শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১

বজ্রপাতে মৃতু্য

প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে
  ১২ মে ২০২৪, ০০:০০
বজ্রপাতে মৃতু্য

বজ্রপাতে একের পর এক মৃতু্যর ঘটনা ঘটছে। সৃষ্ট পরিস্থিতি এমন- যেন এটি এক ধরনের দুর্যোগ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বজ্রপাতে একের পর এক ঝরছে প্রাণ- এটা কতটা ভয়ানক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দেশে বজ্রপাতে গত ১ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত ৩৮ দিনেই ৭৪ জনের মৃতু্য হয়েছে! আর এদের মধ্যে এপ্রিল মাসেই বজ্রপাতে মারা গেছেন ৩১ জন। যাদের ২০ জন পুরুষ ও ১১ জন নারী। এ ছাড়া চলতি মে মাসের আট দিনে বজ্রপাতে মারা গেছেন ৪৩ জন। এদের মধ্যে ৩৪ জন পুরুষ ও ৯ জন নারী। অন্যদিকে, গত ৩৮ দিনে বজ্রপাতে মৃতদের মধ্যে ৩৫ জনই কৃষক। মূলত স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন 'সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টোর্ম অ্যাওয়ারনেস' ফোরামের (এসএসটিএএফ) গবেষণা সেলের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকদের মধ্যে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালনকালে সংগঠনটি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

আমরা বলতে চাই, যখন এসব তথ্য উঠে আসছে, তখন পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করা জরুরি। পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এটাও বিবেচ্য যে, সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন সময়ে এটা বলেছেন, বজ্রপাতে মৃতু্যরোধে অবহেলা নয়, সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। এছাড়া বৃষ্টির সময় যতটা সম্ভব ঘরে অবস্থান করতে হবে। একইসঙ্গে বেশি করে তালগাছ রোপণের পরামর্শের বিষয়টিও বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্টদের তৎপর হওয়া জরুরি। এছাড়া জনসচেতনতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণেরও বিকল্প নেই।

প্রসঙ্গত এসএসটিএএফ সংগঠনটিও কৃষকের জীবন রক্ষায় মাঠে কাজ করা কৃষকদের তিন দফা পরামর্শ দিয়ে তা পালনের আহ্বান জানিয়েছে। এর পাশাপাশি বজ্রপাত হলে কৃষকরা কীভাবে নিজেদের নিরাপদ রাখবেন সে কৌশলও বলে দিয়েছেন সংগঠনটির সদস্যরা। কৃষকদের যেসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তা হলো- খোলা আকাশের নিচে থাকলে আকাশে কালো মেঘ দেখার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হবে। বৃষ্টির সময়ে গাছের নিচে অবস্থান না করা এবং খোলা আকাশের নিচে কাজ করার সময় পায়ে জুতা পরিধান করা এবং মাঠে থাকা অবস্থায় বজ্রপাত হলে শুয়ে পড়া।

আমরা বলতে চাই, এই পরামর্শের বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে, জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে কৃষকদের অধিক সচেতন করতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। স্মর্তব্য যে, আমাদের দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকরা। এর আগে এমনটি জানা গিয়েছিল যে, মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে কৃষকের প্রাণহানিই ঘটে সবচেয়ে বেশি। ফলে এই বিষয়গুলো খেয়াল রেখে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের একজন অধ্যাপক জানিয়েছিলেন, মূলত বীক্ষণ শক্তি না থাকার ফলে বজ্রপাতে মৃতু্যর সংখ্যা বাড়ছে। বজ্রপাত যখন হয়, তখন আকাশ থেকে বিদু্যৎ মাটির দিকে ধেয়ে আসে। বিদু্যৎ বীক্ষণ না হলেই তখন মানুষ বা গাছের ওপর সেটা পড়ে। অনেক সময় বিল্ডিংয়ের ওপরও পড়তে দেখা যায়। বিল্ডিংগুলোতে পড়লে মানুষের খুব বেশি ক্ষতি হয় না। তবে বজ্রপাতের সময় ঘরের বাইরে থাকলে সমস্যাটা বেশি হয়। তাই সচেতন হওয়ার বিষয়টি তিনিও তুলে ধরেছিলেন। ফলে সার্বিক বিষয় আমলে নেওয়া এবং সচেতন হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, দেশে বজ্রপাতে গত ১ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত ৩৮ দিনেই ৭৪ জনের মৃতু্য হয়েছে। এটিকে সহজ করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে। এটাও আমলে নেওয়া দরকার, এমন মতও উঠে এসেছিল যে, তালগাছ রোপণে সরকারি ও বেসরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করার পাশাপাশি সচেতন নাগরিক হিসেবে সবার এগিয়ে আসা উচিত। আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং সচেতনতা বৃদ্ধিসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে