শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বৈষম্যের কারণে সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে

মাহমুদুল হক আনসারী, ঢাকা
  ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
বৈষম্যের কারণে সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে

সমাজ ও রাষ্ট্র জনগণের জন্য একটি অপরিহার্য অংশ। জনগণের জন্য সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো থাকা চাই। মানুষ সমাজবদ্ধ জীবনযাপন করে। পৃথিবী মানুষের জন্য স্থায়ী ঠিকানা নয়। পৃথিবীতে কোনো সৃষ্টি চির জীবনের জন্য থাকতে চাইলেও থাকতে পারে না। পৃথিবীতে যে কয়দিন বেঁচে থাকে, সেই সময়ের জন্য মানুষের টাকা-পয়সা দরকার পড়ে। শিশু থেকে কিশোর, প্রাপ্ত-অপ্রাপ্ত সব মানুষের জন্য বেঁচে থাকতে অর্থের প্রয়োজন হয়।

অর্থ ছাড়া মানুষ সমাজে অচল। খাওয়া-দাওয়া, পারিবারিক, সামাজিক ও দৈনন্দিন কাজের জন্য অর্থের বিকল্প নেই। অর্থ ইনকামের মাধ্যম মানব সমাজকে খুঁজতে হয়। আয়-ইনকাম করতে হয়। হোক সেই ইনকাম বৈধ পথে অথবা অবৈধভাবে। যেহেতু মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। সেহেতু মানবজাতিকে অর্থ নিয়েই বাঁচতে হবে।

কথা হচ্ছে, আমাদের সমাজ কাঠামোতে অর্থ উপার্জনের নিয়মনীতি কি। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি, কৃষিসহ নানা-পন্থায় মানুষ জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য আয় করে থাকে। সেই আয় শৃঙ্খলায় হোক অথবা অন্য সমাজ বিরোধী পস্থায় হোক সমাজবদ্ধ মানুষ ইনকাম করবেই।

আমাদের সমাজে জনগণের আয়-ইনকামের শৃঙ্খলায় বড় ধরনের বিভাজন চলছে। শিক্ষিত-অশিক্ষিত অথবা শিক্ষক-কর্মচারী, সরকারি-বেসরকারি পদে কর্মরত কর্মজীবীদের পদ-পদবি ও আয়-ব্যয়ের মধ্যে বড় ধরনের ফারাক। একজন মানুষের দৈনন্দিন খরচের তালিকা থাকে। পারিবারিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগত খরচের জন্য নির্দিষ্ট কিছু ব্যয়ের খাত থাকে। ভাত, কাপড়, চিকিৎসা, বিনোদন, শিক্ষা অর্জন ব্যক্তি ও পরিবারের জন্য।

যারা শিক্ষাদীক্ষায় সার্টিফিকেটদারি যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছে, তাদের কর্মসংস্থান, আয়ের মধ্যে জীবন-জীবিকায় অভাব থাকে না। পরিবার ও সমাজে তারা স্বাচ্ছন্দ্য ও স্বচ্ছল জীবনযাপন করছে। পক্ষান্তরে কম শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত দিনমজুর, মধ্যবিত্ত, নিম্নআয়ের মানুষের ইনকাম করে সমাজের চাহিদা পূরণ করে বেঁচে থাকা একটি কঠিন পরীক্ষা। অন্যদিকে উচ্চশিক্ষিত অথবা ভালো পদের সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা কতিপয় কর্মচারীরা বৈধ-অবৈধ ঘুষ-দুর্নীতি আর কালো টাকার পাহাড় পরিমাণ সম্পদ অর্জন করছে।

নিম্ন মধ্যবিত্ত দিনমজুর অসহায় ও নির্দিষ্ট স্বল্প আয়ের মানুষগুলো সমাজে চরমভাবে বিপর্যস্ত। পুঁজিবাদী এই সমাজে একটি গোষ্ঠী সামান্য সময়ের ব্যবধানে যৌক্তিক-অযৌক্তি পন্থায় বিপুল অর্থ ও সম্পত্তির মালিক হচ্ছে। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী, শিল্পতি, সরকারি, কর্মকর্তা-কর্মচারী অনৈতিক আয়ের মাধ্যমে শোষণ করছে সমাজকে। প্রতিবছর ওই শ্রেণির মানুষগুলো চালু করছে। বলা যায়, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ব্যাংকিং সেক্টর শিল্প, মিল-কারখানা, জমি বেঁচা-বিক্রি ও সরকারি-বেসরকারি জমি জমা বৈধ-অবৈধ পন্থায় নিজদের আয়ত্তে এনে অর্থের পাহাড় করছে।

রাষ্ট্রীয় আইন তাদের শায়েস্তা করতে পারে না। এ ধরনের সামাজিক অর্থ ব্যবস্থাপনাতে ধনী আরও ধনী হচ্ছে। অপরদিকে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষগুলো সহায়-সম্বল হারিয়ে আরও নিঃস্ব হচ্ছে। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় কালো টাকার মালিকরা সমাজের অর্থনীতিকে নিজদের আয়ত্তে রাখতে সক্ষম হয়েছে।

অপরদিকে দুর্বল মানুষগুলো নিঃস্ব থেকে সর্বহারা হচ্ছে। তারা খেয়ে-দেয়ে বেঁচে থাকতে কঠোর পরিশ্রম করেও সফল হতে পারছে না। গণতন্ত্রের নামে পুঁজিবাদী রাজনীতির হর্তা-কর্তারা নির্দিষ্ট পেশা ছাড়াই বিপুল অর্থের মালিক হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের পদ-পদবি ব্যবহার করে বহু নেতা-নেত্রী বস্তা বস্তা টাকা, গাড়ি-বাড়ি, ফ্ল্যাটের মালিক। স্বল্পসংখ্যক মানুষ ওইসব পন্থায় টাকা ইনকাম করছে। সমাজের অধিকাংশ বৈধ আয়ের মানুষ নির্মম কষ্টের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্যের স্বীকার। এই সমাজ সেই নির্যাতিত নিষ্পেষিত অভাবী মানুষের কথা একবারও ভাবতে দেখছি না। রাজনীতি চরিত্র শুধুমাত্র বক্তৃতা কথা বলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সরকার যায়, সরকার আসে। নামে বইপুস্তকে গণতন্ত্র বাস্তবে সুষম অর্থনৈতিক বণ্টন ব্যবস্থা, ন্যায়নীতির সমাজ অনুপস্থিত। বাজার মার্কেট দ্রব্যমূল্য সবকিছু সাধারণ জনতার নাগালের বাইরে। এ ধরনের বৈষম্য চলতে থাকলে জনরোষ, গণবিপস্নব এবং শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নিস্পেষিত মানুষের দীর্ঘ নিঃশ্বাস বাড়তে থাকবে। আসুন, সামাজিক বৈষম্যমুক্ত পৃথিবী গড়তে নৈতিক ও আদর্শিক পরিবর্তন ঘটাই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে