খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ১৫ মে ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
উচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে পড়েছে দেশ। জিম্মি হয়ে পড়েছে দেশের জনগণ। গত অর্থবছরের পুরো সময়ে ৯ শতাংশের ওপরে ছিল বাংলাদেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি আবার ১০ শতাংশের ওপরে উঠল। গত মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ১০ দশমিক ২২ শতাংশে উঠেছে। এর আগের মাসে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। তার আগে গত বছরের নভেম্বর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অর্থাৎ চার মাস পর খাদ্য মূল্যস্ফীতি আবার দশ শতাংশ ছাড়াল। সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। সেখানে এই চিত্র পাওয়া গেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি এখন অর্থনীতির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ্লেষকরা বলেন, মূল্যস্ফীতি এক ধরনের কর- যা ধনী-গরিব-নির্বিশেষে সবার চাপ বাড়ায়। আয় বৃদ্ধির তুলনায় মূল্যস্ফীতি বেশি বেড়ে গেলে গরিব ও মধ্যবিত্তের সংসার চালাতে ভোগান্তি বাড়ে। এমনিতেই জিনিসপত্রের দাম বেশ চড়া। তার সঙ্গে চিকিৎসা, পরিবহণসহ খাদ্যবহির্ভূত খাতেও খরচ বেড়েছে। সব মিলিয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। মূল্যস্ফীতি কমানোর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু কী করলে সেটি কমবে, সেভাবে নীতি গ্রহণ করলে বিশ্বাসযোগ্যতা থাকবে। এরপর গত দশকে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি দেখা গেছে ২০১১-১২ অর্থবছরে- যার হার ছিল ১০ দশমিক ৬২ শতাংশ। আর সর্বনিম্ন ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ ছিল ২০১৬-১৭ অর্থবছরে। চলতি দশকের প্রথম দুই অর্থবছর ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৫৬ ও ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ। এরপর ২০২২-২৩ অর্থবছরেই তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। বিশ্ববাজারে পণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে অনেক দেশে মূল্যস্ফীতি ঘটে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক ও মূল্য হ্রাসের কারণে অনেক দেশে পর্যায়ক্রমে নেমে আসে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি উল্টো আরও বাড়তে থাকে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির ওই ধারা অব্যাহত আছে এখনো। মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্যে সুদের হার ক্রমান্বয়ে বাড়ানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৯ শতাংশ সুদ হারের ক্যাপ তুলে নেওয়া হয়। তারপরেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে না। বাংলাদেশের বর্তমান মূল্যস্ফীতির পেছনে স্থানীয় কারণের চেয়ে বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে বেশি দায়ী করছে সরকার। বলা হচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক জ্বালানির বাজারে অস্থিরতা ও ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে। ওই সময় প্রায় একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও বিশ্বের অন্যান্য দেশেও মূল্যস্ফীতি বাড়তে শুরু করে। এরপর ২০২২ সালেই বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করে। যদিও বাংলাদেশের বাজারে এর তেমন কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। এক পর্যায়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসা শুরু হলেও ভিন্ন চিত্র বাংলাদেশের। আমরা মনে করি, এর জন্য দায়ী বাজার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরাতে না পারা এবং বাজার সিন্ডিকেট। বাজার সিন্ডিকেট একেক সময় একেক পণ্যের দাম বাড়িয়ে জনসাধারণের পকেট কাটে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে হলে দ্রম্নত বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য।