ফের হিট অ্যালার্ট উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক
প্রকাশ | ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
ঢাকাসহ ৪৫টির বেশি জেলার ওপর দিয়ে বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। আর সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে যে, আপাতত তাপপ্রবাহ কমার সম্ভাবনা না থাকায় নতুন হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অফিস। দেশের মানুষকে তিন দিন সতর্কতায় থাকতে বলছে প্রতিষ্ঠানটি। আমরা মনে করি, হিট অ্যালার্ট জারির বিষয়টি আমলে নিতে হবে। একইসঙ্গে জনসচেতনতা ও সতর্কতা বাড়ানোসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণও অব্যাহত রাখতে হবে।
প্রসঙ্গত, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। শনিবার তা কয়েক জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ পায়। তীব্র গরমের কারণে স্কুল-কলেজে ৭ দিনের ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রচন্ড গরমে হাঁসফাঁস অবস্থার মধ্যে মেহেরপুর, সিলেট ও নরসিংদীসহ কয়েক জেলায় হিট স্ট্রোকে বেশ কয়েকজনের মৃতু্যর খবরও আসে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া লক্ষণীয় যে, ক্রমশ হাসপাতালগুলোয় শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভোগান্তিতে দিন পার করছেন শ্রমজীবী মানুষ। এমন প্রেক্ষাপটে সোমবার আবহাওয়া অফিস নতুন এই সতর্কবার্তা দিল। এক্ষেত্রে বলা দরকার, এটি তৃতীয় দফার হিট অ্যালার্ট। ফলে হিট অ্যালার্ট এবং তাপপ্রবাহের ভয়াবহতাসহ সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। একইসঙ্গে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে হবে। তীব্র তাপপ্রবাহ এবং হিট স্ট্রোকে মৃতু্যর ঘটনাসহ যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা অত্যন্ত শঙ্কাজনক। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই।
আমলে নেওয়া দরকার, একজন আবহাওয়াবিদ জানিয়েছেন, তাপমাত্রা ফের বাড়ার আশঙ্কা আছে। এছাড়া সিলেট, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামে হালকা বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া অন্য জায়গায় বৃষ্টির তেমন সম্ভাবনা নেই এটাও সামনে এসেছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া জরুরি। তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় শনিবার; সেদিন যশোরে থার্মোমিটারের পারদ উঠেছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু দেখা যায়, রোববার তাপমাত্রা সামান্য কমলেও তাপপ্রবাহের বিস্তার বেড়ে ছড়িয়ে যায় ৫১ জেলায়। রোববার চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আমরা বলতে চাই, তাপপ্রবাহে পুড়ছে প্রায় সারাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও মানুষ। জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড, হিটস্ট্রোকসহ গরমজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এতে হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর ভিড়। হিটস্ট্রোকে ঘটছে মৃতু্যর ঘটনাও। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি যেমন এড়ানো যাবে না, তেমনিভাবে এটাও উলেস্নখ্য যে, তীব্র গরমে ভোগান্তিতে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। তবুও জীবিকার তাগিদে প্রতিদিনই কাঠফাটা রোদের মধ্যেই তাদের বের হতে হয় কাজের সন্ধানে। প্রচন্ড গরমের মধ্যে রিকশা চালানোর সময় অসুস্থ হয়ে এক রিকশাচালকের মৃতু্য হয়েছে বলেও জানা যায়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয় অতিরিক্ত গরমের কারণে হিটস্ট্রোকেই তার মৃতু্য হয়েছে। এটা মনে রাখা দরকার, তীব্র তাপপ্রবাহ জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ওপর প্রভাব হঠাৎই পড়ে। ফলে এই বিষয়টিও আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। একদিকে তীব্র তাপপ্রবাহে অসুখবিসুখ বাড়ছে; অন্যদিকে, সামগ্রিকভাবে মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। সঙ্গত কারণেই সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্কতা সচেতনসতাসহ সার্বিক উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।
সর্বোপরি বলতে চাই, তীব্র তাপপ্রবাহ সারা দেশে। এ সময় সচেতন ও সতর্ক থাকার পাশাপাশি শিশুদের প্রতি যত্ন ও সতর্কতাও জরুরি। ঢাকাসহ ৪৫টির বেশি জেলার ওপর দিয়ে বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ এই পরিস্থিতিকে কোনোভাবেই সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। আপাতত তাপপ্রবাহ কমার সম্ভাবনা না থাকায় নতুন হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে এটা যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি সামগ্রিকভাবে যে ভীতিপ্রদ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, নানা ধরনের দুর্ভোগ ও সংকট তৈরি হচ্ছে, তা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।