শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১

কিডনি কেনাবেচা চক্র রুখতে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

  ১৪ মে ২০২৪, ০০:০০
কিডনি কেনাবেচা চক্র রুখতে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

কিডনি কেনাবেচা চক্র সক্রিয় এবং তাদের অপতৎপরতা অব্যাহত থাকলে তা কতটা ভয়ানক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, কিডনি কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত আন্তঃদেশীয় দালালচক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডি ২/এ রোডের ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আমরা মনে করি, যে কোনো মূল্যে কিডনি কেনাবেচা চক্রের অপতৎপরতা রুখতে হবে একই সঙ্গে দোষীদের আইনের আওতায় আনা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে।

প্রসঙ্গত, রবিন খান নামে এক ভুক্তভোগীর দেওয়া এজাহার থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে এক বন্ধুর সঙ্গে চা খেতে খেতে সাংসারিক অভাব-অনটন নিয়ে কথা বলছিলেন তিনি। তাদের পাশে বসে থাকা মাছুম এসব কথা শুনে জানান তিনি সাহায্য করতে পারবেন। ভারতে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে ১৫ দিন রবিনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ রেখে তাকে ভারত যেতে রাজি করান সে। পরে রবিনকে ধানমন্ডির ল্যাবএইডে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান মাছুম। সেখানে মামলার গ্রেপ্তার হওয়া অন্য আসামি রাজু, শাহেদ ও আতাউরের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। পাসপোর্ট-ভিসা কার্যক্রম শেষে গত বছর ২২ ডিসেম্বর রবিন ইন্ডিগো এয়ারলাইনসের একটি বিমানে ভারতের দিলিস্ন পৌঁছান। সেখানে একই চক্রের দুই সদস্য রবিনকে দিলিস্নর ফরিদাবাদে নিয়ে যান। সেখানে একটি বাসায় ২০-২৫ দিন আটকে রেখে কিডনি বিক্রির জন্য রবিনের ওপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করেন তারা। মানসিক চাপ, অন্যদিকে টাকা-পয়সার প্রলোভন দেখিয়ে অবশেষে এক রকমের বাধ্য করে ভারতের গুজরাটের মুক্তিনগরের একটি হাসপাতালে অপারেশনের মাধ্যমে স্থানীয় ডাক্তারের সাহায্যে রবিনের কিডনি বিক্রি করে দেয় চক্রটি।

বলা দরকার, এমনটিও জানা যাচ্ছে, যখন যেমন দাম পায় তার ওপরই ভিত্তি করে কিডনি বেচাকেনা হয়। তবে বর্তমানে এক একটি কিডনির সর্বনিম্ন মূল্য ২৫ লাখ টাকা। অনেক ক্ষেত্রে প্রাপ্যতার ওপর ভিত্তি করে এ দাম ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করে। এই আলোচনাও সামনে এসেছে, সমাজের নিম্নবিত্ত মানুষ এ চক্রটির প্রধান টার্গেট। এদের লাখ খানেক টাকা দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এ চক্রটি। এটি একটি আন্তঃদেশীয় দালালচক্র। ভারতের কলকাতা ও গুজরাটে এদের সংঘবদ্ধ সদস্যরা আছে। ডিএমপির পক্ষ থেকে জানা যায়, পাচার হওয়া কিডনি ভারতীয় আইন অনুযায়ী ভারতের কোনো নাগরিককে দেওয়া হয় না। এসব কিডনি বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে চিকিৎসা নিতে যান তাদের শরীরেই প্রতিস্থাপিত হয়।

আমরা বলতে চাই, এর আগেও নানা সময় কিডনি কেনাবেচার বিষয়টি সামনে এসেছে। ফলে সামগ্রিক বিষয় এড়ানোর সুযোগ নেই। বলা দরকার, নিজের যে ক্ষতি হয়েছে তা যেন অন্য কারও না হয় সেজন্য রবিন ধানমন্ডি থানায় চক্রটির বিরুদ্ধে মামলা করে। জানা যায় বর্তমানে কিডনি হারিয়ে কর্মক্ষমতাহীন অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছেন রবিন। কিডনি অপারেশনের ফলে তার পেটে ৫ ইঞ্চি পরিমাণ একটি কাটা দাগ আছে। একটি কিডনি হারিয়ে বর্তমানে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায় দিন কাটছে তার। ফলে আমলে নেওয়া দরকার, এ ধরনের চক্রের খপ্পরে পড়লে কী পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এ ছাড়া কিডনি কেনাবেচার মতো ভয়ংকর কর্মকান্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, কিডনি কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত আন্তঃদেশীয় দালালচক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ধানমন্ডি থানা পুলিশ- ফলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ এবং আরও কোনো চক্র সক্রিয় আছে কী না তা খতিয়ে দেখতে হবে। সহজ-সরল মানুষকে প্রলোভান দেখানোসহ নানা কৌশলে এ ধরনের ভয়ংকর তৎপরতা চালাবে- এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। মানুষের সচেতনতা বাড়াতে পদেক্ষপ গ্রহণ করতে হবে। এ ধরনের চক্রগুলোকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা এবং সব ধরনের অপতৎপরতা রুখতে সর্বাত্মক উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে