রোববার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফিরে আসা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই আমাদের সবার কান্ডারি, শেষ ভরসাস্থল ও আশ্রয়স্থল। আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জ্বল একটি আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। এটিই বর্তমান প্রজন্মের প্রত্যাশা।
হীরেন পন্ডিত
  ১৭ মে ২০২৪, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফিরে আসা

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর দেশ গভীর সংকটে নিমজ্জিত। দেশের এই অরাজকতা দূর করার লক্ষ্যে একটি প্রস্তাবনা ইন্দিরা গান্ধীর কাছে পেশ করা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যা, জেল হত্যা, আওয়ামী রাজনীতি নির্মূলকরণের বিরুদ্ধে সমগ্র বিশ্বজুড়ে যেখানে যত আওয়ামী লীগ অনুরাগী, রাজনৈতিক কর্মী, বুদ্ধিজীবী সাহিত্যিক আছেন তারা তাদের মতো করে রাজনৈতিকভাবে সবকিছু প্রতিহত করার চেষ্টা করা শুরু করেন।

১৯৮০ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ধীরে ধীরে আওয়ামী রাজনৈতিক আন্দোলনের কারণে অসাম্প্রদায়িকতার দিকে ধাবিত হয়। আওয়ামী লীগ নেতারাও তাদের ভীতিমূলক অবস্থান থেকে বেরিয়ে এসে মূল ধারার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার চর্চায় নিবেদিত হন। কিন্তু আওয়ামী লীগের হাল ধরবে কে? এ নিয়ে ছিল প্রত্যেকের দ্বিধা। হাল ধরার কান্ডারিও ছিল অনেকজন। তাদের অনেকেই সর্বজন শ্রদ্ধেয় ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করা হয়। এক পারিবারিক পরিবেশে শেখ হাসিনার নাম প্রথম প্রস্তাব আকারে ভারতের রাজনীতির এক দূরদর্শী ব্যক্তিত্ব পিএন হাকসারের কাছে তুলে ধরেন তখন ভারতে অবস্থানকারী মোনায়েম সরকার এবং সমমনা ব্যক্তিরা। শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব হওয়ায় তা সর্বমহলে গৃহীত হয় সর্বসম্মতিতে।

স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্রের হাতে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর কালো অন্ধকার গ্রাস করেছিল বাংলাদেশকে, সেই অন্ধকার তাড়াতে আলোর মশাল জ্বালিয়েছিলেন তিনিই প্রথম। সে মশাল, প্রাথমিক সংকট, সীমাবদ্ধতার পর দিকে দিকে আলোকিত করতে থাকে, শুরু হয় বাঙালির ও বাংলাদেশের রাহু মুক্তির পালা। সব আবর্জনা দূর করতে প্রভাতে যেমন বাঙালি একাকার হয়, প্রতিশ্রম্নতিতে সমৃদ্ধ হয়, তেমনি এক শুভ প্রতিশ্রম্নতির বাতাস বইতে দেখা যায় জননেত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরার দিন ১৯৮১ সালের ১৭ মে থেকে।

১৭ মে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪৩তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৮১ সালের এই দিনে ছয় বছর নির্বাসনে থাকার পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যের নির্মম হত্যাকান্ডের পর ঘাতকদের ষড়যন্ত্র আর অনিরাপত্তার কারণে পরিবারের সবাইকে হারানোর পরও দীর্ঘ ৬ বছর দেশে ফিরতে পারেননি তারা।

প্রতিকূলতার মাঝেই দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এক সময় চাঙা হয়ে ওঠেন, নতুন করে দেশ গড়ার প্রত্যয়ে বলীয়ান হয়ে ওঠেন। তখন শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই নেতাকর্মীরা কাউন্সিলের মাধ্যমে তাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করেন। ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে। প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। এরপর ২০০৮ সালে দ্বিতীয়, ২০১৪ সালে তৃতীয় ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে চতুর্থবার এবং ২০২৪ সালে ৫ম বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। শেখ হাসিনা সবচেয়ে দুঃসময়ে দলের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

