বিশ্ব মানবাধিকার পরিস্থিতিতে স্বস্তি নেই। মানবাধিকার নিয়ে বক্তব্য, বিবৃতি ও রাজনীতি হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনের মজলুম শান্তিপ্রিয় স্বাধীনতাকামি মানুষ বন্যার স্রোতের মতো রক্ত ফেলছে। ইসরাইলের দখলদার বাহিনীর হাতে এ পর্যন্ত ৪০ হাজারের অধিক শিশু, নারীসহ মুক্তিকামি জনগণের মৃতু্য হয়েছে। ইহুদি রাষ্ট্রসমূহ ফিলিস্তিনের মজলুম জনতার বিরুদ্ধে ইসরাইলকে সাহায্য করছে। অস্ত্র গোলাবারুদ দিয়ে শান্তিপ্রিয় নিরস্ত্র জনগণের বিপক্ষে যুদ্ধ লাগিয়ে রেখেছে। মানবাধিকার নিয়ে দুনিয়াজুড়ে যারা ফেরি করে বেড়ায় তারাই যুদ্ধ থামাতে দিচ্ছে না। সেই অঞ্চলের নিরীহ মানুষ খাবার পাচ্ছে না। পানি পাচ্ছে না, তাদের বাড়িঘর ও আশ্রয়স্থল মাটির সঙ্গে মিশিয়ে ফেলছে। শিশু, নারী ও অসুস্থ মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে না। হাসপাতাল পর্যন্ত মাটির সঙ্গে সমান করে ফেলছে মানবতাবিরোধী ইসরাইল সরকার।
মধ্যপ্রাচ্যর দুষ্টু ইহুদিরা এ অঞ্চলকে সর্বদাই অশান্ত করে তুলছে। আরব দেশসমূহ এখন সোচ্চার হয়েছে। ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করেছে। আরব দেশ আর ইউরোপীয় দেশসমূহের মধ্যে ফিলিস্তিন ইসু্যতে দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। কিছুতেই যুদ্ধ থামাচ্ছে না নেতানিয়াহু সরকার। পাখিরমতো মানব সমাজ ধ্বংস করছে তারা। বলতে গেলে বিশ্ব এখন দুই ভাগে বিভক্ত ফিলিস্তিন ইসু্যতে। ইসরাইলের ষড়যন্ত্রের কারণে দুনিয়ার ইহুদি রাষ্ট্রগুলো ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। মানবতা আর মানবাধিকার তারা রক্ষা করছে না। আমেরিকা ও তার মিত্র কতিপয় দেশ ফিলিস্তিনের জনগণের বিরুদ্ধে এ হত্যাকান্ড চালাচ্ছে।
এই যুদ্ধ থামাতে পারছে না জাতিসংঘ। কারণ জাতিসংঘ হলো আমেরিকার নিজস্ব একটি পুতুল সমিতি। এই জাতিসংঘ ব্যবহার করে শান্তিকামি স্বাধীন দেশ বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বকে সর্বদা চাপে রাখতে চায় ওই সংঘ দিয়ে। মুসলিম বিশ্ব তাদের নিরাপত্তার জন্য কোনো অস্ত্র মজুত বা সংরক্ষণ করতে পারবে না। সেটি হবে অপরাধ।
তাই, কথায় কথায় মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করে। তথাকথিত গণতন্ত্র রপ্তানি করে স্বাধীন দেশে মাতবরি চালায়। তাদের এজেন্ট নিয়োগ করে ডলার ছিটিয়ে তথাকথিত বুদ্ধিজীবী পুষে। তারা সময় নিয়ে একটি গ্রম্নপ তৈরি করার চেষ্টায় থাকে। এভাবে গোটা দুনিয়ার মুসলিম দেশে ওই জায়নবাদী, সম্প্রসারণবাদী পৃথিবীতে সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদ উগ্রবাদিতা লাগিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশ শান্তি প্রিয় গণতান্ত্রিক দেশ। এ দেশের স্বাধীনতার ৫৩ বছর চলছে। স্বাধীনতার সময় আমেরিকা বিরোধিতা করেছিল। তারা বাংলাদেশের জনগণের বিপক্ষে ছিল সে দিন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করুক সেটি চায়নি। অথচ এই আমেরিকা বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড বাড়াবাড়ি করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের নির্বাচন, রাজনীতি, ভোট, জোট, মানবাধিকারসহ ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে হিরু আলম পর্যন্ত কোনো বিষয় বাদ নেই আমেরিকার চিন্তা থেকে। এত দরদ আর খবরদারি বাংলাদেশ আর জনগণ নিয়ে। আসলে এগুলো বাংলাদেশের খনিজসম্পদ, তেল, গ্যাস, প্রাকৃতিকসম্পদ ও মানচিত্র খাওয়ার কৌশল। মুসলিম বিশ্বে ঘাঁটি তৈরি করে তাদের ওপর মাতবরি করার কৌশল।
ফিলিস্তিনের পাশে শান্তিকামি দুনিয়ার অবস্থান। খোদ আমেরিকায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। ফিলিস্তিন জনগণের পক্ষে। সেই ছাত্র আন্দোলন এখন গোটা দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের ছাত্র-যুবক-নিরীহ ফিলিস্তিনের পাশে থাকার অঙ্গীকার নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে ইসরাইলসহ তার মিত্রদের জানান দিচ্ছে বাংলাদেশ আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনতা ফিলিস্তিনের পক্ষে আছে। সমস্ত ইসলামী সংগঠন একসঙ্গে এই ইসু্যতে। দু'একটি ব্যক্তি ছাড়া সবাই ফিলিস্তিনের স্বাধীন দেশ ও রাষ্ট্র চায়। বাংলাদেশের সরকার প্রধান ফিলিস্তিনের স্বাধীন দেশে ও জনগণের পক্ষে জোরালো তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। মানবাধিকারের তথাকথিত ফেরিওয়ালার ষড়যন্ত্র ধোঁকাবাজি বিশ্ববাসী দেখতে পারছে। তাদের আসল রূপ দুনিয়ার সম্মুখে পরিষ্কার। এসব ভন্ডামি ছেড়ে প্রকৃত পক্ষে মানবতার পাশে আসুন। অস্ত্র আর যুদ্ধ থেকে মানবতাকে মুক্তি দিন।
যুদ্ধ আর অস্ত্রের অর্থ মানবতার কল্যাণে ব্যয় করুন। বিশ্ব মানবতা যুদ্ধেরবিরোধী। আমরা শান্তি চাই।
বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ বার্মার আঞ্চলিক জাতিগত সংঘাত বন্ধ করতে বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থাকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। আজকের বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনকে স্বাগত জানাচ্ছি ফিলিস্তিনি নির্যাতিত মজলুমের পক্ষে।
মাহমুদুল হক আনসারী : কলাম লেখক