উচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে পড়েছে দেশ। জিম্মি হয়ে পড়েছে দেশের জনগণ। গত অর্থবছরের পুরো সময়ে ৯ শতাংশের ওপরে ছিল বাংলাদেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি আবার ১০ শতাংশের ওপরে উঠল। বাজারে চাল, ডাল, মুরগি ও শাকসবজি সবকিছুর দামই চড়া। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা, যা আগের চেয়ে ৫ টাকা বেশি। এছাড়া আদা কিংবা রসুন ২২০ থেকে ২৪০ টাকার নিচে মিলছে না। তবে ডিম ও কাঁচা মরিচের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। কাঁচামরিচের কেজি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। আর ডিমের হালি হাফ সেঞ্চুরি ছুঁয়েছে। পাড়া-মহলস্নার দোকানেও ৫৫ টাকা হালি ডিম বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৫ টাকা আর দুই সপ্তাহ আগে ৪০ টাকা। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি হালি ডিমের দাম ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। কমেনি সবজির দামও। এমন পরিস্থিতিতে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের ভরসা ডিম। তবে এই পণ্যের দাম হঠাৎ করে অস্থির হয়ে যাওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করছেন অনেকে। ক্রেতারা বলেন, বাচ্চাকাচ্চাকে মাছ-মাংস খাওয়াতে পারি না বেশি দামের কারণে। ঝোলভাত খাওয়ার জেদ করলে এক হালি ডিম কিনে রান্না করে দিলে খুশি হতো। এখন সেটাও কিনতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ডিম বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ডিমের উৎপাদনে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। কয়েকদিন আগেও প্রচন্ড গরমের কারণে খামারে অনেক মুরগি মারা গেছে। ফলে বাজারে ডিমের সরবরাহ হুট করে কমে গেছে। ঢাকায় ডিমের বড় দুটি পাইকারি বাজার আছে। এর একটি কারওয়ান বাজারসংলগ্ন তেজগাঁও রেলস্টেশন পাইকারি ডিমের বাজার। অন্যটি পুরান ঢাকার কাপ্তানবাজার। এই দুই বাজারের পাইকারিতে ১০০ বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ১৮০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। যদিও প্রান্তিক খামারিরা ডিমের দাম কমা-বাড়া নিয়ে তেজগাঁও আড়ত মালিকদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, কিছুদিন আগে ডিমের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমিয়ে দেন আড়ত মালিকরা। সে সময় সারাদেশে ডিম হিমাগারে মজুত হয়েছে। এখন দাম বাড়িয়ে তারা মুনাফা করছে।
বিশ্ববাজারে পণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে অনেক দেশে মূল্যস্ফীতি ঘটে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক ও মূল্য হ্রাসের কারণে অনেক দেশে পর্যায়ক্রমে নেমে আসে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি উল্টো আরও বাড়তে থাকে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির ওই ধারা অব্যাহত আছে এখনো।
বাংলাদেশের বর্তমান মূল্যস্ফীতির পেছনে স্থানীয় কারণের চেয়ে বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে বেশি দায়ী করছে সরকার। বলা হচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক জ্বালানির বাজারে অস্থিরতা ও ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে। ওইসময় প্রায় একইসঙ্গে বাংলাদেশ ও বিশ্বের অন্যান্য দেশেও মূল্যস্ফীতি বাড়তে শুরু করে। এরপর ২০২২ সালেই বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করে। যদিও বাংলাদেশের বাজারে এর তেমন কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। এক পর্যায়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসা শুরু হলেও ভিন্ন চিত্র বাংলাদেশের।
আমরা মনে করি, এর জন্য দায়ী বাজার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরাতে না পারা এবং বাজার সিন্ডিকেট। বাজার সিন্ডিকেট একেক সময় একেক পণ্যের দাম বাড়িয়ে জনসাধারণের পকেট কাটে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে হলে দ্রম্নত বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য।