লোডশেডিং কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
প্রকাশ | ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
লোডশেডিং জনজীবনে কতটা বিরূপ প্রভাব ফেলে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একদিকে তীব্র গরমে জনজীবনে নাভিশ্বাস। এর সঙ্গে আবার যদি লোডশেডিং তীব্র হয়- তবে তা কতটা দুর্ভোগ ও আশঙ্কার হতে পারে সেটি আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। উলেস্নখ্য, ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে রবিবার থেকে পুরোদমে চালু হয়েছে দেশের সব অফিস-আদালত, কলকারখানা। আর এমন অবস্থায় বিদু্যতের চাহিদা গিয়ে পৌঁছতে পারে সাড়ে ১৭ হাজার মেগাওয়াটে- এমনটি খবরে উঠে এসেছে। কিন্তু শঙ্কার বিষয় হলো- পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি। তাই সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় বিদু্যৎ উৎপাদন করতে পারছে না বিদু্যৎ কেন্দ্রগুলো- যা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেছে। আর এমন পরিস্থিতিতে, এই গরমে আবারও লোডশেডিং তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করছেন সাধারণ মানুষ। আমরা মনে করি, সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।
জানা যাচ্ছে, সব শিল্পকারখানায় উৎপাদন শুরু হওয়ায় যেমন বেড়েছে বিদু্যতের চাহিদা- কিন্তু সে তুলনায় বিদু্যৎ উৎপাদন বাড়েনি। একদিকে গরম, অন্যদিকে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি বাড়িয়েছে আরও। ফলে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করা। জানা যায়, রাজধানী ঢাকাসহ শহরাঞ্চলে লোডশেডিং অতটা না হলেও গ্রামাঞ্চলে গরমের সঙ্গে পালস্না দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। তথ্য মতে, রংপুর, দিনাজপুর, সাভার, নোয়াখালী, সিলেট, চুয়াডাঙ্গা, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন স্থানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের জন্য সেচ কাজ যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি জনভোগান্তিসহ নানা ধরনের সংকট তৈরি হচ্ছে। এছাড়া বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিদু্যতের ভয়াবহ লোডশেডিং শুরু হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। গ্রীষ্মের খরতাপের সঙ্গে বিদু্যতের আসা-যাওয়ায় মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নগরীতে এলাকাভেদে দিনে ও রাতে মিলে পাঁচ-ছয় ঘণ্টাও বিদু্যৎ থাকছে না। বিদু্যৎ না থাকায় বাসা-বাড়িতে ওয়াসার পানি সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। এতে পানির সংকটে পড়েছেন নগরবাসী। সব মিলিয়ে প্রচন্ড গরমে যেন জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি সৃষ্ট পরিস্থিতি মেকাবিলায় উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। বলা দরকার, বাংলাদেশ বিদু্যৎ উন্নয়ন বোর্ড ও ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারের তথ্যানুসারে, গত ১৪ এপ্রিল দেশে বিদু্যতের চাহিদা ছিল ১২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট- যার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট। এরপর ১৫ এপ্রিল চাহিদা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ১৪ হাজার মেগাওয়াটে- যার বিপরীতে উৎপাদন হয় ১৫ হাজার ৫৪৩ মেগাওয়াট। ১৬ এপ্রিল বিদু্যতের চাহিদা ১৫ হাজার মেগাওয়াটে- যার বিপরীতে উৎপাদন হয় ১৫ হাজার ৮৯০ মেগাওয়াট। এভাবে দেখা যায়, গত রোববার বিদু্যতের চাহিদা গিয়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ২০০ মেগাওয়াটে- যা গত এক সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে, চলতি গরমে এই চাহিদা ১৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিদু্যৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী। আর এই চাহিদা পূরণ করে নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যৎ সরবরাহের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। যদিও বড় বাধা অর্থ। অনেক বিদু্যকেন্দ্র গ্যাসের জন্য উৎপাদন করতে পারছে না। অনেকে আবার সামান্য কিছু উৎপাদন করছে। কারণ জানা যাচ্ছে টাকার অভাবে এলএনজি আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সার্বিক বিষয় আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, লোডশেডিং হলে যেমন কর্মযজ্ঞে স্থবিরতা নেমে আসে, তেমনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। আর হঠাৎ করেই বিদু্যতের লোডশেডিং বাড়লে উৎপাদন খাতসহ সব ধরনের কর্মযজ্ঞে নতুন করে সংকট দেখা দেয়। একদিকে তাপপ্রবাহে জনজীবন অতিষ্ঠ, অন্যদিকে, তাপপ্রবাহ আরও বাড়বে এমন আশঙ্কাও উঠে এসেছে। ফলে এমন পরিস্থিতিতে লোডশেডিংয়ের প্রভাব বিবেচনায় রেখে করণীয় নির্ধারণ কিংবা এই সংকটকে কীভাবে দ্রম্নত নিরসন করা যায় সেই পথ খুঁজতে হবে এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। মনে রাখা দরকার, লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়ে সর্বত্রই। সঙ্গত কারণেই সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।