রিজার্ভ কমছে

প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিন

প্রকাশ | ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশে মার্কিন ডলারের সংকট এখনো কাটেনি। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত কমে আবারও দুই হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে। রিজার্ভ থেকে ক্রমাগত ডলার বিক্রি ও ব্যাংকগুলো তাদের জমা রাখা ডলার ফেরত নেওয়ায় রিজার্ভ কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে রিজার্ভ কমার তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বুধবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ১৯ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৯৮৯ কোটি ডলারে নেমেছে। একই দিনে মোট রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার। এর আগে ৮ এপ্রিল বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ১০ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১০ কোটি ডলার। ওই দিন মোট রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৫৩৮ কোটি ডলার। সে হিসাবে গত ১০ দিনে বিপিএম-৬ মান অনুযায়ী রিজার্ভ কমেছে ২ কোটি ১০ লাখ ডলার। এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে- যা প্রকাশ করা হয় না। সূত্র জানায়, সেই হিসাবে দেশের ব্যবহারযোগ্য বা প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৫ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের নিচে। প্রকৃত রিজার্ভ হলো দায়হীন রিজার্ভ। প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব কীভাবে নির্ণয় করতে হবে, তা আইএমএফ ঋণ দেওয়ার সময় বাংলাদেশকে জানিয়ে দিয়েছিল। সংস্থাটি ঋণের শর্ত হিসেবে নির্দিষ্ট সময় পর পর প্রকৃত রিজার্ভ কী পরিমাণে থাকতে হবে, তা ঠিক করে দেয়। তাই বাংলাদেশকে আইএমএফের শর্ত মেনে প্রতি তিন মাস পর পর রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে হয়। আইএমএফ বাংলাদেশকে যে ঋণ দিয়েছে, তার শর্ত অনুযায়ী গত মার্চ মাস শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রকৃত রিজার্ভ থাকার কথা ১ হাজার ৯২৬ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু ওই সময় প্রকৃত রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের কম। এক্ষেত্রে বলা দরকার, এর আগেও এটা আলোচনায় এসেছিল যে, ধারাবাহিকভাবে কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ফলে এখন যখন রিজার্ভ কমার বিষয়টি সামনে এলো, তখন তা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগজনক। যা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখা। এ কথা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই, দীর্ঘদিন ধরে দেশে চলছে ডলার সংকট। নানা উদ্যোগ নিয়েও এ সমস্যার যেন সমাধান হচ্ছে না। যে হারে আমদানির দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে সেই হারে রেমিট্যান্স-রপ্তানি আয় আসছে না। ফলে আমদানির চাহিদা অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রা না থাকায় বাজারে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। প্রসঙ্গত, গত ৬ মার্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৬৩৪ কোটি মার্কিন ডলার। ২৭ মার্চ এ রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় দুই হাজার ৪৮১ কোটি ডলারে। বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ নেমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৯৪৫ কোটি ডলারে। যা ৬ মার্চ ছিল ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ ২১ দিনে গ্রোস রিজার্ভ কমেছে ১৫২ কোটি ডলার (১ দশমিক ৫২ বিলিয়ন) এবং বিপিএম-৬ কমেছে ১৬৯ কোটি ডলার (১ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন)। এছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরুতে গ্রোস রিজার্ভ ছিল ২৯ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার আর বিপিএম-৬ অনুযায়ী ছিল ২৩ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভ কমছে এই বিষয়টিকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। রিজার্ভ সংক্রান্ত পরিস্থিতি আমলে নেওয়া এবং অর্থনীতিবিদরা যে বিষয়গুলো বলছেন, সেগুলোকে বিবেচনায় রেখে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।