থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তস্বল্পতাজনিত রোগ। এটি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। রক্তস্বল্পতার জন্য প্রতি মাসেই রোগীকে রক্ত নিতে হয়। ঘনঘন রক্ত নেওয়ায় ও পরিপাক নালি থেকে আয়রনের শোষণ ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় শরীরে আয়রনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে লিভার, হৃৎপিন্ডসহ অন্যান্য অঙ্গের নানা রকম মারাত্মক জটিলতা দেখা দেয়। সঠিক চিকিৎসা ও নিয়মিত রক্ত না নিলে থ্যালাসেমিয়া রোগী মারা যান। প্রতিবার রক্ত নেওয়া ও আয়রন কমানোর ওষুধসহ অন্যান্য খরচে একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর চিকিৎসায় প্রতি বছর ৫০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়।
বাংলাদেশে ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। আর প্রতি বছর ৭ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্ম নেয়। গত মঙ্গলবার রাজধানীর মালিবাগে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস এবং বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের ৫০ শয্যা হাসপাতালের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। মানবকোষে রক্ত তৈরি করার জন্য দু'টি জিন থাকে। কোনো ব্যক্তির রক্ত তৈরির একটি জিনে ত্রম্নটি থাকলে তাকে থ্যালাসেমিয়া বাহক বলে। আর দু'টি জিনেই ত্রম্নটি থাকলে তাকে থ্যালাসেমিয়া রোগী বলে। সব বাহকই রোগী হন না। দেশে ৬০ হাজারের বেশি থ্যালাসেমিয়া রোগী রয়েছেন। শিশু জন্মের এক থেকে দুই বছরের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া রোগ ধরা পড়ে। এই রোগের লক্ষণগুলো হলো ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, দুর্বলতা, ঘন ঘন রোগসংক্রমণ, শিশুর ওজন না বাড়া, জন্ডিস, খিটখিটে মেজাজ ইত্যাদি। থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধযোগ্য। স্বামী-স্ত্রী দু'জনই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে তখনই সন্তানের এ রোগ হতে পারে। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী দু'জনের একজন যদি বাহক হন এবং অন্যজন সুস্থ হন, তাহলে কখনো এ রোগ হবে না। তাই বিয়ের আগে হবু স্বামী বা স্ত্রী থ্যালাসেমিয়ার বাহক কিনা, তা সবারই জেনে নেওয়া দরকার। সঠিক চিকিৎসা ও পরিচর্যা পেলে থ্যালাসেমিয়া রোগী সুন্দর জীবনযাপন করতে পারেন। স্বাভাবিক মানুষের লোহিত রক্তকণিকার গড় আয়ু ১২০ দিন হলেও থ্যালাসেমিয়া রোগীর ত্রম্নটিপূর্ণ গেস্নাবিনের কারণে লোহিত রক্তকণিকার গড় আয়ু মাত্র ২০ থেকে ৬০ দিন। অপরিপক্ব অবস্থায় লোহিত রক্তকণিকা ভেঙে যায়, তাই রক্তস্বল্পতা ও জন্ডিস দেখা দেয়। থ্যালাসেমিয়ার বাহক স্বাভাবিক মানুষরূপে বেড়ে ওঠে। তাই কেউ থ্যালাসেমিয়ার বাহক কিনা, তা বাহ্যিকভাবে বোঝার কোনো উপায় নেই। আর থ্যালাসেমিয়ার রোগী জন্মের ছয় মাস বয়স থেকে ফ্যাকাসে হয়ে যায়, জন্ডিস দেখা দেয়। পেটের পস্নীহা ও লিভার বড় হয়ে যায়। ঠিকমতো শরীরের বৃদ্ধি হয় না।
সঠিক চিকিৎসা ও নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে উঠুক, এই রোগে আক্রান্তের হার ধীরে ধীরে কমে আসুক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।