শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর থাইল্যান্ড সফর

সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকুক
  ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রীর থাইল্যান্ড সফর

বাংলাদেশের নিকট প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড। থাইল্যান্ডের সঙ্গে আমাদের রয়েছে দীর্ঘ দিনের সুসম্পর্ক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাই প্রধানমন্ত্রী স্র্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে গত ২৪ এপ্রিল বুধবার থেকে ছয় দিনের সরকারি সফরে থাইল্যান্ড রয়েছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে থাই সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রী গার্ড পরিদর্শন করেন। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বন্ধুত্ব ঐতিহাসিক, ভাষাগত এবং অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গভীরে নিহিত। আমাদের দুই দেশের মধ্যে উষ্ণ সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সহযোগিতার বহুমুখী ক্ষেত্রে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কের পাশাপাশি হাসপাতাল ও চিকিৎসা খাতে বিনিয়োগের সুযোগ নিতে থাইল্যান্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের সঙ্গে তার কার্যালয় গভর্নমেন্ট হাউসে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশি চিকিৎসাকর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি তাকে (থাই প্রধানমন্ত্রী) বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসা সুবিধায় বিনিয়োগের সম্ভাবনা অন্বেষণ করার প্রস্তাবও দিয়েছিলাম। দ্বিপক্ষীয় ও একান্ত বৈঠকের পরে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দুই দেশ পাঁচটি দলিলে সই করে। এর মধ্যে একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক এবং একটি আগ্রহপত্র (এলওআই) স্বাক্ষরিত হয়। এ ছাড়াও বৈঠকে দুই নেতা পারস্পরিক বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। বাণিজ্য সহযোগিতার বিষয়ে, বিশেষ করে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের আওতা বাড়ানোর জন্য দীর্ঘ পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি দুই নেতা শক্তিশালী দ্বিমুখী প্রবৃদ্ধি অর্জনে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন। সামুদ্রিক যোগাযোগের বিষয়ে রণং বন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে সরাসরি শিপিং লাইন নিয়ে দুই পক্ষ আলোচনা করেছে। দুই পক্ষ ২০২৪ সালের মধ্যে একটি মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাণবন্ত অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে আমরা থাইল্যান্ডকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং গতিশীল অংশীদার হিসেবে দেখছি। আমি প্রধানমন্ত্রীকে (থাভিসিন) বাংলাদেশে বিনিয়োগ সহজীকরণ এবং ব্যবসা সহজ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছি। আমি থাই পক্ষকে আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলোতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ এবং বিশেষভাবে একটি এসইজেড নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। দুই দেশের মধ্যে ইতোমধ্যে কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের জন্য একটি চুক্তি রয়েছে। বাংলাদেশের জন্য থাইল্যান্ড জ্বালানি সহযোগিতায় নিয়োজিত একটি সম্ভাব্য অংশীদার। জ্বালানি সহযোগিতার সম্ভাবনা অন্বেষণ করতে শক্তি সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এখানে স্বাক্ষরিত দ্বিতীয় নথি। দুই প্রধানমন্ত্রী বিমসটেক কাঠামোর অধীনে আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা করেছেন। চলতি বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া শীর্ষ সম্মেলনে বর্তমান সভাপতি ও আয়োজক হিসেবে থাইল্যান্ড বাংলাদেশের কাছে সভাপতির দায়িত্ব হস্তান্তর করবে।

শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাভিসিনকে বাংলাদেশ সফরেরও আমন্ত্রণ জানান। থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন ফ্রা ভাজিরা-ক্লাওচা-উয়ুয়া এবং রানি সুথিদা বজ্রসুধা-বিমলা-লক্ষণের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার ব্যাংককে থাই রাজার ডুসিট প্রাসাদের অ্যামফোর্ন সাথার্ন থ্রোন হলে তারা সাক্ষাৎ করেন।

এটা সত্য, দুই দেশের মধ্যে উষ্ণ সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সহযোগিতার বহুমুখী ক্ষেত্রে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা মনে করি এই সম্পর্ককে কাজে লাগাতে হবে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক দৃঢ় করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন থেকে নানা দেশ সফর করছেন। এর ফলে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি বিভিন্ন দেশে ইতিবাচকভাবে প্রতিফলিত ও কার্যকর হচ্ছে। আমরা আশা করি, প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ আরও বেগবান হোক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে