জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগজনক। যা আমলে নেওয়ার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। স্মর্তব্য যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সর্বোচ্চ ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। লক্ষণীয়, পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে দেখা যাচ্ছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রকৃতি বিরূপ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ২০২১ সালের প্রারম্ভ হতে সারা বিশ্বের আবহাওয়ার বিরূপ পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে যা এড়ানোর সুযোগ নেই। অন্যদিকে এ কথাও বলার অপেক্ষা রাখে না, সম্প্রতি বিশ্বের বহু দেশ ভয়ংকর দাবদাহে পুড়ছে। কোথাও অতিরিক্ত বন্যা, দাবানলের ঘটনা ঘটছে। এছাড়া পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে যে, তীব্র গরমে দেশের মানুষের জনজীবন অতিষ্ঠ। বৈশাখের খরতাপে ভোগান্তি এনেছে তীব্র তাপপ্রবাহ। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।
উলেস্নখ্য, দেশজুড়ে এমন তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে গত বুধবার দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড হয় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন মঙ্গলবার রেকর্ড হয় ৪০.৬ ডিগ্রি। তবে বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০.৪ ডিগ্রি। ফলে এটা আমলে নেওয়া দরকার, আবহাওয়াবিদরা বলছেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়া এবং বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণেই তাপপ্রবাহে অস্বস্তি বাড়ছে। আমরা বলতে চাই, যেভাবে উষ্ণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে তা আমলে নিতে হবে এবং জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবকে সামনে রেখে পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই।
স্মর্তব্য, ২০২৩ সাল ছিল পৃথিবীর ইতিহাসের উষ্ণতম বছর। এক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখা দরকার, চলতি বছরের উষ্ণতা গত বছরকেও ছাড়িয়ে যাবে এমন আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় ইতোমধ্যে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে তাপাত্রা। আর প্রচন্ড দাবদাহে সমগ্র দেশের জনজীবন অতিষ্ঠ আর। ফলে ভুলে যাওয়া যাবে না যে, এমন পরিস্থিতি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ ফল। এটাও বলা দরকার, শিল্পায়নের শুরু থেকে জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও মিথেনের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। বায়ুমন্ডলে অতিরিক্ত গ্রিনহাউস গ্যাস ক্রমেই পৃথিবীর জলবায়ুকে উষ্ণ করছে। কার্বন ডাই-অক্সাইড ও মিথেনের মতো গ্রিনহাউস গ্যাস পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে সূর্যের উত্তাপকে আটকে রাখে। সেই উত্তাপ আবার বিশ্বের সব জায়গায় সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ছে না, আর এর পরিণতিতে আবহাওয়ার এমন অস্বাভাবিক ও চরম রূপ- এই বিষয়ে আলোচনা উঠে এসেছে। দেখা যাচ্ছে সময়ে অসময়ে বন্যা, অনাবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস।
আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে সামনে রেখে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। বিশ্ব নেতৃত্বকে যেমন উদ্যোগী হতে হবে, দেশের সংশ্লিষ্টদেরও জলবায়ু পরিস্থিতি মোকাবিলায় উদ্যোগী হতে হবে। কেননা এর আগে এটা জানা গেছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি, ভারী বর্ষণ, দীর্ঘস্থায়ী বন্যা, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীর কূল ভাঙনসহ প্রতিনিয়ত অনেক সমস্যার মুখোমুখি বাংলাদেশ। এমনকি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা, সুপেয় পানির নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও জীবিকার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। অন্যদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে নানা সংকট তৈরি হচ্ছে। জলবায়ুর প্রভাবে উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছেন বাংলাদেশের উপকূলসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বাড়ছে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায়। বাড়ছে রোগব্যাধি। ফলে এই বিষয়গুলো এড়ানোর সুযোগ নেই। সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে দেশের সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমলে নেওয়া অপরিহার্য। বৈরী আবহাওয়ার প্রভাব কমিয়ে আনা চ্যালেঞ্জ। যা মোকাবিলায় বিশ্ব নেতৃত্বকে যেমন ভাবতে হবে তেমনিভাবে দেশের সংশ্লিষ্টদের সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এর আগে এমন বিষয় সামনে এসেছিল যে, আগামী ১০ বছরে তাপপ্রবাহ বিশ্বের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা- যা এড়ানো যাবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে সামনে রেখে বিশ্ব নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।