দেশে চিনি আমদানির ব্যয় বৃদ্ধিতে রেকর্ড হচ্ছে বলে সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে। জানা যাচ্ছে, গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ পরিমাণ চিনি আমদানি করা হয়েছে। এমনকি পণ্য আমদানিতে সরকারের কড়াকড়ি আরোপের পরও চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে চিনি আমদানিতে প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ। এছাড়া চিনি সংক্রান্ত উদ্বেগও উঠে আসছে- যা আমলে নিতে হবে। বিশেষ করে চিনির সঙ্গে স্থূলতার সম্পর্ক রয়েছে- যা ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি।
বলা দরকার- একদিকে আমদানি নির্ভরতা কমানো যেমন জরুরি, তেমনিভাবে চিনির বাড়তি আমদানির পরও বাজারের দামে তেমন প্রভাব পড়েনি বলেও জানা যাচ্ছে। উল্টো চড়া মূল্যে চিনি কিনছে ভোক্তারা। গত নভেম্বরের শুরুতে চিনির মূল্য হ্রাস এবং বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে কাস্টমস শুল্ক অর্ধেক করা হয়েছিল। তার প্রভাব পড়েনি বাজারে এমন তথ্যও সামনে আসছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে চিনি আমদানি এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যে উদ্বেগ উঠে আসছে তা আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এটাও আলোচনায় এসেছে যে, ডায়াবেটিস রোগীরা জেনে বা না জেনে চিনি থাকা অনেক প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার খাচ্ছেন- যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এই পরিস্থিতিতে দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়ে চললেও চিনির আমদানিও সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলায় স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ফলে এটি কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগের অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরের চেয়ে চলতি অর্থবছরের একই সময়ে চিনি আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির হার ৪০ শতাংশ। গত জুলাই-ডিসেম্বরে ৫০ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের চিনি আমদানি করা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে চিনি আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল ৪১ কোটি ২৬ লাখ ডলার। প্রক্রিয়াজাত নানা খাদ্য উৎপাদনে প্রচুর চিনি, লবণ ইত্যাদি উপাদান ব্যবহৃত হয়। এসবের মাত্রা বেশি হলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। শিশু-কিশোরসহ সব বয়সিরা কমবেশি অনেক প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার খাচ্ছে। অন্যদিকে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা পরোক্ষভাবে অনেক খাদ্যের সঙ্গে চিনি গ্রহণ করছে। এতে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে- যা সহজভাবে দেখার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য মতে, ২০২৩ সালে চিনি আমদানিতে ১২ হাজার ৭১০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। আগের বছরে এই পণ্যটি আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল ৯ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা। এ হিসাবে চিনি আমদানি ব্যয় বছরের ব্যবধানে প্রায় ৩৯ শতাংশ বেড়েছে।
আমরা বলতে চাই, একদিকে দেশে চিনি আমদানির ব্যয় বৃদ্ধিতে রেকর্ড হচ্ছে অন্যদিকে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা পরোক্ষভাবে অনেক খাদ্যের সঙ্গে চিনি গ্রহণ করছে। এতে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়লে তা কতটা উদ্বেগজনক। ফলে এ সংক্রান্ত পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
ব্যবসায়ী সংগঠন এবং শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে চিনির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ লাখ টন। বর্তমানে চিনির চাহিদা প্রায় ২৪ লাখ টন। অর্থাৎ গড়ে প্রতি বছর চিনির চাহিদা বেড়েছে এক লাখ টন। এখন দেশীয় চিনির উৎপাদন চাহিদার তুলনায় মাত্র ১ শতাংশের কম। এখন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয় কমবেশি ২১ হাজার ৩০০ টন। জানা যায়, বেশিরভাগ চিনি আমদানি করে চার-পাঁচটি বড় শিল্প ও বাণিজ্যকগোষ্ঠী। এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, পরিশোধিত চিনির বড় অংশ বিভিন্ন শিল্পের পণ্য উৎপাদনে ব্যবহারের জন্য আমদানি করা হয়। সম্প্রতি পরিশোধিত চিনির একটি অংশ আসছে চোরাচালানের মাধ্যমে যা উদ্বেগজনক। কেননা, চোরাচালানের মাধ্যমে কর ফাঁকি দিয়ে প্রচুর চিনি আসছে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, চিনি আমদানিতে রেকর্ড। অন্যদিকে, ডায়াবেটিস রোগীরা জেনে বা না জেনে চিনি থাকা অনেক প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার খাচ্ছেন- যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া চোরাচালানের মাধ্যমে কর ফাঁকি দিয়ে প্রচুর চিনি আসছে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা জরুরি।