শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সড়কে মৃতু্যর মিছিল

যথাযথ উদ্যোগ জরুরি
  ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
সড়কে মৃতু্যর মিছিল

সড়ক দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনায় মৃতু্য থেমে নেই। ঘাতক চাকার নিচে একের পর এক মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, যখন প্রতিনিয়ত সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং ঝরে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ- তখন পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করা জরুরি। এছাড়া, প্রতিবারই ঈদযাত্রায় সড়কে মৃতু্যর ঘটনা ঘটে- যা ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, এবারের রোজার ঈদের আগে- পরে মিলিয়ে ১৫ দিনে সড়কে ৩৯৯টি দুর্ঘটনায় ৪০৭ নিহত ও আহত হয়েছেন ১ হাজার ৩৯৮ জন।

উলেস্নখ্য, এই দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৯৮টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬৫ জন নিহত ও ২৪০ জন আহত হয়েছেন- যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৯.৬২ শতাংশ, নিহতের ৪০.৫৪ শতাংশ এবং আহতের ৩০.৩৭ শতাংশ। মূলত দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক সংবাদপত্র এবং জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের তথ্যে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

আমরা মনে করি, এই পরিসংখ্যান এবং সামগ্রিকভাবে সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র আমলে নিতে হবে। সংগঠনটির হিসাবে এবারের ঈদুল ফিতরের আগে-পরে ১৫ দিনে সড়ক, রেল ও নৌপথ মিলিয়ে মোট ৪১৯টি দুর্ঘটনায় ৪৩৮ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ১ হাজার ৪২৪ জন। আলাদাভাবে রেলপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত ও ২১ জন আহত হয়েছেন। নৌপথের দুটি দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। এক্ষেত্রে এটাও বিবেচনায় নেওয়া জরুরি, গত বছরের রোজার ঈদের ১৫ দিনে সড়কে ৩০৪টি দুর্ঘটনায় ৩২৮ জনের প্রাণ গিয়েছিল, আহত হয়েছিলেন ৫৬৫ জন। সেই হিসাবে এবারের রোজার ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে ৩১.২৫%। সেই সঙ্গে প্রাণহানি ২৪.০৮% এবং আহতের সংখ্যা বেড়েছে ১৪৭.৪৩%। আমরা মনে করি, এই চিত্র আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।

এটা জানা যাচ্ছে যে, সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ অনুয়ায়ী, এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় মানুষের যাতায়াত বেড়েছে। সড়ক-মহাসড়কের উন্নয়নের ফলে যানবাহনে গতি বেড়েছে। অন্যদিকে, গতিকে নিরাপদ করতে আইনি কাঠামো, দক্ষ চালক ও মানসম্মত যানবাহনের অভাব রয়েছে- এমন আলোচনাও উঠে এসেছে। ফলে এটি এড়ানোর সুযোগ নেই। অন্যদিকে, যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, মোটর সাইকেলের অবাধ চলাচল, মহাসড়কে রোড সাইন ও সড়কবাতি না থাকা, টার্নিং চিহ্ন না থাকা, সড়কে নির্মাণ ত্রম্নটি, যানবাহনের ত্রম্নটি ও ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা, উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহণ, অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং একজন চালক অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহন চালানো এসব দুর্ঘটনার কারণ। আমরা মনে করি, দুর্ঘটনার কারণ আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের তৎপর হওয়া যেমন জরুরি, তেমনি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে 'মোটর সাইকেল ও ইজিবাইক আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা', সড়কে আলোকসজ্জা, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিটনেস প্রদান, ধীরগতি ও দ্রম্নতগতির যানের জন্য আলাদা লেন, চাঁদাবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে সমিতি। এছাড়া ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা, রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করাসহ বেশি কিছু সুপারিশ করেছে সংগঠনটি। ফলে, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এবারের রোজার ঈদের আগে-পরে মিলিয়ে ১৫ দিনে সড়কে ৩৯৯টি দুর্ঘটনায় ৪০৭ নিহত ও আহত হয়েছেন ১ হাজার ৩৯৮ জন। ফলে, সড়কের ভয়াবহতা আমলে নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। সড়ক পথের নিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত করতে হবে, তেমনি এটা মনে রাখা দরকার, প্রতিনিয়ত দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর বিভীষিকা থেকে কিছুতেই যেন রক্ষা পাচ্ছে না মানুষ। সঙ্গত কারণেই দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে