সড়ক দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনায় মৃতু্য থেমে নেই। ঘাতক চাকার নিচে একের পর এক মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, যখন প্রতিনিয়ত সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং ঝরে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ- তখন পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করা জরুরি। এছাড়া প্রতিবারই ঈদযাত্রায় সড়কে মৃতু্যর ঘটনা ঘটে- যা ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে।
সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, ফাঁকা সড়কে বেপরোয়া গতিতে মোটর সাইকেল চালাতে গিয়ে ঈদ ও এর আগের দিন মারা গেছেন ৩১ জন। এছাড়া বিভিন্ন জেলায় নিহত হয়েছে আরও ২৫ জন। অন্যদিকে, ঈদযাত্রায় সড়ক-মহাসড়কে নিয়ন্ত্রণহীন গতির বাস-মিনিবাস, মাইক্রো, প্রাইভেটকার ও থ্রি-হুইলারসহ বিভিন্ন যানবাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষে কেড়ে নিয়েছে শতাধিক প্রাণ। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মৃতু্যর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন দুই শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন দেড় শতাধিক মানুষ। এছাড়া মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে। জানা যায়, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুর অংশের কানাইপুর তেঁতুলতলা নামক স্থানে বাস-পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে ১১ জন ও হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন আরও চারজন। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণেরও বিকল্প নেই।
লক্ষণীয়, ঈদযাত্রাসহ প্রতিনিয়ত যেভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে এবং বেড়ে চলেছে লাশের সংখ্যা- তা সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। যখন দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে, লাশের মিছিল ভারী হচ্ছে- তখন সামিগ্রক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। যেসব কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে তা বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। বারবার এমন বিষয়ও সামনে এসেছে যে, বিপজ্জনক অভারটেকিং, বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ যানবাহন উঠে আসা, ছোট যানবাহন ক্রমেই বৃদ্ধি, বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে সার্ভিস লেন না থাকায় ইজিবাইক, রিকশা, অটোরিকশা মহাসড়কে নেমে আসা, গুরুত্বপূর্ণ জংশনে, রাস্তার মোড় ও বাস স্টপেজগুলোতে যানজট তৈরি করায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সঙ্গত কারণেই, এই বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাব, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও ট্রাফিক আইন অমান্য করা, সড়কে চাঁদাবাজি ও রাস্তার পাশে হাটবাজারও বাড়িয়েছে দুর্ঘটনার পরিমাণ- এর আগে এমনটিও জানা গেছে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য।
প্রসঙ্গত, কেন সড়ক নিরাপদ হচ্ছে না, কেন বাড়ছে লাশের সংখ্যা- এই বিষয়গুলো ভাবতে হবে। এর আগে এমন বিষয় আলোচনায় এসেছ যে, সড়ক দুর্ঘটনার ডজন দুয়েক কারণ চিহ্নিত করা হলেও তা প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় মৃতু্যর মিছিল থামছে না। বরং সড়কে লাশের সারি দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। আর তার সঙ্গে পালস্না দিয়ে বাড়ছে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণও। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। এবারের ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাও সামনে এসেছে যে, সড়ক পথের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যানবাহনের বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণে এবারও ঈদযাত্রায় মহাসড়কে গতিসীমার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে এবং স্পিডগানের মতো মান্ধাতার আমলের পদ্ধতি ব্যবহার করে দায় সেরেছে প্রশাসন। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা কোনোটাই কমেনি।
সর্বোপরি বলতে চাই, এবারের দুর্ঘটনাগুলো আমলে নিন। সড়ক পথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। প্রতিনিয়ত দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর বিভীষিকা থেকে কিছুতেই যেন রক্ষা পাচ্ছে না মানুষ। সঙ্গত কারণেই দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।