শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১

সাইবার অপরাধ, অপরাধী এবং প্রতিকার

ইন্টারনেট ছাড়া আমরা আমাদের একটি মুহূর্তও কল্পনা করতে পারি না। ইন্টারনেট এখন আমাদের সেরা বন্ধুতে রূপান্তরিত হয়েছে। তাই আমাদের এই সেরা বন্ধুর মাধ্যমে সাইবার অপরাধীরা যাতে আমাদের ক্ষতি করতে না পারে, সেদিকে আমাদের সব সময় বিশেষভাবে সজাগ থাকতে হবে।
মো. জাহিদুল ইসলাম
  ১৪ মে ২০২৪, ০০:০০
সাইবার অপরাধ, অপরাধী এবং প্রতিকার

তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবী একটি গেস্নাবাল ভিলেজে রূপান্তরিত হয়েছে। ইন্টারনেট আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মকে করে দিয়েছে সহজ। আমরা আমাদের ব্যক্তিগত কাজ থেকে শুরু করে অফিসিয়াল কাজকর্ম, আর্থিক লেনদেনসহ অতিগুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে ইন্টারনেট ব্যবহার করছি। অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের আধুনিক টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ইচ্ছাকৃতভাবে কারো (নারী-পুরুষ) মানসিক এবং শারীরিক ক্ষতি করার জঘন্যতম উদ্দেশ্যই হচ্ছে সাইবার অপরাধ। অর্থাৎ তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনলাইনে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয় তাকে সাইবার অপরাধ বলা হয়। অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ মানুষের জীবন ব্যবস্থাকে সহজ এবং অনেকটাই সহজ এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলেছে। প্রতিনিয়ত আধুনিক প্রযুক্তির নতুনত্ব আবিষ্কার অনেক কিছুকেই করেছে সহজলভ্য। তেমনিভাবে প্রযুক্তির কিছু ইতিবাচক প্রভাবের পাশাপাশি নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন অনলাইন পস্নাটফর্ম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়রানির ঘটনাও বেড়েছে কয়েকগুণ। মূলত ইন্টারনেটের সাইবার পরিসরকে ব্যবহার করার মাধ্যমে সাইবার অপরাধের বিভিন্ন দিক রয়েছে। বিশেষ করে আইডি হ্যাকিং, উগ্র ও বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য/অডিও/ভিডিও প্রচার, ফেক অ্যাকাউন্ট তৈরি, সাইবার বুলিং, শারীরিক অথবা মানসিকভাবে হেনস্তা করা, গোপন নথি ও প্রশ্নপত্র ফাঁস, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি, অনলাইন মাল্টি লেভেল মার্কেটিং প্রতারণা ও গ্যাম্বলিং, ই-মেইল বা সামাজিক মাধ্যমে হুমকি প্রেরণ, চাঁদাবাজি, বস্ন্যাকমেইলিং, পর্নোগ্রাফি, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তথ্য চুরি, ওয়েবসাইট হ্যাকিং, অনলাইনে প্রতারণা, মানব পাচার, মাদকসহ অন্যান্য অপরাধের জন্য সাইবার পরিসরকে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা ইত্যাদি সাইবার অপরাধ জগতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। বর্তমান আধুনিক সমাজে অনেকেরই হয়রানি বা প্রতারণার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিশেষ করে নারীরা প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছেন সাইবার বুলিংয়ের। এর পাশাপাশি পুরুষরাও পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সম্মানহানিসহ আর্থিক প্রতারণার