পবিত্র ঈদুল ফিতর সবার জীবন শান্তিময় হোক
প্রকাশ | ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
বছর ঘুরে আবারও পবিত্র ঈদুল ফিতর সমাগত। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে এক অনাবিল আনন্দের মহাসম্মিলন পবিত্র ঈদুল ফিতর। মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। এ উৎসব বিশ্বজুড়ে মুসলিম সমাজে বিশেষ আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করা হয়। মুলমানদের ঐক্যের পথে, কল্যাণের পথে, ত্যাগ ও তিতিক্ষার মূলমন্ত্রে দীক্ষিত করে ঈদুল ফিতর। এ দিনের সবচেয়ে উজ্জ্বল দিক হলো, সামর্থ্যবানদের দ্বারা ফিতরা-সদকার মাধ্যমে গরিবের হক আদায় করা। এতে অর্থনৈতিক বৈষম্য যেমন দূর হয়, তেমনি সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রকাশ পায়। পবিত্র রমজান মাসের যে সংযমের অনুশীলন, তা জীবন চলার সব ক্ষেত্রে সীমা লঙ্ঘনের নেতিবাচক প্রবণতা থেকে রক্ষার শিক্ষা দেয়। অন্যায়, অবিচার, ঘৃণা, বিদ্বেষ, হিংসা, হানাহানিসহ মানুষের নেতিবাচক প্রবণতার রাশ টেনে ধরে। ঈদ যে আনন্দের বার্তা বয়ে নিয়ে আসে, তার মর্মমূলে আছে শান্তি ও ভালোবাসা। ফলে ঈদ আমাদের সামষ্টিক জীবনে যে মিলন ও শুভবোধের চর্চার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, তা সঞ্চারিত হোক সবার প্রতিদিনের জীবনযাপনে।
পবিত্র ঈদুল ফিতর আসে ইবাদত ও মানবতার কল্যাণের বার্তা নিয়ে। ঈদের আগের রমজান মাসটি হচ্ছে সংযম ও প্রশিক্ষণের। ফিতরা প্রদান, জাকাত আদায় ও ঈদের নামাজের ভেতর দিয়ে এক অপরিসীম আনন্দময় বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার দিন হলো ঈদুল ফিতর। বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও সহমর্মিতা প্রদর্শনের জন্য রমজানের শিক্ষা অপরিহার্য। বলার অপেক্ষা রাখে না, ঈদের আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়। এখানে যেমন ধনী-গরিবের ভেদাভেদ থাকে না, তেমনিভাবে ছোট-বড় সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার মধ্য দিয়েই ঈদের আনন্দ পূর্ণতা পায়। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে যে সংযমের শিক্ষা অর্জিত হয়, তা যেন ঈদের মাধ্যমে পূর্ণতা পায়; ঈদের আনন্দকে সঙ্গী করে বাকি সময় পথচলায় সহায়ক হয়।
প্রসঙ্গত, প্রতি বছর আনন্দঘন পরিবেশে ঈদুল ফিতর পালন করা হয়। ঈদগাহে ধনী-গরিব নির্বিশেষে এক কাতারে নামাজ আদায় শেষে কোলাকুলির মাধ্যমে স্থাপিত হয় মহান এক সামাজিক বন্ধন। সবাই আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়। নাড়ির টানে মানুষ ছুটে যায় নিজভূমে। পারস্পরিক সাক্ষাতে হৃদ্যতা বৃদ্ধি পায়। এবারে পবিত্র ঈদুল ফিতর এমন এক সময়ে এসেছে- যখন ফিলিস্তিনে ইজরাইলের হামলা হচ্ছে। গত ছয় মাসে নিরবচ্ছিন্ন ইসরাইলি হামলায় ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধও থামেনি। যে যুদ্ধের প্রভাবে খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন দ্রব্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি জীবনযাপনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল, তৈরি হয়েছিল মন্দা পরিস্থিতি।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এমনিতেই করোনা সংকটে মানুষের জীবনযাপন বিঘ্নিত হয়েছিল। প্রায় প্রত্যেকটি খাতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। আর এরপর যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট সংকট মানুষকে নতুন করে উৎকণ্ঠায় ফেলে দেয়। অন্যদিকে, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে জনসাধারণের জিম্মিদশার বিষয়টিও নতুন নয়। ফলে সামগ্রিক প্রেক্ষাপট আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। অন্যদিকে, এ কথাও বলা দরকার, ঈদযাত্রাকে সামনে রেখে যাত্রীদের দুর্ভোগের বিষয়টি নতুন নয়। প্রতি বছর ঢাকঢোল পিটিয়ে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হয় না- যা অত্যন্ত পরিতাপের। দেখা যায়, প্রায় প্রতি বছরই ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষকে পদে পদে চিরচেনা দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ছোট বড় দুর্ঘটনায় দীর্ঘ হয় লাশের সারি; গুরুতর আহত হয়ে চিরতরে পঙ্গু হওয়া মানুষের সংখ্যাও বাড়ে। ফলে এই বিষয়গুলো আমলে নিয়েও সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করা।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, ইসলাম শান্তি এবং সাম্যের ধর্ম, ইসলাম বৈষম্য সমর্থন করে না। পবিত্র রমজান যে চিত্ত শুদ্ধির শিক্ষা দেয়, সেই শিক্ষায় আলোকিত হোক চারপাশ। দূর হোক সব অন্ধকার। সবাই ভুলে যাক হিংসা-বিদ্বেষ। সবার জীবনের ফিরে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি। সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।