কিশোর গ্যাং
নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিন
প্রকাশ | ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
কিশোর গ্যাংয়ের ভয়াবহতা বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় এসেছে। এছাড়া এর আগে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে হার্ডলাইনে যাচ্ছে সরকার- এমনটিও জানা গিয়েছিল। হত্যাকান্ড থেকে শুরু করে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে যৌন হয়রানি, গণধর্ষণ, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান এবং চাঁদাবাজি-দখলবাজিসহ ভয়ংকর নানা অপরাধ অহরহ সংঘটিত হয়েছে- যা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, ঢাকার মিরপুর, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেশি। এছাড়া ঢাকার ৫০টি থানার মধ্যে ১০টি থানা এলাকায় এসব কিশোর অপরাধ দেখা যায়। আর এমনটি জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান। উলেস্নখ্য, তিনি বলেছেন, 'আজকের কিশোর আগামী দিনে নেতৃত্ব দেবে। ৯ থেকে ১৮ বছর বয়সি কেউ অপরাধ করলে আমরা তাকে কিশোর অপরাধী বলছি। এই বয়সি কিশোররা দলবদ্ধভাবে অপরাধ করলে তাকে আমরা বলছি 'কিশোর গ্যাং।' কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম করে থাকে পুলিশ। যেখানে নানা ধরনের উদ্যোগ বা তৎপরতার বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। কিশোর গ্যাং অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশের বিভিন্ন সভা-সমাবেশও করা হয়েছে। স্কুলে-স্কুলে গিয়েও কিশোর গ্যাং অপরাধ প্রতিরোধে বিভিন্ন কার্যক্রম চালানোসহ পরিবার থেকে মা, বাবা বড় ভাইবোনের ভূমিকা পালনের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে কিশোর গ্যাংয়ের ভয়াবহতা আমলে নেওয়া যেমন জরুরি, তেমনি কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে প্রতিকার ও প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নেরও বিকল্প নেই। প্রসঙ্গত বলা দরকার, বিভিন্ন সময়ে- কিশোর গ্যাং কতটা ভয়াবহ এ সংক্রান্ত উদ্বেগ উঠে এসেছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার- কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পিত ও বিশ্লেষণপূর্বক উদ্যোগ গ্রহণ করা। এছাড়া মনে রাখা দরকার, শিশু-কিশোররা যদি বিপথে চলে যায়, নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, তবে তা পুরো দেশ ও জাতির জন্য উদ্বেগের হয়ে দেখা দেবে। সঙ্গত কারণেই এই বিষয়গুলো সহজভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। মনে রাখা জরুরি, হরহামেশাই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে গ্যাং কালচার- এমন আলোচনাও উঠে এসেছে বিভিন্ন সময়ে। কিশোর অপরাধীরা ঘটিয়ে চলছে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ইভটিজিংসহ হত্যাকান্ডের মতো অপরাধ। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, প্রেম নিয়ে বিরোধ, মাদকদ্রব্যসহ নানা অপরাধে অনেক কিশোর-তরুণ নিজেদের মধ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য শুরুর দিকে কেবল ঢাকাকেন্দ্রিক থাকলেও এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ায় রীতিমতো চ্যালেঞ্জে পড়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো- এমনটিও এর আগে জানা গিয়েছিল। এছাড়া, বিভিন্ন সময়েই সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, অনেকগুলো প্রভাবক জড়িত থাকার কারণে 'গ্যাং কালচার'-এর নিয়ন্ত্রণ আনতে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠছেন কর্তৃপক্ষ। অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় নানাভাবে এর সুযোগ নিচ্ছে কিশোর অপরাধীরা। এছাড়া কোমলমতি কিশোরকে ব্যবহার করে ফসল ঘরে তুলছে 'গ্যাং'-এর পৃষ্টপোষকরা- যা ভয়ানক বিষয় বলেই প্রতীয়মান হয়। ফলে এই বিষয়গুলোও আমলে নেওয়া জরুরি। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ জানিয়েছিলেন, কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে পারিবারিক ও সামাজিক উদ্যোগ দরকার। রাজনৈতিক নেতৃত্বকেও এগিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। তবে শুধু পুলিশি তৎপরতায় এদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। ফলে এই বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, কিশোর গ্যাংয়ের সামগ্রিক তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করে উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে তার ভয়াবহতা হবে আরো বেশি এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। আর যখন জানা যাচ্ছে, ঢাকার মিরপুর, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেশি। এছাড়া ঢাকার ৫০টি থানার মধ্যে ১০টি থানা এলাকায় এসব কিশোর অপরাধ দেখা যায়- তখন এটিও আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।