শিকারও হচ্ছেন অনেকেই। এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমরা অনেকেই করণীয় বুঝতে পারি না। আমাদের একটু সতর্কতা এবং সাবধানতা আমাদের এ ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাইবার অপরাধ মূলত কম্পিউটার এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সঙ্গে সম্পর্কিত। আবার প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে সফটওয়্যার ও অ্যাপসের মাধ্যমে মোবাইল ফোন নম্বর স্পুফিং করা হচ্ছে। কল স্পুফিং হলো মোবাইল ফোনের প্রকৃত নম্বর গোপন রেখে অন্য ব্যবহারকারীর নম্বর দিয়ে কল করার প্রযুক্তি। কম্পিউটারের ভাষা ম্যাশিন ল্যাংগুয়েজ বা বাইনারি হিসেবে পরিচিত। কম্পিউটার ০ এবং ১ ছাড়া কোনো কিছু বোঝে না। অর্থাৎ ০ (শূন্য) এবং ১ (এক) হচ্ছে কম্পিউটারের বাইনারি ভাষা। আর এর মধ্যে যাবতীয় সব তথ্যপ্রযুক্তি লুকায়িত থাকে। যত প্রযুক্তি আবিষ্কার অথবা হ্যাকিং হোক সবকিছুই এই বাইনারি ০ (শূন্য) এবং ১ (এক) এটার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। যখন কোনো প্রোগ্রাম লেখা হয় বা যে কাজই করা হয় তা কম্পাইলার নামক একটি অনুবাদক প্রোগ্রাম বাইনারিতে রূপান্তর করে কম্পিউটারকে জানায়। এরই ফলে আমরা কম্পিউটার হতে বিভিন্ন ধরনের আউটপুট পেয়ে থাকি। সাইবার অপরাধীরা হলো সেসব ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের দল যারা অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজিটাল সিস্টেম বা নেটওয়ার্কে সংবেদনশীল কোম্পানির তথ্য বা ব্যক্তিগত ডেটা চুরি করার উদ্দেশ্যে এবং মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে আইনবিরোধী ধ্বংসাত্মক ঘৃণিত কার্যকলাপ করে। এদিকে সাইবার অপরাধীদের জন্য ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের একটি অংশ হলো ডার্ক ওয়েব। সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছে এটি অপ্রবেশযোগ্য। সাইবার হামলাকারী থেকে শুরু করে হ্যাকারদের বিচরণই এখানে সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। ডার্ক ওয়েবকে বলা হয় অপরাধ ও অপরাধীদের আস্তানা। মূলত নিষিদ্ধ ও বেআইনি কাজের জন্য ব্যবহার করা হয় ডার্ক ওয়েব। সাধারণ ব্যক্তি থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানসহ বিখ্যাতদের তথ্য এখানে লেনদেন হয়ে থাকে। ডার্ক ওয়েব ব্যবহার বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রচলিত ব্রাউজার ও সার্চ ইঞ্জিনের কাছে ডার্ক ওয়েবের কোনো অ্যাকসেস নেই। এর জন্য আলাদা ব্রাউজার ও সার্চ ইঞ্জিন রয়েছে। ডার্ক ওয়েব হচ্ছে ডিপ ওয়েবের গভীরে আরও একটি লুকায়িত অংশ। সাধারণ সাইটে কেউ ব্রাউজ করলে আইপি অ্যাড্রেসের মাধ্যমে তাকে ট্রেস করা সম্ভব। কিন্তু ডার্ক ওয়েবে তা সম্ভব নয়। এই ওয়েব অ্যাকসেসের জন্য আলাদা কনফিগারেশনের সফটওয়্যার প্রয়োজন পড়ে। সাইবার ক্রাইম নির্মূল এবং হ্যাকারদের হাত থেকে প্রতিরক্ষার জন্য ইথিক্যাল হ্যাকার তৈরি করার পাশাপাশি আমাদের ব্যক্তিগতভাবে সতর্ক হওয়া খুবই জরুরি। বর্তমানে ইন্টারনেটের সবচেয়ে বড় অপব্যবহার হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং এখানেই সবচেয়ে বেশি সংঘটিত হচ্ছে সাইবার অপরাধ। অনলাইনে কাজের প্রয়োজনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাশাপাশি আমাদের অনেক ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। আমরা অনেকেই একাধিক অ্যাকাউন্টে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে থাকি। যা মোটেও নিরাপদ নয়। এই জন্য অবশ্যই অক্ষর ও সংখ্যার সমন্বয়ে কমপক্ষে আট সংখ্যার শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। ভালো পাসওয়ার্ডে একগুচ্ছ শব্দের সঙ্গে সঙ্গে নাম্বার, কিছু সংকেত এবং শব্দগুলো যেন স্বাভাবিক ডিকশনারি ওয়ার্ড না হয়ে অন্য কিছু হয় তেমনটিই কাম্য। আরেকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অ্যাপ ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা। মুঠোফোনে নতুন অ্যাপ নামানোর সময় ব্যবহারকারীদের বেশ কিছু বিষয়ে অনুমতি দিতে হয়। নতুন অ্যাপটি মুঠোফোনের কোন কোন যন্ত্র ব্যবহারের অনুমতি নিচ্ছে সতর্কতার সঙ্গে তা খেয়াল রাখতে হবে। অনেক ক্ষতিকর অ্যাপ রয়েছে যা গোপনে ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করে নেয়। এ জন্য অপরিচিত বা নামহীন প্রতিষ্ঠানের তৈরি অ্যাপ ব্যবহার না করাই উত্তম। সন্দেহজনক মনে হলে অ্যাপটি মুঠোফোন থেকে মুছে ফেলতে হবে। এদিকে অপারেটিং সিস্টেম ও ব্রাউজারে থাকা নিরাপত্তা ত্রম্নটিগুলো সমাধান করেই হালনাগাদ সংস্করণ উন্মুক্ত করা হয়। অনলাইনে নিরাপদে থাকার জন্য সব সময় হালনাগাদ সংস্করণের অপারেটিং সিস্টেম ও ব্রাউজার ব্যবহার করতে হবে। ওয়েবসাইটের সাইবার হামলা থেকে নিরাপদ থাকতে হলে এইচটিটিপিএস ব্যবহারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যেসব ওয়েবসাইটের ঠিকানা এইচটিটিপিএস দিয়ে শুরু হয় সেগুলোতে তথ্য বেশি নিরাপদ থাকে। এইচটিটিপিএস হলো হাইপার টেক্সট ট্রান্সফার প্রটোকলের নিরাপদ সংস্করণ। এইচটিটিপিএসের 'এস' দিয়ে ওয়েবসাইটটিকে নিরাপদ বোঝানো হয়। এদিকে ফিশিং হামলার মাধ্যমে ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রলোভনে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তথ্য হাতিয়ে নেয় সাইবার অপরাধীরা। এ জন্য ব্যাংক বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে হঠাৎ কোনো বার্তা পেলে সঙ্গে সঙ্গেই ই-মেইলে ক্লিক করা যাবে না। এক্ষেত্রে প্রেরকের ই-মেইল ঠিকানার সঙ্গে আমাদের (আমরা যারা ব্যবহারকারী) কাছে থাকা সেই প্রতিষ্ঠানের ই-মেইল ঠিকানা মিলে কি না তা ভালোভাবে যাচাই করতে হবে। এছাড়া সন্দেহজনক কোনো ই-মেইলের সঙ্গে থাকা ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট বা পিডিএফ ফাইল না খোলাই ভালো। কারণ এসব ফাইলের মাধ্যমে আমাদের কম্পিউটার বা মুঠোফোনে ভাইরাস প্রবেশ করিয়ে দিয়ে তথ্য চুরি করতে পারে সাইবার অপরাধীরা। আমরা অনেকেই ফ্রি ওয়াইফাই জোন পেলে অনেকটাই না বুঝে বোকার মতো আনন্দিত হয়ে যাই। আর আমরা অনেকেই এই ধরনের ফ্রি ওয়াইফাই জোনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন- ব্যাংক একাউন্ট চেক করা, মেইলের আদান-প্রদান করাসহ অনেক গোপনীয় এবং জরুরি কাজ করে থাকি। এই ধরনের কাজগুলো করা থেকে বিরত থাকা দরকার। কারণ এই ধরনের কাজের মাধ্যমেও আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হতে পারে যখন-তখন। এই অবস্থায় হ্যাকাররা কোনো ধরনের পাসওয়ার্ড ছাড়াই আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে নিতে পারে। ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনলাইনে সুরক্ষিত থাকতে তারহীন ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। গণওয়াইফাই ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রবেশ এবং ব্যক্তিগত তথ্য বিনিময়ে সতর্ক থাকতে হবে। ভ্রমণের সময় যন্ত্রের ওয়াইফাই এবং বস্নুটুথ সংযোগ বন্ধ করে রাখতে হবে। অনেক সময় অপরিচিত কোনো সাইটে লগইন করার জন্য আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে লগইন করতে হয়। এক্ষেত্রে আমাদের যথেষ্ট সাবধান থাকতে হবে। আমরা যদি না বুঝে হঠাৎ করে কোনো সাইটে লগইন করে এবং সেখানে দেওয়া লিঙ্কে প্রবেশ করি তাহলেও আমরা হ্যাকিংয়ের শিকার হতে পারি। তাই অপরিচিত কোনো সাইটে লগইন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বর্তমানে আমাদের সবকিছুই এখন অনলাইনভিত্তিক হয়ে গেছে। অনলাইননির্ভর এসব কাজ করার জন্য বেড়েছে ক্লাউডভিত্তিক সেবা আর অ্যাপের ব্যবহার। এদিকে এসব লক্ষ্য করে সাইবার অপরাধীরাও তৎপর হয়ে উঠেছে। বর্তমানে তাই বাস্তব জগতের মতো অনলাইন পরিসরেও এখন নিরাপদ থাকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই ডিজিটাল জগতে সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হবে। এজন্য তথ্য সুরক্ষিত রাখতে কিছু কাজ অবশ্যই করতে হবে আবার কিছু কাজ কখনোই করা যাবে না। কখনোই নিজের নাম, জন্মদিন- এ ধরনের তথ্য দিয়ে পাসওয়ার্ড তৈরি করা যাবে না। হ্যাকাররা এখন ব্যবহারকারীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করে অনলাইনে হামলা চালায়। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। পাসওয়ার্ড যত জটিল হবে ততই এটি শক্তিশালী হবে। ক্লাউড চালু হওয়ার ফলে প্রয়োজনীয় এবং ব্যক্তিগত নানা তথ্য এখানে ইন্টারনেটের এই ভান্ডারে জমা রাখা হয়। তবে সংবেদনশীল তথ্য ক্লাউডে জমা রাখার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ কোনো কারণে সাইবার অপরাধীরা ক্লাউডে প্রবেশ করলে এসব তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকি তৈরি হবে। ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকতে হবে। অনিরাপদ ওয়েবসাইটে ঢোকা যাবে না। ওয়েবসাইট খোলার আগে ওয়েব ঠিকানা বা ইউআরএল যাচাই করতে হবে। ইউআরএলে তালার চিহ্ন (লক আইকন) রয়েছে কি না তা দেখে নিতে হবে। অবিশ্বস্ত উৎস থেকে সফটওয়্যার নামানো যাবে না। এমনকি গুগল পেস্ন স্টোর বা অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর ছাড়া অ্যাপ নামানোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। অনলাইনে নিরাপদ থাকতে পাসওয়ার্ড বা তথ্য চুরি হয়ে যাওয়ার পরও নিরাপদ থাকার জন্য টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ব্যবহার করতে হবে। যেসব সাইটে এটি চালুর সুবিধা আছে সেখানে টুএফএ কার্যকর করে দিতে হবে। যদি সেটি চালু না থাকে তাহলে সহজেই প্রবেশ করা সম্ভব