জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে সাফল্য

দেশের নাগরিকরা যাতে সহজে, নির্ভয়ে থানায় আসতে পারেন, তাদের সমস্যার কথা বলতে পারেন বাংলাদেশ পুলিশ সেটি নিশ্চিত করেছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে ইতোমধ্যেই ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। সন্ত্রাস দমনে শেখ হাসিনার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

প্রকাশ | ১০ মে ২০২৪, ০০:০০

মো. খসরু চৌধুরী
সব ধরনের জঙ্গি কার্যক্রম প্রতিরোধসহ সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নাসা সেন্টার। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের অন্তর্ভুক্ত প্রধান প্রতিষ্ঠান নিয়ার ইস্ট সাউথ এশিয়া সেন্টার ফর স্ট্যাটিজিক স্টাডিজের নাসা ৪৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শনকালে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এ মন্তব্য করেন। প্রতিনিধি দলের প্রধান ডক্টর হাসান আব্বাস বলেন, সন্ত্রাস, সহিংস চরমপন্থি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ উলেস্নখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। প্রতু্যত্তরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থি মোকাবিলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন উদ্যোগ ও সাফল্যের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। বর্তমান বিশ্বে কোনো একটি দেশের পক্ষে এককভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন সমন্বিত বৈশ্বিক উদ্যোগ। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী ও প্রকট হলে সেটি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশ্বের জন্যও হয়ে উঠতে পারে ঝুঁকিপূর্ণ। সে অবস্থায় রোহিঙ্গাদের তাদের জন্মভূমিতে টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ পুনর্বাসন প্রত্যাশিত। সম্প্রতি তিন পার্বত্য জেলা বিশেষ করে বান্দরবানের কিছু দুর্গম অঞ্চলে সেনাবাহিনী, বিজিবি,র্ যাব ও পুলিশের চিরুনি অভিযানে ধরা পড়েছে বেশ কয়েকজন জঙ্গি ও সন্ত্রাসী তরুণ। জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামের নতুন একটি দুর্র্ধর্ষ প্রকৃতির জঙ্গি সংগঠনের সন্ধানও মিলেছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত বম সম্প্রদায়ের কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর সন্ধানও পাওয়া গেছে, যারা নিজেরাই জঙ্গি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। সর্বশেষ কেএনএফ কর্তৃক ব্যাংক লুটসহ নানা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগও উঠেছে। ফলে, সেখানে চলছে চিরুনি অভিযান। পুলিশর্-যাব-কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতায় দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে অনেকাংশে সাফল্য এসেছে। আজকের বিশ্বে গণতন্ত্র, শান্তি এবং মানব নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকিগুলোর মধ্যে সন্ত্রাসবাদ একটি। বৈশ্বিক হুমকি হওয়ায় বিশ্বের প্রতিটি দেশকে এ সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। বর্তমান সরকার ধর্মীয় উগ্রপন্থিসহ সব রকম জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে 'জিরো টলারেন্স' নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্র মতবাদের কোনো স্থান নেই। একাত্তরে পরাজিত হয়েও পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসনপুষ্ট সরকারগুলোর সহায়তায় দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গি কার্যক্রমের বিকাশ ঘটতে থাকে। তবে আশার কথা এই যে, এ দেশের মাটিতে তা কখনোই শিকড় গেড়ে বসতে পারেনি এবং পায়নি জনসমর্থন। তবু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বদাই সতর্ক ও তৎপর থাকতে হবে। সর্বস্তরে সর্বপর্যায়ে তৈরি করতে হবে ব্যাপক জনসচেতনতা ও জনপ্রতিরোধ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহণের আগে এই দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ কীভাবে মাথাচাড়া দিয়েছিল। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় চলে এসেছিল। একসঙ্গে বোমা হামলা করে জঙ্গিবাদের হলি খেলা হয়েছিল বাংলাদেশে। বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে তিনি আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। সেজন্য জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে সন্ত্রাস-প্রতিরোধে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। সন্ত্রাস দমনের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভালো করছে। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসাধারণ সাফল্য শুধু বাংলাদেশের নিরাপত্তা এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নেই নয়, এই অঞ্চলে এবং এর বাইরেও সাহায্য করছে। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের সন্ত্রাস দমনে সাফল্য বিশ্বের কাছে রোল মডেল। সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থি মোকাবিলায় বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্য দেশে ও বিদেশে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত ও প্রশংসিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সন্ত্রাসবাদের প্রস্তুতি, সহায়তা এবং উসকানিকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে ২০০৯ সালে সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রণয়ন করেছে। এ ছাড়া ভার্চুয়াল পস্ন্যাটফর্মে সংঘটিত অপরাধ দমনের জন্য ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করেছে। উভয় আইন অনুসারে, সন্ত্রাস ও সাইবার অপরাধের সুষ্ঠু ও কার্যকর বিচারের জন্য সারাদেশে সাতটি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইবু্যনাল এবং আটটি সাইবার ট্রাইবু্যনাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। করোনার মহামারির সময়েও জনগণের ন্যায়বিচারের অধিকার রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় 'আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ' জারি করে ভার্চুয়াল আদালত চালু করা হয়েছিল। করোনার মহামারি পরিস্থিতি সত্ত্বেও সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইবু্যনালগুলো উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক আবেদন নিষ্পত্তি করেছে- যা জরুরি সমস্যা মোকাবিলায় এবং কারাগারে বন্দিদের ভিড় কমাতে অনেক অবদান রেখেছে। দেশের নাগরিকরা যাতে সহজে, নির্ভয়ে থানায় আসতে পারেন, তাদের সমস্যার কথা বলতে পারেন বাংলাদেশ পুলিশ সেটি নিশ্চিত করেছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে ইতোমধ্যেই ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। সন্ত্রাস দমনে শেখ হাসিনার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মো. খসরু চৌধুরী এমপি : সংসদ সদস্য ঢাকা-১৮, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