দেশের অর্থনীতিতে তিন চ্যালেঞ্জ কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
প্রকাশ | ০৭ মে ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের সঙ্গে অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। স্বাভাবিকভাবেই যদি অর্থনীতি কোনো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় কিংবা ঝুঁকির মুখে পড়ে, তবে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলেই প্রতীয়মান হয়। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখন তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ আছে। এগুলো হলো- অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি, ঝুঁকিপূর্ণ ক্রমবর্ধমান দায়দেনা পরিস্থিতি এবং শ্লথ অর্থনীতি। এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, এই তিন চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এছাড়া বাজেট বাস্তবায়নে দুর্নীতি বন্ধ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, সরকারি অর্থের অপচয় কমানোর কথা বলেছে সংস্থাটি। রোববার গুলশানের একটি হোটেলে সিপিডির উদ্যোগে এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক পস্ন্যাটফর্ম, বাংলাদেশের সহযোগিতায় 'নতুন সরকার, জাতীয় বাজেট ও জনমানুষের প্রত্যাশা' শীর্ষক একটি নীতি সংলাপে এসব কথা বলেছেন বক্তারা। উলেস্নখ্য, সংলাপটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় চলমান জনসম্পৃক্ত সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।
আমরা মনে করি, যে তিনটি চ্যালেঞ্জে সামনে এলে তা আমলে নেওয়া এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এছাড়া বাজেট বাস্তবায়নে দুর্নীতি বন্ধ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, সরকারি অর্থের অপচয় কমানোর কথা বলেছে সংস্থাটি, এটিও এড়ানো যাবে না। বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। লক্ষণীয়, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ও নাগরিক পস্ন্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তিনি বলেছেন, খুবই জটিল রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক পরিস্থিতি বিরাজমান। ভূ-রাজনৈকি পরিস্থিতিও জটিল। বাজেটকে সামনে রেখে সামাজিক ও সরেজমিন মতামত নেওয়ার বিষয়টিও উলেস্নখ করেন। তিনি বলেছেন, অর্থনীতিতে সমস্যার ত্রিযোগ ঘটেছে। যার মধ্যে বড় সমস্যা হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। অর্থনীতিতে এখনো অতিমাত্রায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে চলেছে। এটা গ্রাম কিংবা শহর এবং খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের জন্য সত্য। সেহেতু প্রথম সমস্যা হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি- যা মানুষের জীবনমানকে আঘাত করছে।
আমরা মনে করি, মূল্যস্ফীতি সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ এবং যে বিষয়গুলো আলোচনায় আসছে সেটি বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। যে কোনো কারণেই হোক মানুষের জীবনমানে আঘাত কিংবা বিঘ্নিত হলে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ফলে এই দিকটিকে সামনে রেখে পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। এছাড়া দ্বিতীয়ত যে বিষয়টি তা হলো ঋণের পরিস্থিতি যা আমলে নিতে হবে। এটা আলোচনায় উঠে এসেছে যে, সরকার বিদেশি উৎস থেকে যে টাকা নেয়, তার চেয়ে দেশীয় উৎস থেকে দ্বিগুণ টাকা ঋণ নেয়। এটার দায়দেনা পরিস্থিতি ভিন্ন একটা ইঙ্গিত বহন করছে। অন্যদিকে, তৃতীয় সমস্যার বিষয়ে এই আলোচনা এসেছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে প্রবৃদ্ধির যে ধারা ছিল, সেই ধারায় শ্লথকরণ হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে কর আহরণ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। সংশ্লিষ্টদের এই বিষয়টিও এড়ানো যাবে না, এটি আলোচনায় এসেছে যে, দেশে মূল্যস্ফীতি এখনো ১০.১০-এর কাছাকাছি- যা মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করছে। পিছিয়ে পড়া মানুষের ভোগ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ওপর মূল্যস্ফীতি সরাসরি প্রভাব ফেলছে। আর এসব কারণে বাল্যবিয়ে বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পৃথিবীতে যেখানে মূল্যস্ফীতি কমছে, কিন্তু সেই সুফল বাংলাদেশে দেওয়া যাচ্ছে না- এটিও সামনে আসছে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সিপিডির সংলাপে যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তা আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। একইসঙ্গে সামিগ্রক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। অর্থনীতিতে যে কোনো চ্যালেঞ্জ তৈরি হলে তা যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ যা- অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি, ঝুঁকিপূর্ণ ক্রমবর্ধমান দায়দেনা পরিস্থিতি এবং শ্লথ অর্থনীতি এটি যেমন এড়ানো যাবে না, তেমনিভাবে বাজেট বাস্তবায়নে দুর্নীতি বন্ধ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা, সরকারি অর্থের অপচয় কমানোর কথা বলেছে সিপিডি এটিও বিবেচনায় নিতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।