শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১

শ্রমজীবী মানুষকে নিয়ে ভাবতে হবে

সেয়াইব মোহাম্মদ সিফাত, শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ, ঢাকা
  ১২ মে ২০২৪, ০০:০০
শ্রমজীবী মানুষকে নিয়ে ভাবতে হবে

সময়ের বিবর্তনে সবকিছু পরিবর্তন ঘটছে। আর এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে অনেক অবদান। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির যে রকম অবদান রয়েছে ঠিক তেমনি আজকের বিশ্বের বিপুল অগ্রগতির পেছনে রয়েছে শ্রমজীবী মানুষের অবদান। আর শ্রমজীবী সমাজের অসহযোগিতা জীবনকে বিষময় করে তুলবে। আমাদের দেশের শ্রমজীবী মানুষগুলো হচ্ছে এক একটি সম্পদ। তাদের কষ্ট পরিশ্রমের মাধ্যমে আমরা সুখ-শান্তি উপলব্ধি করতে পারি। বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলের কৃষকরা এ দেশের মূল চাবিকাঠি। তাদের মাধ্যমেই আমাদের দেশের কৃষি চাকা এখনো অটল। কিন্তু প্রায় সময় দেখা যায়, শ্রমজীবী মানুষকে অপমান করা হয়। সমাজের উচ্চস্তরের মানুষ যারা তারা করেছে সম্মানের কাজ গৌরবের কাজ। সমাজের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা নিজেদের কুক্ষিগত করে তথাকথিত নিম্ন শ্রেণির মানুষকে নিক্ষেপ করেছে অপমান, ঘৃণা, বঞ্চনার নিরন্ধ্র অন্ধকারে। অথচ সেই শ্রমিকরা চিরকাল মাঠে মাঠে বীজ বুনেছে, পাকা ধান ফলিয়েছে। কিন্তু তাদের এই অবদান কেউ স্বীকার করে না। কেউ তাদের মর্যাদা দেয় না। বরং সুযোগ পেলেই তাদের অধিকার হরণ করা হয়। এখানেই শুধু ক্ষান্ত নয়।

তাদের ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়ন করে না। বর্তমান বাংলাদেশের কৃষকদের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। বাঙালি কৃষকরা প্রত্যাশার জানালা মেলে তাকিয়ে থাকে তাদের উৎপাদনের ওপর। কারণ তাদের দুঃখ-কষ্ট নিবারণ করার একমাত্র হাতিয়ার ছিল কৃষিকাজ। কৃষকরা ঘামঝরা পরিশ্রম করে এ দেশের মানুষের খাদ্য জোগান দিয়ে চলছে। কিন্তু তাদের পরিশ্রমের ন্যায্য অধিকার তারা পায় না। তাদের পরিশ্রমের লাভের অংশ চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগীদের দখলে। কৃষকদের লাভ করা তো দূরের কথা উৎপাদন খরচই আসে না। অথচ কৃষকরা ঋণগ্রহণসহ নানা দুর্যোগ মোকাবিলা করে উৎপাদন করে। আমাদের দেশে নানা ধরনের শ্রমজীবী মানুষ আছেন। যেমন- কৃষক, তাঁতী, জেলে, কামার রিকশাচালক কাঠমিস্ত্রি ইত্যাদি। রিকশাচালকদের মাধ্যমে আমরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করি। কিন্তু তাদেরকে প্রায় সময় দেখা যায় রাস্তাঘাটে অবহেলা করা হয়। এমনকি অনেকেই দ্বিধাবোধ করে না তাদের গায়ে হাত তুলতে। যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র প্রভৃতির ক্ষেত্রে শ্রমজীবী মানুষের অপরিসীম অবদান।

তাদের কেউ সম্মান করে না, আমাদের প্রিয় নবী মুহম্মদ (স.) নিজেও শ্রমিকের মতো বহু পরিশ্রমের কাজে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি মাঠে মেষ চরিয়েছেন। শ্রমিকের দেহের ঘাম শুকানোর আগে পাওনা পরিষদের নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ আজ আমরা শ্রমজীবী মানুষকে ঘৃণার চোখে দেখি। আমরা কি একবার ভেবেছি? আমাদের দৈনন্দিন জীবনের যা কিছু প্রয়োজন আমরা তাদের কাছ থেকে পেয়ে থাকি। তারা আজ অবহেলিত নির্যাতিত। দুঃখজনক হলেও সত্য, শ্রমজীবীদের প্রতি আমাদের দেশের মানুষের এক ধরনের অবজ্ঞা ও ঘৃণা রয়েছে। শ্রমজীবী সমাজকে অভুক্ত রেখে কিংবা তাদের ঘৃণা, অবহেলায়, অপমানের সমাজের দুর্বলতম শ্রেণিতে পরিণত করে দেশের উৎপাদনের জোয়ার আনা যায় না। জাতীয় সমৃদ্ধির স্বপ্ন রচনা করা যায় না। পরিশেষে বলতে চাই, আমাদের দেশের শ্রমজীবী মানুষকে নিয়ে ভাবতে হবে। তাদের অধিকারগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। তাদের সঠিক মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে। কারণ তাদের পরিশ্রমের মাধ্যমে আজ আমরা বেঁচে আছি এবং আমাদের দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার কৃষক সমাজের জন্য অনেক উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সেই পদক্ষেপগুলোর বাস্তবায়ন করার মাধ্যমেই তাদের দুঃখ লাঘব হবে বলে প্রত্যাশা করি। শ্রমজীবীদের হাত ধরেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা এগিয়ে যাবে বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে