অভিনব কায়দায় মাদক আসছে সুদূর আমেরিকা থেকে। আমেরিকা থেকে ঢাকায় ডাকযোগে আসা কোটি টাকা মূল্যের গাঁজার চকলেট ও কেক জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। পরে পার্সেলে উলিস্নখিত ফোন নাম্বারের সূত্র ধরে ঢাকার আশুলিয়া থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. রাসেল মিয়া (২০), রমজান মিয়া (২১) ও মো. ইমরান ওরফে রাজ (২০)। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য থেকে একটি পার্সেল আসে বাংলাদেশের ডাক বিভাগের বৈদেশিক ডাক শাখায়। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পার্সেলটি জব্দ করে ডিএনসি ঢাকা মেট্রো (উত্তর)।পার্সেলটি খুলে দেখা যায়, বাচ্চাদের খেলনার প্যাকেট করে আমেরিকা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে টেট্রাহাইড্রো ক্যানাবিনল যুক্ত গাঁজার কুশ, চকলেট ও কেক। এসব মাদকের বাজার মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা। পার্সেলের ভেতরে থাকা ৬টি প্যাকেটে ছিল টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনলযুক্ত কুশ- যা আমেরিকার তৈরি। যার ওজন ১ কেজি ৩০০ গ্রাম। পার্সেলে আরও ছিলও আমেরিকার তৈরি গাঁজার চকলেট ৯টি। এছাড়া পার্সেলে ছিলও আমেরিকার তৈরি ১০টি গাঁজার কেক। ডিএনসি'র ডিজি বলেন, ক্যালিফোর্নিয়াতে এ মাদক বৈধ কিংবা অবৈধ সেটা বিষয় না। বাংলাদেশে এই মাদক অবৈধ, তাই বাংলাদেশে এই মাদক পাঠানো আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। গ্রেপ্তারদের মধ্যে একজন একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মার্কেটিং অফিসার। আমরা তদন্তে জানার চেষ্টা করব তাদের অর্থের উৎস কি এবং তারা কীভাবে অর্থ সেখানে পাঠিয়েছেন। এর সঙ্গে মানিলন্ডারিং জড়িত থাকতে পারে আমরা এসব বিষয়ে তদন্ত করব।
অবাক ব্যাপার যে, মাদক এখন আমেরিকা থেকে আসছে। আগে থেকেই আমরা জানি, বাংলাদেশে ইয়াবা আর ফেনসিডিলের বাজার তৈরি হওয়ায় মায়ানমার এবং ভারত সীমান্তে অসংখ্য ইয়াবা আর ফেনসিডিলের কারখানা গড়ে উঠছে। এসব কারখানায় বাংলাদেশের যুবসমাজের জন্য মায়ানমার মরণ নেশা ইয়াবা এবং ভারত থেকে ফেনসিডিল উৎপাদন করে তা নির্বিঘ্নে সরবরাহ করা হচ্ছে। বলতে দ্বিধা নেই যে, এসব দেশে মাদক তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশের যুবসমাজের জন্যই। বাংলাদেশ ঘেঁষা সীমান্তে মায়ানমারে অসংখ্য ইয়াবা কারখানা গড়ে উঠেছে। সেসব কারখানা কোটি কোটি পিস ইয়াবা তৈরি হচ্ছে। অবাক করা ব্যাপার, মিয়ানমারের মানুষ, সেখানকার যুবসমাজ খুব একটা ইয়াবা আশক্ত নয়। কোনো কোনো এলাকায় ইয়াবা কী তা সেখানকার অধিবাসীরা জানেনই না। মূলত বাংলাদেশিদের জন্যই সেখানে ইয়াবা কারখানা গড়ে উঠেছে। এবার এই মাদক বিদেশ থেকে আসছে নানা কৌশলে। মাদক চোরাচালান রোধ হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না এটাই এখন বড় প্রশ্ন?
দেশের প্রতিটি সীমান্তেই এমন হচ্ছে। ভারতের সীমান্তেও অসংখ্য ফেনসিডিলের কারখানা আছে। সেখানেও এই একই অবস্থা। পাশ্ববর্তী দেশগুলো বাংলাদেশে মাদকের বাজার তৈরি করে নিয়েছে। এজন্যই দেশ মাদকে সয়লাব হচ্ছে। এখন মাদক আসছে সুদূর আমেরিকা থেকে। মাদক ব্যবসার সঙ্গে দেশের অনেক রাঘব বোয়াল জড়িত। আমরা মনে করি, এই সংখ্যা অনেক। এদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিতে পারলে আমাদের যুব সমাজকে রক্ষা করা যাবে না। সরকারের পরিকল্পিত ও সফল উদ্যোগই কেবল পারে যুব সমাজকে মাদকের ভয়াবহ ছোবল থেকে রক্ষা করতে।