বিদ্যালয়ে নৈতিকতার চর্চা জরুরি

প্রকাশ | ১২ মে ২০২৪, ০০:০০

খালিদ মোশারফ, ইন্সট্রাক্টর পিটিআই, সোনাতলা, বগুড়া
জন্ম থেকে শিশু মূল্যবোধ ও নৈতিকতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। পরিবার, সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিশু নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শেখে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ ও নৈতিকতা চর্চার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ ও নৈতিকতা চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হলেন শিক্ষক। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ বিনির্মাণের আদর্শ কারিগর। সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে নৈতিকতা চর্চার গুরত্ব অনস্বীকার্য। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৈতিকতা চর্চা শিশুদের মানবিক বোধের বিকাশ ঘটায়। নৈতিকতা চর্চা মানুষকে ভালো ও মন্দের প্রার্থক্য করতে শেখায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক শিশুর নৈতিকতা বিকাশের সবচেয়ে বড় মডেল। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। শিক্ষকরা যদি কাজেকর্মে দ্বায়িত্বশীল ও সময়নিষ্ঠ হন শিশুরাও দ্বায়িত্বশীল ও সময়নিষ্ঠ হবে। শিক্ষকদের ভালো পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা শিশুদের ভালো ও মন্দের প্রার্থক্য শেখাবে। গুরুজনদের সম্মান করা, পিতা-মাতার সেবা করা, কারোর ক্ষতি না করা, সদা সত্য কথা বলা ইত্যাদি কাজে শিক্ষকরা শিশুদের অনুপ্রাণিত করেন। শিশুরা শিক্ষকদের কথা যেভাবে শোনে ও মেনে চলে অন্যদের কথা সেভাবে মেনে চলে না। তাই শিক্ষকরাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের নৈতিকতা বিকাশের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। প্রত্যহ সমাবেশ, জাতীয় সংগীত, শপথ ও প্রার্থনার মাধ্যমে শিশুদের সমাজে একসঙ্গে বসবাস, দেশের প্রতি মমত্ববোধ, দেশের সেবা করা ইত্যাদি ভালো বোধের উন্মেষ ঘটাই। দৈনিক সমাবেশে প্রধান শিক্ষক দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন, যেকোনো একজন মনিষীর বাণী শোনান এবং শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করেন। শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে দৈনিক পাঠদান করেন। কিছু কিছু পাঠের সঙ্গে নৈতিকতা চর্চার সরাসরি সম্পর্ক থাকে। অনেক গল্প, কবিতা, আদর্শ মানুষের জীবনী পাঠে শিশুরা অনুপ্রাণিত হয়। শিক্ষকদের উচিত ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরত্ব দিয়ে পাঠদান করা। কিন্তু অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়টি পাঠদানে যথেষ্ট যত্মশীল। শিশুদের ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষাদানে শিক্ষকদের আরও যত্মশীল হতে হবে। এছাড়াও সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে শিশুদের অনুপ্রাণিত করতে হবে। বিদ্যালয়ে শিশুদের মিলেমিশে কাজ করাতে হবে, শ্রেণিকক্ষে দলগত কাজ করাতে হবে। বিদ্যালয়ে শিশুদের জন্য গণতান্ত্রিক মনোভাবের বিকাশ ঘটাতে হবে। সঠিক নেতৃত্ব, কর্মজীবনে সেবার মনোভাব সৃষ্টি করতে হবে। শ্রেণিকক্ষে শিশুদের মধ্যে টিম লিডার তৈরি করে দিতে হবে। শিশুদের নিয়ে বনভোজন বা পিকনিক, বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করাতে হবে। শিক্ষকদের উচিত শিশুদের বাস্তব জগৎ থেকে উদাহরণ সংগ্রহ করে বুঝিয়ে বলা এবং ভালো কাজে অনুপ্রাণিত করা। বিদ্যালয়ে সম্প্রীতির শিক্ষাদান করতে হবে। ভালো আচরণের জন্য শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের বোঝাতে হবে- কখনোই কারোর সঙ্গে মারামারি করা যাবে না। সবাইকে মিলেমিশে বসবাস করতে হবে। মানুষের জন্য মমত্ববোধ বোঝানোর জন্য বিদ্যালয়ের পাশে বা বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় মানবতার দেয়াল করা যেতে পারে। শিশুদের নিজের কাজ নিজে করা, ভদ্রতা ও বিনয় শেখাতে হবে। বিদ্যালয়ে অভিভাবক সমাবেশ, মা সমাবেশ, এসএমসির মিটিং-এ শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করে কথা বলতে হবে। বিদ্যালয়ে স্কাউটের চর্চা, নিজ নিজ ধর্মীয় রীতি মোতাবেক নিয়মিত প্রার্থনা করা, টিফিন পিরিয়ডে একসঙ্গে সবাই মিলে খাওয়া, ছুটির সময় হৈচৈ না করে সারিবদ্ধভাবে বিদ্যালয় থেকে বের হওয়া ইত্যাদি কর্মশিক্ষার মাধ্যমে শিশুর নৈতিকতাবোধের উন্মেষ ঘটানো যেতে পারে। বিদ্যালয়ে শিশুরা যেন পুরো সময় নৈতিকতার অনুশীলন করতে পারে। তাহলে বিদ্যালয়ের বাইরেও শিশুরা ভালো আচরণ করবে। সেক্ষেত্রে শিক্ষকরা শিশুদের বিদ্যালয়ের ভেতরে শৃঙ্খলা চর্চার অনুশীলন করাবেন। শিশুদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে শৃঙ্খলার চর্চার অনুশীলন আরও জোরদার করা সম্ভব। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ইউনিফর্ম পরে আসা নিশ্চিত করতে পারলে বিদ্যালয়ে সুন্দর একটি পরিবেশ নিশ্চিত হয়। বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ও আঙ্গিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, বিদ্যালয়ে ফুলের বাগান করা শিশুদের মধ্যে পড়াশোনার মনোভাব বাড়াতে সাহায্য করে। শিক্ষার্থীদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে বিদ্যালয়ে নৈতিকতা চর্চার বিকল্প নেই। বিদ্যালয়ে নৈতিকতা চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে আদর্শ ও সৎ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।