতে হবে, ভেজাল খাদ্যপণ্য জনস্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এই প্রবণতা চলতেই থাকলে জাতীয় সক্ষমতার ভিত্তি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়বে। এটা কোনোক্রমেই হতে দেওয়া যায় না। ভেজাল পণ্যও ভোক্তাদের মৃতু্যর দিকে ঠেলে দেয় ও সুষ্ঠু জাতি গঠনে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। অতএব, বছরব্যাপী নিয়মিত এই অভিযান পরিচালনা ও বাজার মনিটরিং করে অসাধু ব্যবসায়ী, ভেজাল ভোগ্যপণ্য প্রস্তুত, বাজারজাতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং প্রয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করা দেশের জনস্বার্থে এখনই সময়ের দাবিরূপে গ্রহণ করতে হবে। দেশের প্রত্যেক অঞ্চলে যেন খাদ্য ভেজাল ছাড়া পৌঁছে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। যেহেতু রাষ্ট্রের জনগণের মৌলিক চাহিদার মধ্যে একটি হলো খাদ্য, সেহেতু এর নিরাপত্তার ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে