লোকসভা নির্বাচন রক্ষণশীলতার প্রভাব কতটা প্রতিফলিত হবে?
২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনোত্তর ভারতীয় রাজনীতির অঙ্গনেও এক নতুন ঢেউয়ের সূচনা হবে- যে ঢেউ ভারতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ ধারাকে এক অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাবে। কাজেই ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা, সাম্প্রাদায়িকতা ও অগণতান্ত্রিকতার বাতাবরণে নিমজ্জিত না হয়ে গণতন্ত্র ও মানবতার ঝান্ডা সমুন্নত রাখতে হবে। তাহলেই সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে টিকে থাকা সম্ভব হবে।
প্রকাশ | ০৯ মে ২০২৪, ০০:০০
ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
ভারতের নির্বাচনী রাজনীতির একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয় ১৯৫২ সালের প্রথম লোকসভা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এবং ২০১৯ পর্যন্ত ১৭টি জাতীয় এবং ৩৭৬টি রাজ্যসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তা ছাড়া প্রতি পাঁচ বছর পরপর ২ লাখ ৮০ হাজার গ্রাম পঞ্চায়েত, ৬ হাজার ৬৭২টি মধ্যবর্তী স্তরের বস্নক বা মন্ডল পঞ্চায়েত, ৫০০ জেলা পরিষদ ও হাজার হাজার পৌরসভা/ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তিন স্তরের গ্রামীণ ও এক স্তরের নগরসভার নির্বাচিত প্রতিনিধির সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ- যার মধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার নারী। প্রথম সময়কাল ১৯৫২ থেকে ১৯৭৭-এর ২৫ বছর 'ক্ষমতাসীনদের কাল', দ্বিতীয় 'বিরোধী'দের সময়কাল ১৯৭৭-২০০২ এবং শেষ সময়কাল ধরা হয়েছে ২০০২-২০১৯, তা হয়তো বর্তমানে ২০২৪ পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। এ তৃতীয় কালপর্বকে বলা হয়েছে 'সমভাগী'কাল। প্রথম কালপর্ব ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামী দল (কংগ্রেস) ও স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাদের শাসনকাল। এ সময়কাল নেহরু ও শাস্ত্রী হয়ে ইন্দিরাতে সমাপ্ত হয়। দ্বিতীয় কালপর্ব এক ধরনের 'রাগান্বিত' ভোটারের উত্থানকাল। ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে প্রচন্ড ক্ষোভ-বিক্ষোভ ভোটবাক্সে প্রভাব ফেলে। তৃতীয় কালপর্ব হয় 'স্থিতিশীলতা'র এবং বিশেষত রেকর্ডভিত্তিক ভোটাচরণের কাল। এ কালপর্বে কাজের রেকর্ড দেখে মানুষ ভোট দিয়েছেন। এ সময়ে ক্ষমতাসীন থেকে নির্বাচন করে জয়-পরাজয় দুটিই হয়েছে। তা ছাড়া ভোট ব্যবস্থাপনা ও ভোটাচরণে লক্ষ্যযোগ্য গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। রাজনীতিতে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ বেড়েছে। ভোটে উত্তরাধিকার ও পরিবারের প্রভাব ইত্যাদির চেয়ে জীবন জীবিকাভিত্তিক ইসু্য প্রাধান্য পাচ্ছে। সন্ত্রাস ও বুথ দখল হ্রাস পেয়েছে। ১৯৮২-১৯৮৩ সালের পর থেকে ইভিএমের ব্যবহার, নির্বাচনী ব্যয়, ব্যবস্থাপনা ও আস্থা-বিশ্বাসে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ভোটারদের আচরণ ও নেতৃত্বকেও তুলনামূলকভাবে অনেক পরিপক্ব করেছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিকে একটি মর্যাদাশীল অবস্থানে উন্নীত করেছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে আগামী পাঁচ বছর কোন দল বা জোট শাসন করবে, তা নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রবল জল্পনা কল্পনা শুরু হয়ে গেছে। ৯৬ কোটি ৯০ লাখ ভারতীয় নাগরিকের অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে এবারের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ তথা লোকসভা নির্বাচনের জয়-পরাজয় নির্ধারিত হবে। ভারতের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এবারের নির্বাচন সাত ধাপে হবে, যেখানে ভারতীয়রা ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুনের মধ্যে ভোটে অংশ নেবেন এবং ৪ জুন ফলাফল ঘোষণার মধ্যে দিয়ে শেষ হবে প্রায় তিন মাস ধরে চলা ভোটের সবচেয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞের। ভারতের এই ১৮তম লোকসভা নির্বাচন ইতিহাস গড়তে চলেছে। উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে ভারত মহাসাগর, পূর্বের পাহাড় থেকে পশ্চিমে মরুভূমি, কংক্রিটের জঞ্জাল থেকে ক্ষুদ্রতম গ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৯৭ কোটি ভোটার তাদের রায়ে নির্বাচিত করবেন সংসদের নিম্নকক্ষ অর্থাৎ লোকসভার ৫৪৩ জন প্রতিনিধিকে। আর রাষ্ট্রপতির দেয়া দু'জন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান প্রতিনিধি মিলিয়ে মোট আসন সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৪৫টি। যারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন, তাদের হাতেই গঠিত হবে কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতের নির্বাচন বিশাল ও জটিল। এখানে সাতটি দিক রয়েছে যে কারণে এই নির্বাচন অন্য যে কোনো নির্বাচন থেকে আকারে ও আয়োজনে অন্য কোনো দেশের নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। ১৬ মার্চ তফসিল ঘোষণার মধ্যে দিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করেন দেশটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে ভারতীয় নির্বাচন কমিশন এই বিস্তৃত নির্বাচন কাঠামোগুলো ঠিক করেছে। প্রায় ১৪০ কোটির জনসংখ্যার একটি দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় এবং সর্বোপরি তার সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশন এক তাৎপর্যপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছে।
নরেন্দ্র মোদি ভারতের মতো এক বিশাল দেশে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে গত এক দশক ধরে খুবই সফলভাবে শাসন পরিচালনা করে আসছেন। তিনি যে নীতিতে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পরিচালনা করছেন তা হচ্ছে কখনো নরম, কখনো কঠিন। তিনি চরম বা পরম বা কোনো তির্যক মত বা পথকে আশ্রয় প্রশ্রয় না দিয়ে অনেকটা গ্রহণ-বর্জনের নীতিকেই অনুসরণ করে এ যাবত রাষ্ট্র পরিচালনা করে আসছেন। তাই তার প্রতি ততটা বীতশ্রদ্ব বা ক্ষুব্ধ হওয়ার মতো অবস্থা মানুষের মধ্যে তৈরি হয়নি। সাধারণ মানুষের রুটি রোজগারের জন্য তার সরকারের কর্মসূচিতে জনগণ তেমনটা হতাশাবাদী নয়। অন্ন-বস্ত্রের মতো মৌলিক চাহিদায় জনগণের দিক থেকে তেমন কোনো অসন্তোষ নেই। এছাড়া ভারতে বর্তমানে এরকম কোনো নেতৃত্ব নেই- যে নেতৃত্বের ধ্বজা ধরে ভারতের মতো দেশে রাতারাতি কোনো পরিবর্তন আসবে- সেরকম মনে করার সুযোগ নেই। তবে মোদি সরকার একটি উচ্চবিত্তের বলয় তৈরি করেন- যা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অনুরূপ। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রভাবশালী বিত্তবানরাই অতীত বর্তমান ও ভবিষতের কান্ডারি হিসেবেই রাষ্ট্র পরিচালনার ভূমিকা পালন করে থাকে। ভারতও প্রায় একই নীতির অনুসারী হয়ে বিভিন্ন শক্তিশালী ও সিন্ডিকেটেডগোষ্ঠীর অনসৃত ধারাকে অনুসরণ করে রাষ্ট্রীয় প্রভাব প্রতিপত্তির বিস্তার লাভে সচেষ্ট থাকেন। এতে যেমন ওই প্রভাবশালীগোষ্ঠী রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃত্ববাদ গ্রম্নপে পরিণত হয়ে সব সময় সুবিধাভোগী শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত থাকেন- প্রকারান্তরে রাষ্ট্রের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ গতি পথ ও তাদের হাতের মুঠোয় থাকে। আজকের দুনিয়ায় প্রতিযোগিতাই যেখানে রাষ্ট্রের শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করে থাকে- সেই শক্ত অবস্থানই জনগণকে সরকারের আনুগত্যের পথে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ আইন শৃঙ্খলা, পররাষ্ট্র্রনীতি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা কার্যক্রম এবং সর্বোপরি কর্মসংস্থানের মতো জাতীয় কয়েকটি ক্ষেত্রকে যদি সুরক্ষিত রাখা যায় সেক্ষেত্রে কোনো সরকারকেই শাসন পরিচালনার বৈতরণি পার হতে কোনো বেগ পেতে হবে না। সর্বোপরি যদি জাতীয় নিরাপত্তার মতো অতি জরুরি জায়গাটা যদি সুরক্ষিত রাখা যেতে পারে- সেক্ষেত্রে জনগণ কোনো কারণেই সরকারের বিরুদ্ধে পক্ষ বা বিরুদ্ধ মতের অবস্থান গ্রহণ করে রাজপথকে উত্তপ্ত করবে না। এক্ষেত্রে বিগত ১০ বছরে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সরকার কোভিড-১৯ মোকাবিলাসহ দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং কর্মসংস্থানের মতো ক্ষেত্রকেও ততটা অস্থির বা বেসামাল হতে দেননি। এছাড়া আঞ্চলিক শান্তি বা স্বস্তির ক্ষেত্রে প্রতিবেশীদের স্বার্থ রক্ষা করে তাদের সুবিধার কথাও ভেবেছেন। অর্থাৎ বড় রকমের কোনো ইসু্যতে কোনো জাতীয় গোষ্ঠীর মধ্যে কোনো প্রকার অসন্তোষ বা দাবানল সৃষ্টি হয়নি। এছাড়া বড় রকমের কোনো বিভেদ, হানাহানি, সহিংসতা দেশকে কোনো বড় প্রশ্নের সম্মুখীন করেনি। কোনো বিছিন্নতাবাদী আন্দোলন তেমনটা মাথাচারা দিয়ে উঠতে পারেনি। উলফা, মণিপুর সমস্যাকে তিনি খুব বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সমাধানের চেষ্টা করেছেন এবং আন্দোলনের পরিবেশকে স্তিমিত করে রেখেছেন। অধিকঙ্গুত্ম কোনো মদতদাতাগোষ্ঠী উত্থানের মাধ্যমে কোনো সন্ত্রাসী কাজ কর্ম তেমনভাবে সংগঠিত হয়নি। এ সবই ছিল মোদিজির সফলতার দিক।
অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বর্তমান জোট অনেকটাই নড়বড়ে। মোদি তার প্রতিপক্ষকে কখনোই তার ব্যক্তিগত বৈরী হিসেবে না দেখে রাষ্ট্রের জনগণের একটি পক্ষ হিসেবে দেখেছেন এবং তারাও যে রাষ্ট্রের বিপদে আপদে এবং সংকটের দিনে জাতীয় রাজনীতির মাধ্যমে রাষ্ট্র গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারেন মোদিজি সেটাকে সব সময় প্রাধান্য দিতেন। সবকিছু মিলেই গ্রহণ-বর্জনের সংস্কৃতিতে তিনি বিশ্বাসী একজন মানুষ। মোদিজি কখনোই গরম বা পেশিশক্তির বলে বলিয়ান হয়ে কোনো আগ্রাসী মনোভাব প্রদর্শন করেন না। অন্যদিকে, রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের বিবেচনায় চীনের আগ্রাসী ভূমিকাকে ঘৃণা করেন বটে বরং তা প্রতিহত করতে তার রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বর্তমানে ভারত এক শক্তিধর আঞ্চলিক শক্তির ভূমিকায় আসীন আছেন বলে আমরা গণ্য করতে পারি- অন্যদিকে, অদূর ভবিষ্যতে এক পরাশক্তির ভূমিকায় অবদান রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি- ভারতের সেই সক্ষমতা আছে। পারমাণবিক শক্তির অধিকারী ভারত মোদিজির নেতৃত্বে এক অবিচল ও সুদৃঢ় ঝান্ডার ভূমিকা পালন করছে বলে মনে হয়। এ ছাড়া মোদিজি এখন এই এশিয়া অঞ্চলে এমনকি বিশ্বের ব্র্যান্ডেড মোদিজির খ্যাতি লাভ করে এক কিংবদন্তিতে পরিণত হতে যাচ্ছেন। তবে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন রাহুল গান্ধী এবং অন্যান্য রাজ্যের নেতৃত্বের মধ্যেই বড় রকমের কোনো ডিগবাজি বা চমক সৃষ্টি ছাড়া মোদিজির গন্তব্যের পথে বা দিলিস্নর মসনদ লাভের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা বা সমস্যা হবে বলে আমরা মনে করছি না। বরং আগামী এক দশকও মোদির আয়ত্তে দেশের শাসনভার ন্যস্ত থাকবে। দিন দিন মোদির মসনদ বা গদি এক অপ্রতিরোধ্য জগদ্দল পাথরে পরিণত হবে।
ভারতের এই লোকসভা নির্বাচন বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল নির্বাচন হতে চলেছে। ভারতীয় নির্বাচনের ব্যয় নিয়ে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠানের কর্তা ভাস্করা রাও জানান, ভোটারদের আকৃষ্ট করতে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারে ব্যয় করতে পারেন এক লাখ ২০ হাজার কোটি রুপি বা ১৪ দশমিক চার বিলিয়ন ডলার- যা অনেক দেশের বাজেটের থেকেও বেশি। এবারের নির্বাচনী বাজেট ভারতের ২০১৯ সালের নির্বাচনে ব্যয় থেকে দ্বিগুণ হবে। ২০২৪ সালকে কাকতালীয়ভাবে বলা হচ্ছে, বিশ্ব রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। কারণ, এই ২০২৪ সালে বিশ্বের প্রায় ৭৪টি দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসব নির্বাচনে বিশ্বের প্রায় ৪৬ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এসব দেশ আবার বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ৫০ শতাংশ জিডিপির জোগান দিয়ে থাকে। কাজেই শুধু রাজনীতি নয়, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও এ বছর বিশ্ব অর্থনীতির জন্য গুরুত্ব বহন করে। এসব নির্বাচনের ফলে ক্ষমতার পালাবদল হবে ব্যাপকভাবে এবং কোনো কোনো দেশে ক্ষমতাসীন শক্তির ক্ষমতা আরও সু-সংহত হতে পারে। অন্যদিকে, ভূ-রাজনীতি ও বিশ্ব অর্থনীতিতে এমন এক পরিবর্তনের ঢেউয়ের আচর আসবে- যা ধাক্কায় অনেক দেশকেই বেসামাল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। ফলশ্রম্নতিতে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় এক নবযুগের সূচনা হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।
লোক সভা নির্বাচন-২০২৪ উপলক্ষে ভারতীয় জনগণসহ বিশ্ববাসীকে নিম্নবর্ণিত প্রশ্নের সম্মুখীন করছে তাৎপর্য ও গুরুত্বের বিবেচনায় ভারতীয় নির্বাচনকে জনগণ কীভাবে দেখছে? লোকসভা নির্বাচন-২০২৪ ভারতীয় সাধারণ জনগণের ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে কি? ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন ও ভারতীয় রাজনীতি কি কোনো নতুন ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে? জাতীয় অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ভারতের জাতীয় পার্টির ভূমিকা কতটা স্বচ্ছ? লোকসভা নির্বাচন-২০২৪ এর ফলাফলে উদারতাবাদ বা রক্ষণশীলতার প্রভাব কতটা প্রতিফলিত হবে? ভারতের জাতীয় নির্বাচনে মোদি কতটা অপরিহার্য বা অপ্রতিরোধ্য? ভারতে মোদিবিরোধী মোর্চা কতটা শক্তিশালী?
উপরোক্ত প্রশ্নের আলোকে আমরা এই মত পোষণ করতে পারি যে, স্বেচ্ছাচারিতা, কর্তৃত্ববাদ, নোংরামি, সহিংসতা আর স্বার্থপরতামুক্ত সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ আগামী দিনে ভারতের অখন্ডতার ভিতকে আরও শক্ত ও মজবুত করবে। এর অন্যথায় দেশের অভ্যন্তরে জাতি জাতিতে, গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে দ্বন্দ্ব, হিংসা ও হানাহানি বাড়বে। জুলুম, নৈরাজ্য আর সন্ত্রাসের হোলি খেলায় বিভোর হলে দেশের শান্তিশৃঙ্খলা, ঐক্য ও সংহতি বিনষ্ট হবে- যা প্রকারান্তরে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের হুমকি হয়ে রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে বিপন্ন ও বিপর্যস্ত করতে পারে।
২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনোত্তর ভারতীয় রাজনীতির অঙ্গনেও এক নতুন ঢেউয়ের সূচনা হবে- যে ঢেউ ভারতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ ধারাকে এক অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাবে। কাজেই ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা, সাম্প্রাদায়িকতা ও অগণতান্ত্রিকতার বাতাবরণে নিমজ্জিত না হয়ে গণতন্ত্র ও মানবতার ঝান্ডা সমুন্নত রাখতে হবে। তাহলেই সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে টিকে থাকা
সম্ভব হবে।
ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ : সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি, কলামিস্ট ও গবেষক