যে কোনো পরিস্থিতিতে শিশুদের সার্বিক সুরক্ষা জরুরি। শিশুরা কোনো কারণে ঝুঁকিতে থাকলে তা কতটা উদ্বেগের বলার অপেক্ষা রাখে না। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহ পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেখানে জনজীবনে নানা দুর্ভোগ, ভোগান্তি ও সংকট তৈরি হয়েছে। আর সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশজুড়ে তাপপ্রবাহের মধ্যে উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা। আর এমনটি জানিয়েছে বাংলাদেশের ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট। বুধবার ইউনিসেফ বাংলাদেশ অফিস থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।
আমরা বলতে চাই, দেশজুড়ে তাপপ্রবাহের মধ্যে উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা- এটি কোনোভাবেই সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। উলেস্নখ্য, ইউনিসেফ বাংলাদেশ অফিস থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে দুঃসহ তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। সারাদেশে এ অসহনীয় তাপমাত্রায় শিশুদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে ইউনিসেফ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এছাড়া এটাও উঠে এসেছে, ইউনিসেফের ২০২১ সালের শিশুদের জন্য জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিসিআরআই) অনুযায়ী, বাংলাদেশে শিশুরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে 'অতি উচ্চ ঝুঁকিতে' রয়েছে। অন্যদিকে, অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বাড়ায় শিশুদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে নবজাতক, সদ্যোজাত ও অল্পবয়সি শিশুদের জন্য। হিটস্ট্রোক ও পানিশূন্যতাজনিত ডায়রিয়ার মতো, উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাবে সৃষ্ট অসুস্থতায় এ বয়সি শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে এবং শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে যথাযথ উদ্যোগও অপরিহার্য। বিশেষ করে অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়ানোসহ করণীয় নির্ধারণ ও তার যথার্থ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ নিশ্চিত করা জরুরি।
এছাড়া বলা দরকার, শিশুদের ওপর তাপমাত্রা বাড়ায় নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সারাদেশে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে। ফলে এ পরিস্থিতিতে ইউনিসেফ বাবা-মায়েদের প্রতি তাদের সন্তানদের পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা ও নিরাপদ রাখার জন্য বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা মনে করি, এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাবা-মায়ের যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এছাড়া করণীয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদেরও প্রচার প্রচারণা বাড়ানো জরুরি। যেখানে তীব্র তাপপ্রবাহে অসুখ-বিসুখ বাড়ছে, জনজীবনে ব্যাপক ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে, হিটস্ট্রোকে মৃতু্যর ঘটনাও ঘটেছে। সেখানে শিশুরা যদি উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে তবে তা কতটা আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে, তা আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই।
আমরা বলতে চাই, তাপপ্রবাহ এবং শিশুদের ঝুঁকি সংক্রান্ত পরিস্থিতি সামগ্রিকভাবে আমলে নিতে হবে। এটা আলোচনায় আসছে যে, অস্বাভাবিকভাবে তাপমাত্রা বাড়তে থাকায়, আগে শিশু ও সবচেয়ে অসহায় জনগোষ্ঠীকে নিরাপদে রাখার প্রতি নজর দিতে হবে। এছাড়া চলমান এ তাপপ্রবাহ থেকে শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সুরক্ষার জন্য ইউনিসেফ সম্মুখসারির কর্মী, বাবা-মা, পরিবার, পরিচর্যাকারী ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছে। যেখানে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে, শিশুরা যেখানেই থাকুক না কেন তাদের জন্য ঠান্ডা জায়গার ব্যবস্থা করা, তপ্ত দুপুর ও বিকালের কয়েক ঘণ্টা বাড়ির বাইরে বেরোনো থেকে বিরত রাখা, হালকা ও বাতাস চলাচলের উপযোগী পোশাক পরা সেই সঙ্গে সারাদিন তারা যেন প্রচুর পানি পান করে- সেটাও নিশ্চিত করার বিষয়টি সামনে এসেছে। এছাড়া যদি কোনো শিশু বা অন্তঃসত্ত্বা নারীর মধ্যে 'হিট স্ট্রেস' বা তাপমাত্রাজনিত সমস্যার উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে যাওয়া, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি বা খাবার স্যালাইন পান করানো। তবে হিট স্ট্রেসের উপসর্গ তীব্র হলে হাসপাতালে নেওয়ার বিষয়টিও উঠে এসেছে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, তাপপ্রবাহ চলাকালে অসহায় পরিবার, প্রতিবন্ধী শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও প্রবীণ ব্যক্তিরাই সবার আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন, এমনকি মৃতু্যর উচ্চ ঝুঁকিতেও তারাই বেশি থাকেন। প্রতিবেশী, বিশেষ করে যারা একা থাকেন, তাদের খোঁজখবর নেওয়ার যে বিষয়টি সামনে আসছে তা আমলে নিতে হবে। এই তীব্র তাপপ্রবাহে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া, সচেতন থাকাসহ শিশুদের সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।