আবার বেড়েছে প্রবাসী আয়। চলতি বছরের এপ্রিল মাসের শেষ দিনে প্রবাসীরা ১৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় দেশে পাঠিয়েছেন। ফলে বিদায়ী এপ্রিল মাসে প্রবাসী আয় ২০৪ কোটি ৩০ লাখ ডলারে পৌঁছেছে- যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, গত মাসের প্রথম ২৯ দিনে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ছয় কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। তবে শেষ দিনে হঠাৎ করে এই আয় দ্বিগুণ হয়ে যায়। এপ্রিলের প্রথম ১৯ দিনে প্রবাসী আয় এসেছিল ১২৮ কোটি ১৫ লাখ ডলার। মাসের প্রথম ২৯ দিনে যা বেড়ে হয় ১৯০ কোটি ৮০ ডলার।
অনেক সময় প্রবাসী আয় আগে এলেও বিভিন্ন কারণে তা হিসাবে যুক্ত হয় না। মাসের শেষে হিসাব হালনাগাদ করা হয়। এ কারণেও শেষ দিনে আয় বাড়তে পারে। এপ্রিল মাসে ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হয়েছে। দেশে সাধারণত ঈদের মাসে প্রবাসী আয় বেশি পরিমাণে এলেও এপ্রিল মাসে আসা আয়কে অন্য মাসগুলোর তুলনায় ব্যতিক্রম বলে মনে করছেন না ব্যাংকাররা। বরং সাম্প্রতিক সময়ের অন্য মাসের তুলনায় এপ্রিলে প্রবাসী আয় শেষ পর্যন্ত খানিকটা কম হতে পারে, এমন আশঙ্কা করা হয়েছিল। তবে শেষ দিনের আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। তবে সংকটে থাকা কিছু ব্যাংক বেশি দামেও ডলার কিনছে। যদিও ডলারের আনুষ্ঠানিক দর ১১০ টাকা। ফলে আমদানিকারকদের অতিরিক্ত দামে ডলার কিনে আমদানি দায় মেটাতে হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে ভোক্তার ওপর। দেশে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হার এখনো ৯ শতাংশের ওপরে রয়ে গেছে।
বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। সঙ্গত কারণেই দেশের জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করা সার্বিক অগ্রগতির প্রশ্নেই জরুরি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মানুষ সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। এর ফলে, দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে প্রবাসী আয়। কিন্তু যদি মাঝে মাঝে প্রবাসী আয় সংক্রান্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে তা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগজনক।
তবে ডলারের দর বাজারভিত্তিক না হওয়ায় এখনো হুন্ডিকে বেছে নিচ্ছে প্রবাসীরা। আর এই সুযোগ নিচ্ছে দেশি-বিদেশি অর্থ পাচারকারী একটি চক্র। যে কারণে ২০২৩ সালে দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক জনশক্তি রপ্তানি করেও প্রবাসী আয় তেমন বাড়েনি। এজন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডলারের দর বাজারভিত্তিক করার বিকল্প নেই।
এটা সত্য, ডলারের দর বাজারভিত্তিক না হওয়ায় এখনো হুন্ডিকে বেছে নিচ্ছে প্রবাসীরা, আবার এই সুযোগ নিচ্ছে অর্থ পাচারকারী চক্র। এ ব্যাপারে আর বিশেষজ্ঞদের মতো বিবেচনায় নিয়ে ডলারের দর বাজারভিত্তিক করার বিষয়টিও এড়ানো যাবে না। মনে রাখা দরকার, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ফলে দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক জনশক্তি রপ্তানি করেও প্রবাসী আয় সেভাবে বাড়েনি। প্রাসীদের রেমিট্যান্স নিয়ে দেশে-বিদেশে একটি চক্র অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত। ওই চক্রটি বিভিন্নভাবে খোলাবাজারের ডলার বেশি দর নিচ্ছে। অন্যদিকে, যখন হুন্ডির এই চক্রটি এতই সংঘবদ্ধ তাদের শনাক্ত করা কঠিন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈধ পথে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স যেন পাঠায় সেটিকে সামনে রেখেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।