শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

ওষুধের দাম বৃদ্ধি দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিন

  ০১ মে ২০২৪, ০০:০০
ওষুধের দাম বৃদ্ধি দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিন

দেশে জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন ওষুধের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। বিশেষ করে অসংক্রামক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের দাম বেশি বেড়েছে। কারণ এসব ওষুধ রোগীদের নিয়মিত সেবন করতে হয়। সেই সুযোগে কোম্পানিগুলো ওইসব ওষুধের দাম বাড়াচ্ছে। দেশে ওষুধের দাম বৃদ্ধি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানি করা অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে অব্যাহতভাবে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি রোধে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

১১ মার্চ প্রকাশিত 'দুই সপ্তাহে ওষুধের দাম বেড়েছে ৭ থেকে ১৪০ শতাংশ' শিরোনামের একটি প্রতিবেদন যুক্ত করে এই রিট আবেদন করে কনজু্যমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই মাসে দেশের বিভিন্ন কোম্পানি তাদের উৎপাদিত ওষুধের দাম লাগামহীনভাবে বাড়িয়েছে। অন্তত ৫০ ধরনের ওষুধের দাম ২০ থেকে সর্বোচ্চ ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। চলতি মার্চের প্রথম সপ্তাহেও দাম বাড়ানো হয়েছে বেশ কয়েকটি ওষুধের। সবচেয়ে বেশি বাড়ানো হয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট, ডায়াবেটিসের রোগীদের ইনসুলিন ও ইনজেকশনের দাম। এছাড়া হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা, হাঁপানিসহ বিভিন্ন ওষুধ এবং ভিটামিনের দামও। জ্বর-সর্দির ট্যাবলেট-ক্যাপসুল, বিভিন্ন অসুখের সিরাপের দামও বাদ যায়নি।

গত বছরের মে মাসে দেশের শীর্ষস্থানীয় ছয় প্রতিষ্ঠানের তৈরি ২৩৪টি জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দাম ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ওষুধের দাম বাড়ায় রোগীর চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধিকে ওষুধের দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে দায়ী করছে ওষুধ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও আইন কর্মকর্তা বলেন, দেশের ওষুধের বাজারে প্রায় ১ হাজার ৬৫০টি জেনেরিকের ২৫ হাজার, ৩০ হাজার প্রোডাক্ট চালু আছে। এর মধ্যে ১১৭টি জেনেরিকের ৪৬০টি ওষুধের দাম ঔষধ প্রশাসন নির্ধারণ করে। অন্যগুলো কোম্পানি খরচ হিসেবে একটি দাম প্রস্তাব করে। আমরা ভ্যাট সংযোজন করে দাম সমন্বয় করে দেই। ওষুধ শিল্প সমিতির দাম বাড়ানোর প্রাথমিক আলোচনা শুনেছি। কিন্তু তারা এখনো আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো আবেদন করেনি। তারা আবেদন করলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, ভোক্তা এবং প্রতিষ্ঠান সবার স্বার্থ বিবেচনা করে নিয়মানুযায়ী যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করবে। ব্যক্তির চিকিৎসা ব্যয়ের অর্ধেকই খরচ হচ্ছে ওষুধ কিনতে। আর এ টাকার ৯৩ ভাগ যাচ্ছে রোগীর পকেট থেকে। ওষুধের পেছনে বছরে গড় খরচ প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। মাত্র ছয় ভাগ বিনামূল্যে পাওয়া যায় সরকারি হাসপাতাল থেকে। সম্প্রতি সরকারের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের গবেষণায় এসব তথ্য জানা গেছে।

আমরা মনে করি, নিয়মিত বাজার তদারকির ব্যবস্থা না থাকলে ওষুধের দাম আরও বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে, সাধারণ মানুষ ওষুধ কেনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। গত কয়েক বছরে এই খাতের উন্নতি বেশ দৃশ্যমান। তবে এভাবে অযৌক্তিকভাবে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এভাবে লাগামহীন যদি ওষুধের দাম বাড়তেই থাকে তা হলে সাধারণ রোগী, যারা স্বল্প আয়ের এবং প্রবীণ অবসরে আছেন তাদের অবস্থা কী হতে পারে। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে