দেশের জ্বালানি খাতে ভর্তুকি তুলে নেওয়ার অংশ হিসেবে তিন মাস পরপর বিদু্যতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, সেই হিসাবে চলতি বছরে আরও তিনবার দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি কমালেও বর্তমান ডলার মূল্য ও গ্রীষ্মের বর্ধিত বিদু্যতের চাহিদা মেটাতে চালিত তেল বিদু্যতের চড়া উৎপাদন ব্যয় সামগ্রিক ঘাটতি বাড়িয়ে দেবে, যা গ্রাহকের ওপর দ্বিগুণ চাপ পড়বে। আর সে হিসাবে একটি ছোট পরিবারে এক বছরে বিদু্যৎ বিল বাড়তে পারে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। আমরা মনে করি, বিদু্যতের দামের বিষয়টি এড়ানোর সুযোগ নেই। এছাড়া আমলে নেওয়া দরকার, সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি কমালেও বর্তমান ডলার মূল্য ও গ্রীষ্মের বর্ধিত বিদু্যতের চাহিদা মেটাতে তেল চালিত বিদু্যতের চড়া উৎপাদন ব্যয় সামগ্রিক ঘাটতি বাড়িয়ে দেবে, যা গ্রাহকের ওপর দ্বিগুণ চাপ তৈরি করবে। যদিও বিদু্যৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী তিন বছরে ১২ ধাপে বিদু্যতের দাম বাড়ানো হলে উৎপাদন ব্যয়ের কাছাকাছি চলে আসবে এবং গ্রাহকের ওপর চাপ তৈরি হবে না। অন্যদিকে ভর্তুকিও প্রায় শূন্য হয়ে আসবে।
আমরা বলতে চাই, গ্রাহকের দ্বিগুণ চাপের বিষয়টি আমলে নিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। স্মর্তব্য, বিদু্যতের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষের ব্যয় বাড়ে। আর এর প্রভাব পড়ে নানা ক্ষেত্রে। বিশেষ করে বিদু্যতের মূল্যবৃদ্ধিতে দুর্ভোগে পড়ে দেশের মানুষ। কেননা, এর ফলে দ্রব্যমূল্য বাড়ারও আশঙ্কা তৈরি হয়। পরিবহণ ভাড়াসহ নানা ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ে। ফলে বিদু্যতের দাম বাড়ার বিষয়টিকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া এবং সেই মোতাবেক উদ্যোগ গ্রহণ করা।
প্রকাশিত খবরে এটাও জানা গেছে, গত মার্চে এক বছরের ব্যবধানে মার্চে গ্রাহক পর্যায়ে বিদু্যতের দাম বাড়িয়েছে সরকার। প্রতি ইউনিট বিদু্যতের দাম গড়ে সাড়ে ৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। নতুন দর অনুসারে প্রতি ইউনিট বিদু্যতের দাম গড়ে বেড়েছে ৭০ পয়সা। নতুন দামে আবাসিক পর্যায়ে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদু্যৎ ব্যবহারকারীদের জন্য বেড়েছে ইউনিটপ্রতি ২৮ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিট ৪ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৬৩ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও গ্রাহকদের বিদু্যৎ বিল রিচার্জে প্রতি মাসে মিটার ভাড়া ও ট্যাক্স বাবদ গুনতে হচ্ছে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বলেও জানা যাচ্ছে। অন্যদিকে নতুন অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেটের বিষয়টিও সামনে এসেছে। কিন্তু এই হারে বিদু্যতের দাম বাড়ানো হলে দেশের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যেতে পারে। অন্যদিকে কেবল গ্রাহক পর্যায়ে বিদু্যতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি কমানোর যে পরিকল্পনা করা হচ্ছে তা অনেকটাই অসম্ভব বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে।
এছাড়া লোডশেডিংয়ের বিষয়টিও আমলে নিতে হবে। কেননা এটা ভুলে যাওয়া যাবে না যে, লোডশেডিং জনজীবনে কতটা বিরূপ প্রভাব ফেলে। একদিকে গরম, এর সঙ্গে আবার যদি লোডশেডিং তীব্র হয়- তবে তা কতটা দুর্ভোগ ও আশঙ্কার হতে পারে সেটি আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। লোডশেডিং হলে যেমন কর্মযজ্ঞে স্থবিরতা নেমে আসে, তেমনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। আর হঠাৎ করেই বিদু্যতের লোডশেডিং বাড়লে উৎপাদন খাতসহ সব ধরনের কর্মযজ্ঞে নতুন করে সংকট দেখা দেয়। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে লোডশেডিংয়ের প্রভাব বিবেচনায় রেখে করণীয় নির্ধারণ কিংবা এই সংকটকে কীভাবে দ্রম্নত নিরসন করা যায় সেই পথ খুঁজতে হবে এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, চলতি বছরে আরও তিনবার বিদু্যতের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে এবং সংশ্লিষ্টরা বলছেন গ্রাহকের চাপ দ্বিগুণ হবে, সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। একইসঙ্গে লোডশেডিং কতটা উদ্বেগজনক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে এই বিষয়টিও এড়ানোর সুযোগ নেই। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।