মানব পাচার রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নিন
প্রকাশ | ০৪ মে ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
সরকারের নানা ধরনের উদ্যোগ ও তৎপরতা সত্ত্বেও মানব পাচার কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। নানাভাবে মানব পাচার হচ্ছে। সম্প্রতি ২০ জনের একটা চক্র পারস্পরিক যোগসাজশে উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে ৫২ জনকে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার করে। লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে এর মধ্যে ৮ জন মারা যায়। মারা যাওয়া ৮ বাংলাদেশির লাশ দেশে পৌঁছেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিউনিসিয়া থেকে উড়োজাহাজে করে তাদের মরদেহ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনা হয়। নিহত বাংলাদেশিরা হলেন মামুন শেখ, সজল বৈরাগী, নয়ন বিশ্বাস, রিফাত শেখ, সজীব কাজী, ইমরুল কায়েস, মো. কায়সার ও রাসেল শেখ। তাদের মধ্যে পাঁচজনের বাড়ি মাদারীপুরে ও তিনজনের বাড়ি গোপালগঞ্জে। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনরা বলছেন, ৩০ জন যেতে পারবেন এমন একটি ছোট নৌকায় ৫২ জনকে নিয়েছিল দালালরা। যে আটজন মারা গেছেন, তাদের নৌকার পাটাতনের নিচে জোর করে রাখা হয়েছিল। তারা অক্সিজেন সংকটের কারণে পাটাতন থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু দালালরা তাদের মারধর করে আবার সেখানে পাঠান। এভাবে নির্যাতন ও অক্সিজেন সংকটের কারণেই তারা মূলত মারা গেছেন।
ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইতালি, গ্রিস, পর্তুগাল, সাইপ্রাস, স্পেন এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, ওমান, কাতার, ইরাক ও লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের বেশি পাচার করা হয়। বাংলাদেশ থেকে মানব পাচারকারীরা অন্তত ১৮টি রুট ব্যবহার করে। তারা বিভিন্ন দেশে বসে এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। জানা গেছে, দালাল ও তাদের সহযোগীদের বিদেশে লোক পাঠানোর বৈধ লাইসেন্স নেই। প্রশাসনের নজরদারি ও স্থানীয় মানুষের সচেতনতার অভাবে দালালরা বিদেশে পাঠানোর নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ইউরোপের কোনো দেশে পাঠাতে একেকজনের কাছে থেকে নেওয়া হয় ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রধান টার্গেট এলাকার বেকার যুবক। টাকা নিয়ে প্রথমে তাদের ভ্রমণ ভিসায় দুবাই পাঠানো হয়। সেখানে দালাল চক্রের আরেক গ্রম্নপ তাদের দু-তিন দিন দুবাইয়ে রাখে। সেখান থেকে চার্টার্ড বিমানে পাঠানো হয় লিবিয়ায়। সুবিধামতো সময়ে দালালরা নৌকা বা ট্রলারে করে তাদের ইতালির উদ্দেশে পাঠিয়ে দেয়। ভাগ্যক্রমে দুই-একজন ইতালিতে যেতে পারলেও বেশির ভাগই সাগরে নিখোঁজ হন বা মারা যান। এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। দালাল ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারলে, এর পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে।
মনে রাখতে হবে, মানব পাচার বাংলাদেশের অন্যতম শিরঃপীড়ায় পরিণত হয়েছে। জল-স্থল-আকাশপথে প্রতিদিন মানব পাচার চলছে। মূলত জীবন ও জীবিকার কারণে, দেশে কর্মসংস্থানের অভাবে, দারিদ্র্যের পীড়নে মানুষ পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে। এসব মানুষের বেশির ভাগই প্রতারিত হচ্ছে, হচ্ছে সর্বস্বান্ত। অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রাপথে মারা যাচ্ছে।
আমরা মনে করি, মানব পাচার ঠেকাতে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যথাযথ পদক্ষেপ ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে পাচারকারীদের শনাক্ত ও অভিযান পরিচালনা করতে হবে। মানব পাচার বন্ধ করতে সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগ জরুরি।