বায়ুদূষণ রোধে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে
প্রকাশ | ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
কোনোভাবেই দূষণমুক্ত হচ্ছে না রাজধানী ঢাকা। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবরে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত যেসব তথ্য ওঠে আসে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বায়ুদূষণে বিশ্বের ১০০টি শহরের মধ্যে শনিবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকার অবস্থান অষ্টম। আইকিউএয়ারের বাতাসের মানসূচকে এ সময় ঢাকার স্কোর ১৫৫। বায়ুর এই মান 'অস্বাস্থ্যকর' ধরা হয়। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকেও বায়ুদূষণে বিশ্বের ১২২টি শহরের মধ্যে ঢাকা অষ্টম অবস্থানে ছিল। স্কোর ছিল ১৫০। মান ছিল 'সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর'। বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং সতর্ক করে। আজ বেলা ১১টার দিকে বিশ্বে বায়ুদূষণে প্রথম অবস্থানে ছিল থাইল্যান্ডের শহর চিয়াংমাই। আইকিউএয়ারের সূচকে শহরটির স্কোর ২৪৯। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে যথাক্রমে নেপালের কাঠমান্ডু ও পাকিস্তানের লাহোর। কাঠমান্ডুর স্কোর ১৯৩। লাহোরের ১৮১। আইকিউএয়ারের মানদন্ড অনুযায়ী, স্কোর ৫১ থেকে ১০০ হলে তাকে 'মাঝারি'বা 'গ্রহণযোগ্য' মানের বায়ু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে 'সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর' ধরা হয়। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা 'অস্বাস্থ্যকর' বায়ু। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে তাকে 'খুবই অস্বাস্থ্যকর' বায়ু ধরা হয়। ঢাকার বায়ুদূষণ থেকে বাঁচতে আইকিউএয়ার যে পরামর্শ দিয়েছে, তার মধ্যে আছে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর মানুষ ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক পরতে হবে। তাদের জন্য বাইরে ব্যায়াম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় বছরে বিপুলসংখ্যক মানুষের মৃতু্য হয়। ফলে দেশের সংশ্লিষ্টদের বায়ুদূষণ সংক্রান্ত পরিস্থিতি আমলে নেওয়া যেমন জরুরি, তেমনি দক্ষিণ এশিয়ার সংশ্লিষ্টদেরও কর্তব্য হওয়া দরকার- সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করা। আমরা এটাও বলতে চাই, বায়ুদূষণে প্রাণহানি শুধু নয়, নানা ধরনের অসুখ-বিসুখসহ জনসাধারণের জীবনে বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এটাও জানা যায় যে, সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও কার্যকর সমাধান, যেমন ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ, পাওয়ার স্টেশন প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে। ফলে বায়ুদূষণের ভয়াবহতাকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
স্মর্তব্য যে, ঢাকার বায়ুদূষণ থেকে বাঁচতে আইকিউএয়ার যে পরামর্শ দিয়েছে তার মধ্যে আছে বাইরে বের হলে মানুষকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। বাসার বাইরে গিয়ে ব্যায়াম করা যাবে না। দূষণ থেকে রক্ষা পেতে ঘরের জানালা বন্ধ রাখারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দূষণ রোধে উদ্যোগী হওয়ার পাশাপাশি একইসঙ্গে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এটাও এড়ানো যাবে না, বায়ুদূষণ বেশি হলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন সংবেদনশীল গোষ্ঠীর ব্যক্তিরা। তাদের মধ্যে আছেন বয়স্ক, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও জটিল রোগে ভোগা মানুষ। তাদের প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়া দরকার বলে পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। ফলে বিশেজ্ঞদের পরামর্শ আমলে নিতে হবে। এছাড়া এটাও, ঢাকার বায়ুদূষণের স্থানীয় উৎসগুলোর মধ্যে আছে যানবাহন ও কলকারখানার ধোঁয়া, নির্মাণ কাজের দূষণ, আশপাশের ইটভাটার ধোঁয়া ইত্যাদি এগুলোও এড়ানো যাবে না।
বায়ুদূষণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিবেশগত স্বাস্থ্য হুমকি। ফলে বায়ুর মানের বিষয়টি আমলে নিতে হবে। বায়ুদূষণের কারণে বাচ্চাদের স্বল্প ও দীর্ঘস্থায়ী রোগব্যাধি হয়। এছাড়া ফুসফুসে ক্যানসার, হৃদরোগ, লিভার ও কিডনিতে জটিলতা বাড়তে পারে এমন বিষয়ও জানা গেছে। ফলে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।