রাজধানী শহরের জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের। বর্ষা মৌসুম এলেই নগরবাসীকে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। সামান্যতম বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় ঢাকার রাস্তা-ঘাটসহ অনেক এলাকা। টানা কয়েকঘণ্টা বৃষ্টিপাতেই অনেক এলাকাতে দুই-তিন ফুট পর্যন্ত পানি জমে যায়। কিন্তু এই পানি নেমে যেতে তিন থেকে চার ঘণ্টা আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক থেকে দুদিনও লেগে যায়। যার ফলে, রাস্তাঘাটে মানুষ এবং যানবাহন চলাচলে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
বেশিরভাগ সময়ই জলাবদ্ধতা শুরু হওয়ার পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে কিন্তু বর্ষা মৌসুম আসার আগেই যদি প্রস্তুতি নেওয়া যায় তাহলে রাজধানী শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন হবে। জলাবদ্ধতায় ঢাকাবাসীকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। খুবই দুঃখজনক বিষয় হলো, বৃষ্টির সময় অনেক এরিয়ায় রাস্তার পাশের বৈদু্যতিক তার ছিঁড়ে বিদু্যৎপৃষ্টে অনেক মানুষ মারা যায়।
২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রাতের বৃষ্টির সময় মিরপুরে ঢাকা কমার্স কলেজ এরিয়ায় রাস্তার পাশের বৈদু্যতিক তার ছিঁড়ে বিদু্যৎপৃষ্টে শিশুসহ একই পরিবারের ৪ জনসহ মোট ৫ জনের মৃতু্য হয়। তাই এ বছর আমাদের অগ্রিম প্রস্তুতি নিতে হবে।
\হসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক সময় ঢাকা মহানগরীতে প্রধান ড্রেন লাইনগুলো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল ঢাকা ওয়াসার। শাখা লাইনগুলোর দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের ওপর ন্যস্ত ছিল। সেই সময় রাজধানীর মোট ড্রেনেজ লাইনের মধ্যে ৩৮৫ কিলোমিটার ঢাকা ওয়াসার অধীনে এবং প্রায় দুই হাজার ৫০০ কিলোমিটার ঢাকা সিটি করপোরেশনের অধীনে ছিল। এর বাইরে ৭৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ২৬টি খাল ও ১০ কিলোমিটার বক্স-কালভার্ট রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও ছিল ঢাকা ওয়াসার। যে কারণে বর্ষায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে সংস্থাগুলো একে-অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে আসছিল।
\হকিন্তু গত ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ওয়াসার দায়িত্বে থাকা সব নালা ও খাল দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে সেগুলো দখলমুক্ত করে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করে তারা। খালের মূল দায়িত্ব গ্রহণের পর তারা প্রায় আড়াই বছরের মতো সময় পেয়েছে। এর মধ্যে দুই সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা নিরসনে কতটুকু কাজ করতে পেরেছে তা প্রশ্ন থেকেই যায়!
\হঢাকার আশপাশের সবকটি নদীর অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। আগে বৃষ্টি হলে পানি খাল দিয়ে নদীতে চলে যেত কিন্তু এখন এসব খাল বা নদী প্রায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে শহরের পানি নেমে যাওয়ার মতো জায়গা পায় না, ফলস্বরূপ সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। কিন্তু জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ার আগে কর্তৃপক্ষকে শহরের পানি বের হওয়ার সব রাস্তা ক্লিয়ার করতে হবে।
ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারণ হলো- ঢাকার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েছে। পানি নিষ্কাশনের প্রধান মাধ্যম খালগুলো অবৈধ দখল ও কঠিন বর্জ্যে ভরাট হয়ে যায়। নগরের খাল, ড্রেন, বক্স কালভার্ট ও ব্রিক সুয়ারেজ লাইন দিয়ে পানি নদীতে যেতে পারে না। ড্রেনেজ সিস্টেমেও সমস্যা রয়েছে। যেখানে সহজেই পানির সঙ্গে বিভিন্ন বর্জ্য যেমন- পলিথিন এবং অন্যান্য অপচনশীল পদার্থ ভেসে গিয়ে নালার মধ্যে আটকে যায়, ফলে পানি সহজে নিষ্কাশন হতে পারে না, সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার। কিন্তু বর্ষার পূর্বে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করা খুব জরুরি।
শহরে অনেক ছিন্নমস্তক মানুষ থাকে যাদের নিজস্ব বাড়িঘর নেই। রাত হলে তারা আশ্রয় নেয় শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে তারা সেই আশ্রয় টুকুও হারিয়ে ফেলেন। আবার পথচারী থেকে শুরু করে ছোট আকারের যানবাহন প্রায়ই গর্তে পড়ে বিব্রত অবস্থায় পড়তে হয়। অনেক সময় মারাত্মক আহত হতে হয়। তাই রাজধানী ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে আগাম পদক্ষেপ নিতে হবে।
\হঢাকা শহরে জলাবদ্ধতা নিরসনে পর্যাপ্ত ড্রেনেজ নির্মাণ করতে হবে। যাতে করে বৃষ্টির পানি সহজেই নদীতে চলে যেতে পারে।
সেদিকে আমাদের নজর রাখতে হবে। নগরের খাল, ড্রেন, বক্স কালভার্ট ও ব্রিক সুয়ারেজ লাইনগুলোকে পরিষ্কার এবং পানি চলাচলের উপযুক্ত রাখতে হবে। ঢাকার আশপাশের সব নালা-খাল, নদীগুলোকে সংরক্ষণ করতে হবে।
যদিও দেশে বর্তমানে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে কিন্তু কিছু দিন পর দেখা যাবে ঢাকায় তীব্র জলাবদ্ধতা; তাই এই জলাবদ্ধতা নিরসনে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সরকারকেও এ ব্যাপারে বর্ষার আগেই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শুধু সরকার বা সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে এটি ভেবে বসে থাকলে এর ফল হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। কারণ আমরা অনেকেই বর্জ্য ড্রেনে ফেলে দিই- ফলে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। তাই সরকারের পাশাপাশি নিজে সতর্ক হতে হবে এবং অন্যকেও এই বিষয়ে সতর্ক করতে হবে। তাহলে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হবে।
সাকিবুল হাছান : কলাম লেখক