তিনি গণতন্ত্রের সংগ্রামে সর্বদা লড়াই করেছেন। তিনি বারবার মৃতু্যর দ্বার থেকে ফিরে এসেছেন। তিনি ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে একটি জনপ্রিয় দল হিসেবে ক্ষমতায় এনেছেন এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করে যে অসম্ভব কাজটি সম্ভব করেছিলেন তা হলো বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার এবং পরে ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা। আর সেই সুযোগ এসেছিল বাঙালি জাতির আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।

স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্রের হাতে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর কালো অন্ধকার গ্রাস করেছিল, সেই অন্ধকার তাড়াতে প্রথম আলোর মশাল জ্বালিয়েছিলেন তিনি। সে মশাল, প্রাথমিক সংকট, সীমাবদ্ধতার পর দিকে দিকে আলোকিত করতে থাকে, শুরু হয় রাহু মুক্তির পালা। সব আবর্জনা দূর করতে প্রভাতে যেমন বাঙালি একাকার হয়, প্রতিশ্রম্নতিতে সমৃদ্ধ হয়, তেমনি এক শুভ প্রতিশ্রম্নতির বাতাস বইতে দেখা যায় তার দেশে ফেরার দিন থেকে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের সার্বিক কল্যাণ, বিকাশ, এবং মুক্তির লক্ষ্যে অগ্রণী হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি প্রমাণ করেছেন যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিকাশের জন্য তার বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার সততা, নিষ্ঠা, যুক্তিবাদী মানসিকতা, দৃঢ় মনোবল, প্রজ্ঞা এবং অসাধারণ নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বিশ্ব অঙ্গনে এক ভিন্ন উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং তিনি বিশ্ববিখ্যাত নেতা হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগ সর্বদা সর্বপ্রকার শোষণ, বঞ্চনা, অবিচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে সোচ্চার, রক্ষণাত্মক ভূমিকা পালন করেছে এবং অব্যাহত রেখেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে জনগণের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য কাজ করে। এই দলটি ক্ষমতায় থাকলে জনগণের ভাগ্য উন্নতি হয়। এই দলের ভিত্তি থেকে ৭৪ বছরের ইতিহাস সেই সত্যের সাক্ষ্য দেয়।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সাহসী কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে এখন আওয়ামী লীগ ১৫ বছর ক্ষমতায় রয়েছে এবং তিনি জনগণের কল্যাণে নিবেদিত হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার অদম্য শক্তি, সাহস, মনোবল এবং দৃঢ় নেতৃত্বে বিশ্ব অবাক করে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৯তম এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ২৩তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ একটি 'মধ্যম আয়ের দেশ' হিসেবে ঘোষিত হয়েছে ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হবে এবং ২০৪১ সালে একটি 'উন্নত দেশ' হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে তার বড় প্রমাণ হলো গত কয়েক বছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বর্তমান মাথাপিছু আয় ২,৫৫০। অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কয়েকটি শীর্ষদেশগুলোর মধ্যে একটি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪টি মাইলফলক দিয়েছেন প্রথমটি হলো ডিজিটাল বাংলাদেশ- যা ইতোমধ্যে একটি পর্যায়ে এসেছে, দ্বিতীয়টি ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জন করা, তৃতীয়টি ২০৪১ সালে একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার এবং চতুর্থটি ২১০০ সালের ডেল্টা পস্ন্যান বাস্তবায়ন। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্থপতি প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন।

চলিস্নশ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। এটি একটি অনন্য অর্জন এই ৪০ বছর তিনি শুধু যে আওয়ামী লীগের সভাপতি আছেন তা নয়, তার জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত এবং দলের একজন নেতাকর্মীও মনে করেন না যে, শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প আছে। এটি একজন রাজনৈতিক নেতার অসাধারণ প্রাপ্তি। আর সে কারণেই তারা মনে করে যে, শেখ হাসিনার বিকল্প একমাত্র শেখ হাসিনাই।

