গত ১২ মার্চ সোমালিয়ার জলদসু্যদের কবলে পড়ে যে উৎকণ্ঠা শুরু হয়েছিল- অবশেষে তার অবসান ঘটল। জানা গেল, জলদসু্যদের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছেন এমভি আবদুলস্নাহ আর ২৩ বাংলাদেশি নাবিক। তথ্য মতে, ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদসু্যদের কবলে পড়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুলস্নাহ মুক্তিপণের অর্থ পাওয়ার পর ছেড়ে দিয়েছে জলদসু্যরা। শনিবার দিবাগত রাত ৩টায় একে একে ৬৫ জন জলদসু্য নেমে যায় এমভি আবদুলস্নাহ থেকে। ৯টি বোটে করে তারা চলে যায় রাতের আঁধারে। আর যাওয়ার আগে নাবিকদের উদ্দেশে বলে যায়, 'তোমরা এখন মুক্ত'। এর পরপরই এমভি আবদুলস্নাহর ক্যাপ্টেন দেশে জাহাজের মালিকপক্ষের কাছে তাদের মুক্তির বার্তা পাঠান। এছাড়া জানা যায় মুক্তিপণ দিয়ে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুলস্নাহ মুক্ত হওয়ার পর এর অপহরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আট জলদসু্যকে গ্রেপ্তার করেছে সোমালিয়া কর্তৃপক্ষ। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পান্টল্যান্ডের পূর্ব উপকূল থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রসঙ্গত বলা দরকার, ভারত মহাসাগরে চট্টগ্রামের কবির গ্রম্নপের প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের কয়লাবাহী জাহাজ এমভি আবদুলস্নাহর নাবিকদের জিম্মি করার ঘটনা ব্যাপক ভাবে আলোচনায় আসে। আলোচনায় আসে জাহাজের নিরাপত্তার বিষয়টিও। আমরা বলতে চাই, জাহাজ মুক্তির খবরটি অত্যন্ত স্বস্তির। একইসঙ্গে এ ঘটনা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, জাহাজের নিরাপত্তার বিষয়টিসহ এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে তৎপর ও কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা।
বলা দরকার, এর আগে এটা আলোচনায় এসেছিল যে, সময়ের হাত ধরে সমুদ্র বাণিজ্যে বইছে সুবাতাস। নীল সাগরে বাড়ছে লাল-সবুজ জাহাজের ভেঁপু। আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে চলছে বাংলাদেশেরই ৯৮ জাহাজ। আরব সাগর, লোহিত সাগর কিংবা ভারত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে এসব জাহাজ কখনো নোঙর করছে ইউরোপ, কখনো মধ্যপ্রাচ্যে। কিন্তু চলার এই পথে দেখা দিয়েছে শত বিপদ। ভারত মহাসাগরে ফাঁদ পেতে আছে সোমালিয়ার জলদসু্য। লোহিত সাগরে ওতপেতে আছে হুতি বিদ্রোহী। একের পর এক জাহাজে হামলে পড়ছে তারা। ঝুঁকিপূর্ণ এই চ্যানেল পাড়ি দিতে বিদেশিরা নিচ্ছে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কিন্তু এটা খবরে উঠে আসে যে, বাংলাদেশের জাহাজগুলো নিরাপত্তা জোরদার না করেই পাড়ি দিচ্ছে বন্ধুর পথ। তাই বাড়ছে বিপদ। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং নিরাপত্তাসহ সামগ্রিক বিষয়গুলো সামনে রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।
আমরা বলতে চাই, সোমালিয়ান জলদসু্যদের ভয়ংকর রূপ সামনে এলেও পিছিয়ে নেই বাংলাদেশি জলদসু্যরাও- এমনটিও আলোচনায় এসেছিল। জানা গিয়েছিল খুন, গুম, অপহরণ, চুরি ও ডাকাতির মতো ভয়ংকর সব ঘটনা ঘটছে বঙ্গোপসাগরে পণ্য নিয়ে আসা বিভিন্ন জাহাজ ও মাছ ধরার ট্রলার। ফলে দেশের জলদুস্য সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতিও আমলে নিতে হবে। এটাও এড়ানো যাবে না, চলতি বছরের মার্চ মাসে এ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে তিনটি জলদসু্যর হানার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, দুই মাসে ঘটেছে দুটি জলদসু্যর আক্রমণের ঘটনা। এর আগে গত বছর ১৬টি জলদসু্যর আক্রমণের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জলদসু্য আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে মাছ ধরার ট্রলারের জেলেদের ওপর। যাদের গুম, খুন, অপহরণের মাধ্যমে বড় অঙ্কের মুক্তিপণও আদায় করেছে জলদসু্যরা। আমরা মনে করি, এসব তথ্য আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার- পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
সর্বোপরি, আমরা বলতে চাই- গত ১২ মার্চ সোমালিয়ার জলদসু্যদের কবলে পড়ে যে উৎকণ্ঠা শুরু হয়েছিল- অবশেষে তার অবসান ঘটল এবং জলদসু্যদের কবল থেকে মুক্তি পেল এমভি আবদুলস্নাহ আর ২৩ বাংলাদেশি নাবিক। যা অত্যন্ত স্বস্তিকর। ফলে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সর্বাত্মক প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া সোমালিয়ান জলদসু্যদের আলোচনার মধ্যে বঙ্গোপসাগর অনিরাপদ এবং পিছিয়ে নেই বাংলাদেশি জলদসু্যরাও- এমন বিষয় সামনে আসছে; তখন জলদসু্য সংক্রান্ত আতঙ্কের বিষয়টিও আমলে নিতে হবে। জাহাজের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।