প্রবাসী আয়
উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে
প্রকাশ | ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। সঙ্গত কারণেই দেশের জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করা সার্বিক অগ্রগতির প্রশ্নেই জরুরি। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মানুষ সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। এর ফলে, দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে প্রবাসী আয়। কিন্তু যদি মাঝে মাঝে প্রবাসী আয় সংক্রান্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে তা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগজনক- যা আমলে নেওয়া জরুরি।
আশার কথা মাঝে কমে গিয়ে, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ বেড়েছে। সপ্তাহ ব্যবধানে নিট রিজার্ভ বেড়েছে ৫০ কোটি ৯৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে রিজার্ভের এ হিসাব তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী বর্তমানে নিট রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৯৯৬ কোটি ৫৭ লাখ ১০ হাজার ডলার। এক সপ্তাহে আগে তা ছিল এক হাজার ৯৪৫ কোটি ৫৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার। গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ঝোড়ো বাতাস বইছিল। যে হারে রিজার্ভ কমছিল, সে হারে বাড়ছিল না। ফলে ক্রমাগত কমছিল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গত দুই মাস ধরে সে অবস্থার কিছুটা উন্নতি শুরু হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার সঙ্গে সঙ্গে আবার তা পূরণ হয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এক সপ্তাহে প্রায় ৫১ কোটি ডলার বাড়ল। নিট রিজার্ভের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত বিভিন্ন তহবিলসহ মোট রিজার্ভও বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সর্বশেষ মোট রিজার্ভের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫২৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলারে। এক সপ্তাহ আগে ছিল দুই হাজার ৪৮১ কোটি ১৯ লাখ ৯০ হাজার ডলার। এক সপ্তাহে বাড়ল ৪৮ কোটি ৫৬ লাখ ২০ হাজার ডলার।
তবে ডলারের দর বাজারভিত্তিক না হওয়ায় এখনো হুন্ডিকে বেছে নিচ্ছে প্রবাসীরা। আর এই সুযোগ নিচ্ছে দেশি-বিদেশি অর্থ পাচারকারী একটি চক্র। যে কারণে ২০২৩ সালে দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক জনশক্তি রপ্তানি করেও প্রবাসী আয় তেমন বাড়েনি। এজন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডলারের দর বাজারভিত্তিক করার বিকল্প নেই।
এটা সত্য, ডলারের দর বাজারভিত্তিক না হওয়ায় এখনো হুন্ডিকে বেছে নিচ্ছে প্রবাসীরা, আবার এই সুযোগ নিচ্ছে অর্থ পাচারকারী চক্র। এ ব্যাপারে আর বিশেষজ্ঞদের মতো বিবেচনায় নিয়ে ডলারের দর বাজারভিত্তিক করার বিষয়টিও এড়ানো যাবে না। মনে রাখা দরকার, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ফলে দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক জনশক্তি রপ্তানি করেও প্রবাসী আয় বাড়বে না, হুন্ডি খেয়ে ফেলবে প্রবাসী আয়- এটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সঙ্গত কারণেই সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা।
প্রাসীদের রেমিট্যান্স নিয়ে দেশে-বিদেশে একটি চক্র অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত। ওই চক্রটি বিভিন্নভাবে খোলাবাজারের ডলার বেশি দর নিচ্ছে। অন্যদিকে, যখন হুন্ডির এই চক্রটি এতই সংঘবদ্ধ তাদের শনাক্ত করা কঠিন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক- তখন সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করা জরুরি।
লক্ষণীয়, একদিকে হুন্ডি সংক্রান্ত সৃষ্ট পরিস্থিতি উদ্বেগের। অন্যদিকে, প্রণোদনা দিয়ে রেমিট্যান্স আহরণের উদ্যোগ তেমন কাজে আসেনি। কেননা, ২০২৩ সালে দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ জনশক্তি রপ্তানির রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। অথচ ওই বছরে সেভাবে বাড়েনি প্রবাসী আয়। গত দুই বছরে প্রবাসী আয় কমেছে বলেও জানা যাচ্ছে। ফলে সর্বাত্মক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে করণীয় নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। বৈধ পথে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স যেন পাঠায় সেটিকে সামনে রেখেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।