তামাকজনিত রোগ সঠিক উদ্যোগ নিন
প্রকাশ | ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
দেশে প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক সেবন করে এবং প্রায় ১৫ লাখ মানুষ তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত বলে জানিয়েছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ ও পস্ন্যাটফর্ম ডক্টরস ফাউন্ডেশন। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তামাক কর বৃদ্ধির দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সংগঠন দুটি। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর দেশে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মৃতু্যবরণ করে। তামাকজনিত বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় সরকারের ব্যয় এখাত থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব আয়ের তুলনায় অনেক বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, অথচ একই সময়ে তামাকখাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয়ের (২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা) চেয়ে অনেক বেশি। তাই আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সব ধরনের তামাক পণ্যের ওপর কার্যকর করারোপের মাধ্যমে দাম বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে সংগঠন দুটির নেতারা বলেন, তামাক পণ্যের দাম বাড়লে ব্যবহার কমে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এটি প্রমাণিত। সাম্প্রতিক সময়ে ই-সিগারেটের ব্যবহার বাড়ছে। যা আরও অধিক ক্ষতিকর। 'তামাক থেকে দূরে সরি, সুস্থ-সবল প্রজন্ম গড়ি' এমন এখন প্রায়ই উচ্চারিত হচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে তরুণ প্রজন্মকে ধূমপান ও তামাক থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। মূলত তরুণ এবং শিশুদের টার্গেট করে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস উৎপাদন ও বাজারজাত করছে তামাক কোম্পানিগুলো। যেখানে রয়েছে উদ্ভাবনী কৌশল, সুগন্ধি ব্যবহার ও আকর্ষণীয় ডিজাইন। এতে কিশোর এবং তরুণদের মধ্যে বিশেষত বিদ্যালয়গামী শিশুদের মধ্যে এসব তামাকপণ্যের জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে বাড়ছে। যা তরুণ প্রজন্মের জন্য উদ্বেকজনক। তবে, হতাশা নিয়েই বলতে হয় দেশে তামাকনিয়ন্ত্রণ আইন দুর্বল হওয়ায় ই-সিগারেট বিক্রি নিয়ন্ত্রিত তো হচ্ছেই না বরং ক্ষতিকারক এসব পণ্য দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়ছে। এটি প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন।
এটা সত্য, বাংলাদেশে তরুণসমাজ ই-সিগারেটে আসক্ত হয়ে পড়ছেন। এই সিগারেটের ভেতরে নিকোটিন, প্রোপাইলিন গস্নাইকল অথবা ভেজিটেবল গিস্নসারিন এবং সুগন্ধি মিশ্রিত থাকে। যার কারণে তরুণরা এর প্রতি আকৃষ্ট হয়। এ ছাড়াও শুরুর দিকে ই-সিগারেট সেবনের সময় অধিকাংশ লোকই নিশ্চিত ছিলেন না যে, এতে নিকোটিন আছে কিনা। সেবনকারী ৬৫ ভাগই স্বাদের কারণে ই-সিগারেট ব্যবহার করার চেষ্টা করেন। আবার স্টাইলের কারণেও অনেকে ই-সিগারেট ব্যবহার করছেন। ভারতসহ বিশ্বের ৪২টি দেশ এটা নিষিদ্ধ করেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এটা নিষিদ্ধে আইন সংশোধন করেছে। এর আগে বাংলাদেশের ১৫৩ জন সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত একটি চিঠিতে সুপারিশ করেছিলেন, যেন বাংলাদেশে ই-সিগারেট আমদানি, উৎপাদন, বিক্রি, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। প্রকাশ্যে ধূমপান করলে ৩০০ টাকা জরিমানা। তা সত্ত্বেও মানুষ প্রকাশ্যে ধূমপান করছে। বাসের চালক হেলপারও প্রকাশ্যে ধূমপান করছে। যেন দেখার কেউ নেই। প্রতিবাদ করলেও কোনো ফল হয় না। হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন পাবলিক পেস্নস ও পাবলিক পরিবহণে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা (ডিএসএ) থাকলে অধূমপায়ীদের পাশাপাশি সেবাকর্মীরাও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন।
মনে রাখতে হবে, তামাক সেবনের ক্ষেত্রে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বাংলাদেশে। এমন পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা করেছেন। আমরা মনে করি, আমাদের সামনে এটি একটি বড় মাইলস্টোন। এই লক্ষ্য অর্জন করতে গেলে ধাপে ধাপে আমাদের কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশকে অবশ্যই তামাকমুক্ত করতে হবে।