তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা যথাযথ উদ্যোগ জরুরি
প্রকাশ | ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হলে তা কতটা ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশে গত বছর নিষ্ফলা মৌসুমে প্রায় ১ কোটি ১৯ লাখ মানুষ (গবেষণার আওতায় আসা ব্যক্তিদের ৩১ শতাংশ) তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার উচ্চমাত্রার সম্মুখীন হয়ে থাকতে পারে। তাদের মধ্যে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচু্যত হয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা বা শরণার্থী শিবিরের ৬৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীও রয়েছে। আমরা মনে করি, মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সম্মুখীন হলে তা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে, যা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
লক্ষণীয়, এটা যখন জানা যাচ্ছে, ১ কোটি ১৯ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার উচ্চমাত্রার সম্মুখীন হয়ে থাকতে পারে- আর এসব মানুষের তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় বিশেষভাবে প্রভাব রেখেছে প্রতিকূল আবহাওয়া, বৈশ্বিক যুদ্ধ-সংঘাত ও উচ্চমাত্রায় দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্য মূল্যস্ফীতি। তখন এই বিষয়গুলো যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনিভাবে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর পদক্ষেপও নিশ্চিত করতে হবে।
উলেস্নখ্য, বৈশ্বিক খাদ্যসংকট নিয়ে বুধবার ফুড সিকিউরিটি ইনফরমেশন নেটওয়ার্কের (এফএসআইএন) প্রকাশিত প্রতিবেদন ২০২৪-এ এসব তথ্য উলেস্নখ করা হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিসহ ১৬টি আন্তর্জাতিক সংস্থা এ নেটওয়ার্কের সদস্য। এটির অর্থায়নে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়েই গত বছর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। ওই বছর ২৮ কোটি ২০ লাখের মতো মানুষ সংঘাত, বিশেষ করে গাজা ও সুদানে লড়াই চলার কারণে তীব্র ক্ষুধার সম্মুখীন হয়। অন্যদিকে সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া দরকার, বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিম্নমধ্যম আয়ের দেশটিতে খাদ্য সংকট দীর্ঘদিনের সমস্যা। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে পালিয়ে আসায় ২০১৭ সাল থেকে এ জেলাকে জিআরএফসিতে (খাদ্য সংকট নিয়ে বৈশ্বিক প্রতিবেদন) একটি বড় খাদ্য সংকটপ্রবণ এলাকা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
আমরা বলতে চাই, যে কোনো পরিস্থিতিতেই ক্ষুধার সংকট, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মতো পরিস্থিতি সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। বরং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এটাও স্মর্তব্য, বিশ্বের ৫৮টি দেশের প্রায় ২৫৮ মিলিয়ন মানুষ ২০২২ সালে তীব্র খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হয়েছিল। আর এই তথ্য প্রকাশ করেছিল জাতিসংঘ। তখন বৈশ্বিক দ্বন্দ্ব, জলবায়ু পরিবর্তন, করোনাভাইরাসের প্রভাব ও ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের সৃষ্টি হয়েছিল। এখন যখন দেশের ১ কোটি ১৯ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন বলে জানা যাচ্ছে, তখন এটি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে আইপিসির (দ্য ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন) বিশ্লেষণে বাংলাদেশের প্রায় ৩০ শতাংশ এলাকা ও ২৩ শতাংশ জনসংখ্যাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও তাদের আশ্রয় দেওয়া কক্সবাজারের বাসিন্দারাও রয়েছেন। আমরা মনে করি, এটাও এড়ানো যাবে না যে, ২০২২ সালে রেকর্ড খাদ্যশস্য উৎপাদন ও ২০২৩ সালে খাদ্যের সহজলভ্যতার উন্নতি হলেও বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ধাক্কায় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তিই থেকেছে বলে প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়। ফলে এই বিষয়টিও সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া জরুরি।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন দেশের ১ কোটি ১৯ লাখ মানুষ- এটি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আর এসব মানুষের তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় বিশেষভাবে প্রভাব রেখেছে প্রতিকূল আবহাওয়া, বৈশ্বিক যুদ্ধ-সংঘাত ও উচ্চমাত্রায় দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্য মূল্যস্ফীতি। ফলে এই বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে। এটাও জানা যাচ্ছে যে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি পৌঁছায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশে। অক্টোবরের শেষ নাগাদ তা এসে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৬ শতাংশে। আর এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে এটি ছিল সর্বোচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণসাপেক্ষে সংশ্লিষ্টরা কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।