আওয়ামী লীগ সভাপতির সাফল্যের একটি বড় দিক হলো অর্থনৈতিক উন্নয়ন। তিনি স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে রূপ দিয়েছেন। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়, গড় আয়ু থেকে শুরু করে বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ বিশ্বের বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশকে মনে করা হয় উন্নয়নের রোল মডেল, এটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সম্ভব হয়েছে। আত্মমর্যাদা এবং নিজস্ব টাকায় পদ্মা সেতু। শেখ হাসিনা কেবল বাংলাদেশকে উন্নত এবং অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার একটি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেননি, বাংলাদেশকে একটা আত্মসম্মান মর্যাদায় নিয়ে গেছেন।

বিশ্বব্যাংক যখন বাংলাদেশের পদ্মা সেতু নিয়ে আপত্তি ও দুর্নীতির অভিযোগ করেছিল তখন প্রধানমন্ত্রী সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে নিজস্ব টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন যে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায়। শুধু পদ্মা সেতু নয়, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ বিভিন্ন দৃশ্যমান উন্নয়ন এখন বাংলাদেশকে আত্মমর্যাদার এক অনন্য জায়গায় নিয়ে গেছে যেটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে।

বাংলাদেশে যখন সংকট তীব্র হয়, যখন সবকিছু আবর্তিত হয় অনিশ্চয়তায়, বাংলার আকাশে কালো মেঘ জমে থাকে, তখন শেখ হাসিনাই আমাদের শেষ ভরসাস্থল হয়ে দাঁড়ান। একজন ব্যক্তি অদম্য সংকল্প এবং কঠোর নিষ্ঠার সঙ্গে ভয়ের কালো মেঘকে সরিয়ে দেন, দেশের মানুষ আশার আলো দেখে। যখনই মনে হয় যে সবকিছু শেষ হয়ে আসছে, তখন আমরা খারাপ সময়টির মুখোমুখি হই, তবেই একজন ত্রাণকর্তাই দক্ষতার সঙ্গে খারাপ দুঃস্বপ্নটি সরিয়ে ফেলেন তিনিই আমাদের প্রধানমন্ত্রী। তার পরিচয় প্রধানমন্ত্রী বা রাজনৈতিক নেতার চেয়ে বেশি। তিনি এক অদম্য সাহসী মানুষ। তিনি একজন যোদ্ধা ও একজন অভিভাবক। তিনি সাহসিকতার সঙ্গেই কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা করছেন, এখনো, এখন এটি বিশ্বের সেরা উদাহরণ এবং বিশ্ব নেতারা বিশ্বব্যাপী সংকট পরিচালনার জন্য তার উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন।

এই চার দশকে তিনি গণতন্ত্র, মানবাধিকার, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার জন্য লড়াই করেছেন। সংগ্রামের এই গতিপথ ছিল প্রতিকূল। শেখ হাসিনা, যিনি অলৌকিকভাবে ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলায় বেঁচে গিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে যাওয়ার জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ।

বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, জাইকা, গোল্ডম্যান শ্যাক্স, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, এইচএসবিসি, সিটি ব্যাংক এনএ, পিডবিস্নউসির পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে ডায়মন্ড, ইমার্জিং টাইগারসহ বিভিন্ন নামে ডাকা হচ্ছে। এর কারণেই ধারাবাহিকভাবে উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রিজার্ভ, রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়, রপ্তানি, মাথাপিছু আয়, সামাজিক নিরাপত্তা এবং অর্থনীতির অন্যান্য প্রধান সূচকে প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে চমক।

তথ্য অনুযায়ী স্বাধীনতা-উত্তর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা মাত্র ৫০১ কোটি টাকার এডিপির আকার চলতি অর্থবছরে ২ দশমিক ২৫ ট্রিলিয়ন টাকায় পৌঁছেছে। তখন মাথাপিছু আয় ১২৯ টাকা এখন ২৫৫৪ ডলার ছাড়িয়েছে। যে সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশের নিচে ছিল, এখন তা ৮ শতাংশে পৌঁছেছে। স্বাধীনতার পর বছরে, মাত্র ৩৪৮.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি পাঁচ দশকের মধ্যে ১১১ গুণ বেড়েছে ৩.৮৫ বিলিয়ন হয়েছে। প্রবাসী আয়- যা ৫৩ বছর আগে নামমাত্র ছিল, তা বছরে ২৫ বিলিয়নে পৌঁছেছে।

বাংলাদেশ বিশ্বের ধানের তৃতীয় বৃহত্তম উৎপাদনকারী মাছ, মাংস, ডিম এবং শাকসব্জিতে স্বাবলম্বী। অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলে মাছ উৎপাদনের বৃদ্ধির হারের তুলনায় বাংলাদেশ দ্বিতীয় এবং ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম অবস্থানে রয়েছে। আজ 'ডিজিটাল বাংলাদেশ'র সুবিধা শহর থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্র, মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ৩৯টি হাই-টেক পার্ক এবং আইটি গ্রাম নির্মিত হচ্ছে।

কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, আধুনিক প্রযুক্তি সবকিছুর অপূর্ব সমন্বয় ঘটাতে নতুন নতুন পরিকল্পনা, চিন্তাভাবনা করতে হবে। বাংলাদেশকে আমূল বদলে যাচ্ছে টেকসই উন্নয়নের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এ দেশ। দুর্বল, অনুন্নত, নড়বড়ে অবস্থা থেকে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। প্রচলিত অবকাঠামোর আধুনিক রূপান্তর সম্ভাবনার নতুন নতুন দিক উন্মোচন করছে প্রতিদিন। যেসব খাত কিংবা ব্যবসা আগে অবহেলিত অবস্থায় ধুঁকে ধুঁকে চলছিল সেগুলোতে নবজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। অমিত সম্ভাবনার হাতছানি এ দেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত, আগ্রহী করে তুলছে। অবহেলায়, অযত্নে লালিত সেই সম্ভাবনাময় খাতগুলো ক্রমেই জেগে উঠছে।

সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগ, দপ্তর, মন্ত্রণালয়গুলো সময়ে সময়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। ফলে সম্ভাবনার নতুন নতুন খাতের বিকাশ ঘটে চলেছে। সম্ভানাময় নতুন নতুন খাতগুলো বাংলাদেশের সমৃদ্ধি অর্জনে, অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বেশ শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের মানুষ কোনোভাবেই অক্ষম, দুর্বল, মেধাহীন নয়। তারা অনেক পরিশ্রম করতে পারে। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার নারী-পুরুষ যারা এর আগে বেকারত্ব, দারিদ্র্য আর অসহায়ত্বের বেড়াজালে নিজেদের বন্দি করে রেখেছিল, তারা এখন নিজের মেধা, বুদ্ধিমত্তা, শক্তি, সাহস, পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে সম্ভাবনার নতুন নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে নিজেই নিজের ভাগ্য নতুনভাবে গড়ে তুলছেন। এভাবে সবার সম্মিলিত উদ্যোগে পাল্টে যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকা, জনপদের চিত্র। সম্ভাবনার উজ্জ্বল চমক দু্যতি ছড়াচ্ছে দেশজুড়ে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ৫৩ বছরে বাংলাদেশের অর্জন অবিশ্বাস্য রকমের। বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশ বর্তমানে ৩৫তম স্থানে ওঠে এসেছে।

শিক্ষায় উন্নতি, যোগাযোগের অবকাঠামো, নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই বিতরণ, সামাজিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত, অসহায়, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সুরক্ষার সোশ্যাল সেফটি নেট সাপোর্ট প্রদান, স্বামী নিগৃহীত নারীদের সহযোগিতা, অটিজম, প্রধানমন্ত্রীর সরকারের প্রধান উদ্যোগসমূহ বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয় বীর হিসেবে মর্যাদা প্রদান, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, নারীর ক্ষমতায়ন এবং বিভিন্ন সেক্টরের সামগ্রিক উন্নয়ন তার সরকারেরই অবদান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই আমাদের সবার কান্ডারি, শেষ ভরসাস্থল ও আশ্রয়স্থল। আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জ্বল একটি আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। এটিই বর্তমান প্রজন্মের প্রত্যাশা।

হীরেন পন্ডিত : প্রাবন্ধিক ও গবেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে