সুন্দরবনে আগুন
সঠিক পদক্ষেপ নিন
প্রকাশ | ০৬ মে ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
দেশজুড়ে চলা তাপপ্রবাহের মধ্যে সুন্দরবনের গভীরে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। গত শনিবার দুপুরের দিকে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের জিউধারা স্টেশনের আমোরবুনিয়া টহল ফাঁড়িসংলগ্ন বনাঞ্চলে ধোঁয়ার কুন্ডলি দেখতে পান প্রত্যক্ষদর্শীরা। পরে বন বিভাগের কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে বালতি ও কলসি নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। তাপপ্রবাহের মধ্যে বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভে আগুন ঠিক কখন, কেন ও কীভাবে লেগেছে, সে বিষয়ে পরিষ্কার কিছু বলতে পারেননি বন বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণ এখন প্রথম কাজ। অগ্নিকান্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, তাদের ধারণা, আগুন লেগেছে অন্তত দুদিন আগে। ঘটনাস্থল বন বিভাগের অফিস থেকে বেশ দূরে। ওই এলাকায় বাঘসহ বন্যপ্রাণীর উপস্থিতিও অনেক বেশি। তাই মানুষের প্রবেশ কম। এজন্য আগুন লাগার খবর পেতে দেরি হয়েছে।
সুন্দরবনে লাগা এই আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে বলে দাবি করেছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। এর আগেও সুন্দর বনে আগুন লেগেছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের দৈর্ঘ্য ৭১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে সুন্দরবন ১২৫ কিলোমিটার, নদীর মোহনা ও ছোট-বড় দ্বীপমালা ২৭৫ কিলোমিটার, সমতল ও সমুদ্রসৈকত ৩১০ কিলোমিটার। দেশের ২৫ শতাংশ জনগণ যেমন এ উপকূল অঞ্চলে বসবাস করে, তেমনি জাতীয় অর্থনীতিতে জিডিপির কমবেশি প্রায় ২৫ শতাংশ অবদানও এ অঞ্চলেরই। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও এ অঞ্চল, এর অবকাঠামো এবং বসবাসকারী জনগণের অর্থনৈতিক জীবন নানা দৈব-দুর্বিপাক, বৈষম্য, অবহেলা আর অমনোযোগিতার শিকার।
বলা যায়, জলবায়ুর পরিবর্তন এবং ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশর অবস্থানের কারণে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সবচেয়ে বেশি মোকাবিলা করতে হয় সুন্দর বনকে। আর মায়ের আঁচলের মতো ঢাল হয়ে খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের উপকূল রক্ষা করে চলছে আমাদের সুন্দরবন। বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা ছোট-বড় ঘূর্ণিঝড়ের সামনে সুন্দরবন বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, ফলে এটি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং আমাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কমে যায়। অথচ এই বনের প্রতি আমাদের মনোযোগহীনতা ও উদাসীনতার শেষ নেই।
মনে রাখতে হবে, বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকাতে বনায়ন বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। আর বাংলাদেশে এমনিতেই প্রয়োজনীয় বনভূমি নেই। একটি দেশের শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা উচিত, কিন্তু তা আমাদের নেই। আর আইলা, সিডর কিংবা বুলবুলই শেষ দুর্যোগ নয়, বরং সামনে আরও বড় বড় দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হতে পারে। সুন্দরবন আমাদের পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলাসহ আমাদের জাতীয় জীবনে কতটা ভূমিকা রাখছে, তা বর্ণনাতীত। তাই এই বনের কাছে আমাদের ঋণের শেষ নেই। সুন্দরবনকেন্দ্রিক জীবিকানির্বাহ করছে তাদের বিকল্প আয়ের পথ গড়ে তুলতে হবে- যাতে তারা বনের ক্ষতিসাধন না করে। বনের ভেতর অভয়াশ্রম গড়ে তোলাসহ সুন্দরবন রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শুধু সুন্দরবন রক্ষা নয়; বরং দেশের সব বনায়ন রক্ষাসহ বনায়ন বৃদ্ধিতেও মনোযোগ দেওয়া জরুরি।