শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

পাঠক মত

  ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
পাঠক মত

মানবজীবনে সঙ্গীতের ভূমিকা কতটুকু?

মানুষের সহজাত কিছু প্রকৃতির মধ্যে জ্ঞানের প্রতি ভালোবাসার প্রবৃত্তিটা অনন্য। আর এ জ্ঞান বিভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে। শিল্পকলা, সাহিত্যের মধ্য দিয়ে আবার কেউ বই পড়ার মাধ্যমে কেউ বা চিন্তা করার মাধ্যমে অজানাকে জেনে নেয়। এ অভ্যাসগুলো আমাদের জ্ঞানের পরিধিকে বাড়িয়ে দেয়, যা আমাদের ব্যক্তিত্ব গঠনে অসীম ভূমিকা পালন করে। আর শিল্পকলার মধ্যে সঙ্গীতের ভূমিকা অতুলনীয়। আমি মনে করি সঙ্গীতের মহিমা আমাদের পুরো কল্পনার জগৎকে কেন্দ্র করেই। বিশ্বখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের একটা উক্তি থেকে বলি, তিনি বলেন, ওসধমরহধঃরড়হ রং সড়ৎব রসঢ়ড়ৎঃধহঃ :যধহ কহড়ষিবফমব. অর্থাৎ কল্পনা জ্ঞানের থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে বুঝতেই পারি এক্ষেত্রে সঙ্গীতের ভূমিকা কতটুকু!

আরো গভীরভাবে যদি বলি সঙ্গীত আমাদের চিন্তা করতে শিখায়। আমাদের মুক্তচিন্তার বিকাশ ঘটে এর মাধ্যমে। আর চিন্তা করার দক্ষতাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যত দার্শনিক, সাহিত্যিক ও বিজ্ঞানী যারা ছিলেন বা আছেন তাদের জীবনের ব্যক্তিত্ব গঠনে তিনটি জিনিস সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছে, তা হলো বই পড়া, সৌন্দর্যের প্রতি ভালোবাসা এবং সঙ্গীত বা মিউজিক। একজন দার্শনিকের জীবনে আমি মনে করি তার দর্শনের ক্ষেত্রে সঙ্গীতের ভূমিকা অতুলনীয়। সঙ্গীতকে ঘিরেই যেন দর্শনের পূর্ণতা পায়।

সঙ্গীত চিন্তা ও অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে গঠিত এক কলা বা আর্ট। এ ধরায় যতগুলো আর্ট বা কলার শাখা রয়েছে তার মধ্যে সঙ্গীত অন্যতম।

আমার জীবনে দর্শন চর্চার ক্ষেত্রে যত দার্শনিকের বাণী আমি পড়েছি তার মধ্যে জার্মান দার্শনিক আর্থার শোপেনহাওয়ারের কথা না বললেই নয়। আর্থার শোপেনহাওয়ার একজন নিরাশাবাদী বিজ্ঞ জার্মান দার্শনিক। সঙ্গীতকে ঘিরে তার ফিলোসফি আমার দর্শন চর্চাকে নজর কারে। কতটা গভীর চিন্তাভাবনা এই সঙ্গীতকে নিয়ে তিনি করে গেছেন। তার মতে, আমাদের এই অস্তিত্বেও পেছনে রহস্যময়তা একমাত্র সঙ্গীত বা মিউজিকই জানে। এই মানবজাতির পথচলায় সঙ্গীত এ সমাজ বা বিশ্বকে শাসন করছে কিন্তু আমরা তা কতটুকুই বা কনসিয়াসলি উপলব্ধি করতে পেরেছি।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে সঙ্গীত আমাদের ক্রিয়েটিভিটিকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। আর এ সঙ্গীত শুধু আমাদের চিন্তার ও কল্পনার জগৎকেই বাড়িয়ে দেয় না, বরং আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটায়।

মহামতি দার্শনিক পেস্নটো তার আদর্শ রাষ্ট্র তৈরির কাঠামোতে সঙ্গীতকে তিনি তালিকায় রেখেছিলেন। কারণ সঙ্গীতই পারে মানুষের মন-মানসিকতায় সৃজনশীলতা সৃষ্টি করতে।