হবে। টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন অ্যাকাউন্টে প্রবেশের জন্য পাসওয়ার্ড ও মেসেজে আসা কোড দুটোই ব্যবহার করতে হয়। এতে বাড়তি সুরক্ষা যোগ হবে এবং অনলাইন অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত থাকবে। এছাড়া মুখাবয়ব, আঙুলের ছাপ ইত্যাদি আধুনিক সব ইলেকট্রনিক ডিভাইস এই সাইবার নিরাপত্তার আওতায় পড়ে। আমাদের সাইবার নিরাপত্তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত প্রতিটি ডিভাইসের নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। সাইবার সিকিউরিটি মূলত ডিজিটাল জগতের তথ্য ও নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। আর তাই ডিজিটাল জগতের যেসব কর্মকান্ডের মাধ্যমে নেটওয়ার্কের সব তথ্যের সিকিউরিটি বা নিরাপত্তা দেওয়া হয় তাই সাইবার নিরাপত্তার বা সাইবার সিকিউরিটি। সাইবার নিরাপত্তা হলো সাইবার আক্রমণ থেকে নেটওয়ার্ক, ডিভাইস এবং প্রোগ্রামগুলোকে সুরক্ষিত এবং পুনরুদ্ধার করার প্রক্রিয়া। এটি মূলত বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস এবং পরিষেবাগুলো (যেমন: কম্পিউটার সিস্টেম, নেটওয়ার্ক, সফটওয়্যার এবং ব্যবহারকারীর ডেটা) সুরক্ষার জন্য ব্যবহৃত প্রক্রিয়া এবং প্রযুক্তি। ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল অফ সার্ভিস (ডিডিওএস) হলো কোনো কম্পিউটার সিস্টেমের কোনো রিসোর্স বা সেবার প্রকৃত ব্যবহারকারীদের বাধা দেওয়ার একটি কৌশল। কোনো কম্পিউটার বা সিস্টেম বা ইন্টারনেট ওয়েবসাইটে এই আক্রমণ চালানোর মাধ্যমে ওই সিস্টেম বা সাইটের যথাযথ কার্যক্রমকে ধীরগতির বা অনেক ক্ষেত্রে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই সাইবার হামলা মূলত নেটওয়ার্কিং সার্ভার এবং ওয়েবসাইটে করা হয়। এ ধরনের সাইবার হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ফায়ারওয়াল ইন্সটল করা এবং ডিভাইস বা সার্ভারে ট্রাফিক আসা এবং যাওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা প্রণয়ন করতে হবে। এর পাশাপাশি শক্তিশালী পেইড এনটি-ভাইরাস ব্যবহার করতে হবে। আন্ট্রাস্টেড সোর্স থেকে পাওয়া ই-মেইল না খোলা থেকে বিরত থাকতে হবে। অপরিচিত কারোর ই-মেইল না খোলার পাশাপাশি পরিচিতদের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও আরও অনেক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে যার মাধ্যমে সাইবার অপরাধীরা আমাদের বিভিন্নভাবে ক্ষতি সাধন করতে পারে। প্রযুক্তি আরও যতই সামনের দিকে আগাবে নতুন নতুন সাইবার অপরাধীরা তত উন্নত ধরনের আপরাধ জগতে প্রবেশ করবে। এসব বিষয়ে আমাদের সব সময় সচেতন থাকতে হবে। বাসা থেকে শুরু করে মহাকাশে নাসার গবেষণা পর্যন্ত সবকিছুর সঙ্গেই ইন্টারনেট ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে।

ইন্টারনেট ছাড়া আমরা আমাদের একটি মুহূর্তও কল্পনা করতে পারি না। ইন্টারনেট এখন আমাদের সেরা বন্ধুতে রূপান্তরিত হয়েছে। তাই আমাদের এই সেরা বন্ধুর মাধ্যমে সাইবার অপরাধীরা যাতে আমাদের ক্ষতি করতে না পারে, সেদিকে আমাদের সব সময় বিশেষভাবে সজাগ থাকতে হবে।

মো. জাহিদুল ইসলাম : কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে