গাছ লাগাই পরিবেশ বাঁচাই

পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর মানুষ ও সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনুন। পরিবেশ বাঁচান, দেশ বাঁচান, সমাজ রক্ষা করুন। সব ধরনের রাজনীতির প্রেসার মুক্ত এই আইনের বাস্তবায়ন থাকা চাই।

প্রকাশ | ১৫ মে ২০২৪, ০০:০০

মাহমুদুল হক আনসারী
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে গাছ লাগানোর বিকল্প নেই। আমাদের চারপাশ গাছপালা শূন্য হয়ে যাচ্ছে। বাড়ির চারপাশে থাকা অনেক প্রাকৃতিক পরিবেশকে আমরা ধ্বংস করে ফেলছি। পুকুর ভরাট হয়ে যাচ্ছে। খালসমূহের চারদিক দখল হচ্ছে। পাহাড়ের গাছপালা উজাড় করে ফেলছে। সারাদেশের বন বিভাগের সামনে এসব বিলুপ্ত হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর আছে, কিন্তু পরিবেশ রক্ষা পাচ্ছে না। প্রাকৃতিক যেই পরিবেশটি আলস্নাহ আমাদের জন্য সৃষ্টি করে দিয়েছেন সেই পরিবেশটিও আমরা রক্ষা করছি না। দেশের সরকার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে নানা দপ্তর সৃষ্টি করেছে। তারা এসব দেখার কথা। কিন্তু তারা যেভাবে এসব বিষয় দেখার কথা ছিল সেইভাবে দেশবাসী সেবাটি পাচ্ছে না। তাদের কাছে কোনো নাগরিক অভিযোগ করলে তাদের দৌড়াদৌড়ি দেখা যায়। আর ততদিনে সেই বাগান পাহাড় বন শেষ করে ফেলে। যাব, যাচ্ছি, করব, করছি এসব শুনতে হয় অভিযোগকারীদের। কোনো ক্ষেত্রে অভিযোগকারীকে ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ৪নং জলদি পৌরসভার সাবেক কমিশনার যুবলীগ কর্মী আজগর হোসেন তৎকালীন এমপি মোস্তাফিজের সহযোগিতায় পৌর এলাকার বনজঙ্গল, গাছ বিগত ১০ বছরে শেষ করে ফেলেছে। আজগর হোছেন ওলামা লিগের কর্মী আক্তার হোছাইন, তাদের ১০-১২ জনের বনখেকু বাহিনী বাঁশখালী উপজেলার জলদি, বৈলছড়ি, চাম্বল এলাকার সব গাছ বন পাহাড় ন্যাড়া করে কোটি কোটি টাকার মালিক। ২০২৩ সালের পূর্বের ১০ বছরে এমপি মোস্তাফিজের সময়ে স্থানীয় প্রশাসন ওই ভূমিদসু্য সরকারি জমি পাহাড় পরিবেশ ধ্বংসকারীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ গ্রহণ করত না। পরিষ্কারভাবে কর্তৃপক্ষ বলত এমপির নিষেধ আছে। এভাবে আজগর ও মাওলবি আক্তার বাহিনী বাঁশখালীর মূল্যবান বন, পাহাড়, সরকারি খাস জমি দখলের মাধ্যমে শত কোটি টাকার মালিক। এক সময়ের তাদের শূন্য হাত এখন সম্পদের পাহাড়। নান্দনিক ও পরিবেশের অপূর্ব লীলাভূমি বাঁশখালীর প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরে পেতে চায় এ অঞ্চলের মানুষ। আবার সেই পাহাড় জমি ফেরত নিয়ে বাশঁখালীর পরিবেশ ফিরে আসুক। স্থানীয় প্রশাসন জনস্বার্থেও পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসবেন বলে আশা রাখছেন পরিবেশবাদীরা। ন্যাড়া পাহাড়গুলোতে গাছ লাগিয়ে আবার সতেজ করা হোক। সারাদেশের বনজসম্পদ রক্ষা করা হোক। চট্টগ্রামে সীতাকুন্ড, আকবর শাহ, বায়োজিদ, হাটহাজারী এলাকার পাহাড় এখন চোখে পড়ে না। এখানে সব দালান আর বাড়িঘর। হাজার হাজার মানুষের বসতি গড়ে উঠেছে। সেখানে সিন্ডিকেট। তাদের সঙ্গে ওপরে নিচে সব স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নাকি সম্পর্ক। ফলে নির্বিঘ্নে সেখানে ইচ্ছেমতো পাহাড় ও পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমে চট্টগ্রামের এসব পাহাড় নিয়ে বহু বার প্রতিবেদন হয়েছে। কয়েকদিন প্রশাসন নড়েচড়ে বসলেও আবার সেই পুরনো অবস্থা দেখা যায়। চট্টগ্রামে প্রতি মাসে শত শত পাকা দালান তৈরি হচ্ছে। জমির অবস্থান কমছে। ফসলের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। কলকারখানা বাড়ছে। মিলের ধোঁয়া বাতাসে মিশে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সেই তুলনায় প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার উদ্যোগ নেই বলা চলে। মানবসমাজের রক্ষার জন্য আমাদের চারপাশের পরিবেশ রক্ষার বিকল্প নেই। গাছ কাটা, পুকুর নদী ভরাট করতে দেওয়া যাবে না। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর আশপাশ রক্ষা করতে হবে। এই নদীর নাব্য ফিরে পেতে চাই। নগরবাসীর বাসাবাড়ির উচ্ছিষ্ট নদীতে ফেলা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এসব নদী খাল ভরাট করে গড়ে ওঠা দোকান, ঘর, মার্কেট উচ্ছেদ করতে হবে। এসব সরকারি জমিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এলাকায় বিদু্যৎ পানির লাইন কীভাবে পায়, সেখানেও জনগণের প্রশ্ন থেকে যায়। যার যার অবস্থান থেকে গাছ লাগাই। ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খালি জায়গা গাছ লাগিয়ে পরিবেশ বাঁচাই নিজে বাঁচি। স্কুল মাদ্রাসা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গাছ লাগানোর ও পরিবেশ রক্ষার ওপর গুরুত্ব বহন করে প্র্যাকটিকেলভাবে ছাত্রদের মানসিকভাবে শিক্ষা প্রদান করি। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর মানুষ ও সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনুন। পরিবেশ বাঁচান, দেশ বাঁচান, সমাজ রক্ষা করুন। সব ধরনের রাজনীতির প্রেসার মুক্ত এই আইনের বাস্তবায়ন থাকা চাই। মাহমুদুল হক আনসারী : সংগঠক, গবেষক, কলামিস্ট