আমরা সবাই চাই একটা পরিপূর্ণ আদর্শ জীবন গঠন করতে। একটি আদর্শ জীবন একটি আদর্শ সমাজ সৃষ্টি করে। আর একটি আদর্শ সমাজ একটি আদর্শ রাষ্ট্র সৃষ্টি করে। তাই শিক্ষিত, সৎ, নীতিবান এবং সৃজনশীল মানুষ হয়ে একটা আদর্শ রাষ্ট্র তৈরিতে এক্ষেত্রে সঙ্গীতের ভূমিকা অপরিহার্য।

রাসেল হোসেন

অনার্স ৩য় বর্ষ সমাজবিজ্ঞান বিভাগ ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ, গাজীপুর।

পলিথিন নিষিদ্ধ পণ্য বোঝার উপায় নেই

পলিথিন যে এ দেশে অবৈধ কিংবা নিষিদ্ধ আজকাল সেটি বোঝার কোনো উপায় নেই। প্রতিদিনকার বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাতে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এ ব্যাগটি ব্যবহার করা হচ্ছে খুব সাধারণভাবে। এমনকি পাইকারি ও খুচরা দোকানগুলোতেও দেখতে পাওয়া যায় প্রকাশ্যেই। পলিথিনের শপিং ব্যাগ বা অন্য যেকোনো সামগ্রী যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, সেসব উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুত, পরিবহণ ইত্যাদি নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫-এর ভিত্তিতে ২০০২ সালে আইন করা হয়। নিষিদ্ধ ঘোষণার প্রায় দুই যুগ পরও বাজারে বা কোনো দোকানে গেলে পলিথিন নিষিদ্ধ হওয়ার আগের ও পরের সময়ে কোনো পার্থক্য বোঝা যায় না। আইন করে নিষিদ্ধ করার পরও বিষয়টি মারাত্মকভাবে গুরুত্ব হারিয়েছে বর্তমানে। প্রায় তিন হাজার কারখানায় দিনে ১ কোটি ৪০ লাখ পলিথিন ব্যাগ উৎপাদিত হচ্ছে আজও। যা নানা কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাছাড়া এসবের কারখানাগুলোও গোপন না। ফলে যত্রতত্র পলিব্যাগের ব্যবহার বন্ধ হয়নি এমনকি উৎপাদন, সরবরাহও কমেনি। দেশে পলিথিন ও পলিথিনজাত দ্রব্যসামগ্রীর ব্যাপক ব্যবহারে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পলিথিন অপচনশীল বলে দীর্ঘদিন প্রকৃতিতে অবিকৃত অবস্থায় থেকে মাটিতে সূর্যালোক, পানি এবং অন্যান্য উপাদান প্রবেশে বাঁধা সৃষ্টি করে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পলিথিনের বহুবিধ ব্যবহারের কারণে মানবদেহে বাসা বাঁধছে ক্যানসারহ নানা জটিল রোগ। কিন্তু তার পরও পলিথিনের ব্যবহার কমছে না, বরং দিন দিন বেড়েই চলছে। পাড়া-মহলস্নার মুদি দোকান থেকে অভিজাত বিপণিবিতান সর্বত্রই পলিথিনের যথেচ্ছাচার। পলিথিনের ব্যবহার সাম্প্রতিক সময়ে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কোনো কার্যকর তৎপরতা এবং মনিটরিং না থাকায় নিষিদ্ধ পলিথিনে বাজার সয়লাব। পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ আইন আছে, আইনে শাস্তির বিধানও রয়েছে। কিন্তু কেউ এসব আইন পরোয়া করে না। এসব আইন ভঙ্গ করলে শাস্তি হতে পারে এমন চিন্তাও কেউ করে না আজকাল। অথচ জনগুরুত্বপূর্ণ ও পরিবেশের ক্ষতিকর বিবেচনায় এসব আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এসব আইন সম্পর্কে দেশের মানুষের ব্যাপক সমর্থনও রয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে উদাসীন থাকার কারণে আইন সম্পর্কে জনগণ যেমন সচেতন নয়, তেমনি এসব আইন মানার প্রবণতাও কারও মধ্যে নেই। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ, সদিচ্ছা, সততা, দায়িত্ব, কর্তব্যবোধ, জবাবদিহি, দক্ষতা, কার্যক্ষমতা এবং আন্তরিকতার বহু অভাব রয়েছে।

মুনযির আকলাম

কুমিলস্না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে