শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

বজ্রপাতে প্রাণহানি পরিকল্পিত উদ্যোগ জরুরি

  ০৩ মে ২০২৪, ০০:০০
বজ্রপাতে প্রাণহানি পরিকল্পিত উদ্যোগ জরুরি

বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, দেশের তিন জেলায় বজ্রপাতে নারীসহ ছয়জনের মৃতু্য হয়েছে। এর মধ্যে রাঙামাটির সদর ও বাঘাইছড়ি উপজেলায় বজ্রপাতে তিনজনের মৃতু্য হয়েছে। এ সময় আরো অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার জেলা শহরের সিলেটি পাড়া এবং বাঘাইছড়ি উপজেলার রূপাকারী ইউনিয়ন ও সাজেক ইউনিয়নে এসব ঘটনা ঘটে। এ ছাড়াও কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার দুই ইউনিয়নে বৃষ্টি থেকে লবণ রক্ষা করতে গিয়ে বজ্রপাতে দুই চাষির মৃতু্য হয়েছে। খাগড়াছড়িতেও একজনের মৃতু্য হয়েছে।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, বজ্রপাতের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন ও উষ্ণায়নের সম্পর্ক রয়েছে। এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এ সময় অসহনীয় গরমে বজ্রপাতের আশঙ্কা ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বাতাসে সিসার পরিমাণ বাড়া, অধিক ধাতব পদার্থের ব্যবহার, মোবাইল ফোনের অতি ব্যবহার, মোবাইল ফোনের টাওয়ারের সংখ্যার আধিক্য, বনভূমি বা গ্রামাঞ্চলে উঁচু গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া, জলাভূমি ভরাট ও নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে বজ্রপাতের সংখ্যা বাড়ছে। এবার দেখা যাচ্ছে, সেপ্টেম্বর মাসেও বজ্রপাতে মানুষ মারা যাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই সার্বিক এ পরিস্থিতি আমলে নেওয়া জরুরি।

উলেস্নখ্য, জাপানের জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেমের তথ্যানুযায়ী, বজ্রপাতে বেশি মানুষ মারা যায় বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাট, বগুড়া, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলায়। মাঠে ফসলের ক্ষেতে কাজ করা বা মাছ ধরার সময় বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে বজ্রপাতে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এর প্রভাব পড়ছে সর্বত্র। ফলে, দেশে বজ্রপাত বেড়েছে।

দেশে প্রতি বছর গড়ে ২ হাজার ৪০০ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। আগে তালগাছ বজ্রপাত ঠেকাত। এখন তালগাছ ও উঁচু গাছ নেই বললেই চলে। বিশ্বে বছরে বজ্রপাতে যত মানুষ মারা যাচ্ছে, তার অর্ধেকই বাংলাদেশে- এই তথ্য অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। বজ্রপাতে বিপুলসংখ্যক গাছপালা ও গবাদি পশু মারা যায়। এ ছাড়া মৃতু্যর চেয়ে বেশি মানুষ আহত হন। আহতদের চিকিৎসা বা ওষুধ নেই দেশের হাসপাতালগুলোতে এমন তথ্যও প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে। এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বাংলাদেশে তাপমাত্রা বেড়েছে। তার প্রমাণ আমরা বেশ কদিন ধরে পাচ্ছি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্যই বাড়ছে বজ্রপাত। বাংলাদেশে বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করা হয়েছে। বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় এক কোটি তালগাছ লাগিয়ে ঠেকানোর পরিকল্পনা নেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। কোথাও কোথাও তালগাছের চারা রোপণ বা বীজবপন করা হলেও তা রক্ষণাবেক্ষণ না করায় তা নষ্ট হয়েছে বা গরু-ছাগলে খেয়ে ফেলেছে। এ ছাড়া রাস্তা সম্প্রসারণের নামে তালগাছসহ বড় বড় গাছও কাটা হচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, দুর্যোগকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু যথাযথ উদ্যোগ নিলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। বজ্রপাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগ জরুরি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে